প্রবাদ হয়ে যাওয়া লাইনটাই একটু ঘুরিয়ে নিতে হবে— ‘ডনকো পকড়না না-মুমকিন নেহি, মুশকিল হ্যায়।’
এখানে পকড়না মানে অবশ্য মিডিয়ার পাকড়াও করা। বিজয় মাল্যকে নিয়ে বুদ্ধ আন্তর্জাতিক সার্কিটের গত দু’দিনের উৎকণ্ঠা শনিবার সকালে দূর করে দিলেন কিংফিশার এয়ারলাইন্স এবং সহারা ফোর্স ইন্ডিয়ার প্রাণপুরুষ নিজেই। তাঁকে প্রথম দেখা গেল এগারোটা নাগাদ। মিডিয়া সেন্টারের সিনেমা হল-মার্কা পর্দায় লাইভ কভারেজে। ভারতীয় মোটরস্পোর্টস ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট ভিকি চন্দোকের সঙ্গে কথা বলার সময় ভেসে উঠলেন তিনি। আর সেটা দেখেই দৌড়। নিমেষে ফাঁকা হয়ে গেল ভারতীয় সাংবাদিকদের প্রায় গোটা দলটাই।
বাইরে বেরিয়ে যাঁকে পাওয়া গেল, তিনি গত ক’দিনের নানা জল্পনায় একেবারে রুদ্র মূর্তি! বললেন, ভারতে যদি অপপ্রচার-বিরোধী আইন থাকত, তবে তিনি এখনই মামলা ঠুকে দিতেন। ফর্মুলা ওয়ানের একমাত্র ভারতীয় দলের মালিকের যে ব্যাপারটা সব থেকে মনে বিঁধেছে, সেটা হল তিনি ট্র্যাকের বাইরের নানা কারণে নিজের দেশের রেস থেকেই দূরে সরে থাকতে পারেন, এই প্রচারটা। “নিজের ঘরের গ্রাঁ প্রি-তে হাজির থাকব না তো কোথায় থাকব?” |
আশ্বাসে। শনিবার গ্রেটার নয়ডার বুদ্ধ সার্কিটে। ছবি: পিটিআই |
ট্র্যাকে তখন চলছে ফ্রি প্র্যাক্টিসের শেষ পর্ব। গোঁ গোঁ শব্দটার সঙ্গে মাল্যর মেজাজটা বেশ মিলে যাচ্ছিল। মাল্যকে সার্কিটে দেখে দারুণ খুশি ভারতীয় মোটরস্পোর্টস ফেডারেশনের কর্তারা। মাল্য নিজে এই সংস্থার চেয়ারম্যান। এবং এফএমএসসিআই সাফ বলে দিল, মাল্যর আসা নিয়ে তাঁদের এক মুহূর্তের জন্যও কোনও সংশয় ছিল না। বুদ্ধ সার্কিট কর্তৃপক্ষ অবশ্য এতটা আত্মবিশ্বাসী ছিল না। কিংফিশার কর্মীরা রেসের দিন সার্কিট ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাবেন বলে খবরটাকে তাঁরা হালকা ভাবে নিতেও পারেননি। জে পি স্পোর্টসের এক কর্তা বলছিলেন, “সত্যিই টেনশনে পড়ে গিয়েছিলাম। এত আন্তর্জাতিক মিডিয়ার সামনে বিক্ষোভ হলে সার্কিটের জন্য সেটা মোটেই ভাল প্রচার হত না। যাক বাবা! এখন নিশ্চিন্ত!” মাল্য প্রসঙ্গটাই উড়িয়ে দিয়ে বললেন, “নিরাপত্তার কড়াকড়ি ডিঙিয়ে সার্কিটের ভিতর ঢোকা সম্ভব নয়। তা ছাড়া দিল্লিতে আমি কোথায় থাকি, সেটা সবাই জানে। কারও যদি কোনও কথা বলার থাকে সে আমার বাড়িতেই আসতে পারে।”
কিংফিশার এয়ারলাইন্সের সব সমস্যা মিটে গিয়েছে বলে এ দিন দাবি করেছেন মাল্য। তাঁর কথায়, “সব কর্মী কাজে ফিরে এসেছে। কেউ যদি মনে করেন যা রফাসূত্র তৈরি হয়েছে সেটা আমার সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই হয়েছে, তা হলে তিনি ভুল ভাবছেন।” এর পরেই ধেয়ে এল কিংফিশারের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন। এবং মাল্য সেখানেই ব্রেক কষে দিয়ে বলে দিলেন, “ফোর্স ইন্ডিয়া নিয়ে প্রশ্ন করতে পারেন। ফর্মুলা ওয়ানটা কিংফিশার নয়।” মাল্য সব থেকে বিরক্ত কিংফিশারের সব গোলমালের দায় তাঁর ঘাড়ে চাপানো নিয়ে। বলছিলেন, “মুশকিল হচ্ছে মিডিয়া বা সাধারণ মানুষ পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি কথাটার মানেই বোঝে না।” কিংফিশারের মতো কোম্পানির দায় প্রত্যেক শেয়ার হোল্ডারের, তিনি একা নন। ফর্মুলা ওয়ান প্রধান বার্নি একলেস্টোন-ও এ দিন মাল্যর পাশে দাঁড়িয়ে বলেছেন, “বিজয় যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, বিশ্বের তাবড় ব্যবসায় তেমন হয়ে থাকে।”
মাল্য লন্ডন থেকে সরাসরি ভারতে এসেছেন নিজের বিমানে। গত ক’দিন যে জল্পনাটা ছিল, তা হল ভারতের মাটিতে নামলেই তাঁর কাছ থেকে বকেয়া আদায় করতে বিমানটি বাজেয়াপ্ত করতে পারে সরকার। তিনি নিজের বিমানেই এসেছেন কি না, জানতে চাওয়া হলে মাল্য বললেন, “অবশ্যই! আমার বিমান আটক হতে পারে বলে খবর হয়েছে। দুর্দান্ত! আমার কোথাও কোনও ধার নেই। বিমান নিয়ে ঝুঁকির প্রশ্ন উঠবে কেন?” নিজের টিম বিল্ডিংয়ে ঢুকে গেলেন ফোর্স ইন্ডিয়ার টিম প্রধান। রবিবারটা তিনি শুধুই ফর্মুলা ওয়ানে ডুবে থাকতে চান। |