বুদ্ধ সার্কিটে ভেটেলের দাদাগিরি
থামাতে চান আলোনসো
হৃতিক রোশন কাল স্টার্ট লাইনের সামনে সাদা-কালো চৌখুপি পতাকাটা নাড়িয়ে রেসের আগল খুলে দেওয়ার আগেই ঘটবে ঘটনাটা।
রবিবারের প্রধান কুশীলবেরা ভারতীয় তেরঙ্গার রঙ্গে সজ্জিত ফুলের ট্যাবলোয় ঘুরবেন গোটা সার্কিট। রেসের শেষে যাঁদের মধ্যে এক জনই নায়কোচিত হাসি সহযোগে ট্রফিটা হাতে তুলবেন। তবে ফর্মুলা ওয়ানের পোশাকি ভাষায় এই ‘ড্রাইভার্স প্যারেড’-এর থেকেও চকচকে চমক থাকছে স্টার্টিং গ্রিডে। স্রেফ ভারতীয় রেসের জন্য পোডিয়ামে আয়োজক দেশের জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার সনাতন প্রথা ভাঙতে রাজি হয়েছে ফর্মুলা ওয়ান কর্তৃপক্ষ। এবং কাল স্টার্টিং গ্রিডেই গ্রান্ড স্ট্যান্ডের সামনে শানের সঙ্গে জনগণমন-য় গলা মেলাবেন অজয় দেবগণ এবং শত্রঘ্ন তনয়া সোনাক্ষী সিংহ।
গতবার ফর্মুলা ওয়ান এবং ‘রা ওয়ান’-এর মিলনটা বক্স অফিসে ঠিক রাজযোটক হয়নি। তবে বলিউডি কুসংস্কারে সেটা ঢুকে পড়েছে বলে মনে হচ্ছে না। ‘রা ওয়ান’-এর দশা দেখার পরেও নিজের আনেওয়ালা ছবি নিয়ে ফর্মুলা ওয়ানে প্রচারে নামতে একেবারেই ডরাচ্ছেন না ডাকসাইটে বলে নামডাক থাকা দেবগণ।
একই ভাবে বুদ্ধ সার্কিটে সেবাস্তিয়ান ভেটেল আর রেড বুলের নিরবিচ্ছিন্ন দাদাগিরিকে ভয় পাচ্ছেন না ফের্নান্দো আলোনসো। যিনি এ দিন যোগ্যতা পর্বে পাঁচে থাকলেও টিম বিল্ডিংয়ে বসে দৃপ্ত আত্মবিশ্বাসে বলে দিলেন, “আমি এখনও মনে করি কাল সেবাস্তিয়ানের থেকে আমি বেশি পয়েন্ট পাব।”
পোল পজিশন পেয়ে ভেটেলের উচ্ছ্বাস। শনিবার বুদ্ধ সার্কিটে। ছবি: রয়টার্স
ফেরারি দল আর স্প্যানিশ তারকার বাইরে এই বিশ্বাসের আর কোনও অনুগামী রয়েছে কি না, সেটা গবেষণার বিষয়। একটু আগে বুদ্ধ সার্কিটে ভেটেলের দাদাগিরি শব্দটায় যদি কারও আপত্তি থাকে তবে বলে রাখা ভাল, শুক্রবার ফ্রি প্র্যাক্টিস চালু হওয়ার পর থেকে চার দফায় ট্র্যাকে নেমেছেন চালকেরা। তিনটি ফ্রি প্র্যাক্টিস এবং আজকের যোগ্যতা পর্ব। এবং প্রতিবারই বাকিদের পিছনে ফেলে একে থেকেছেন ভেটেল। আজ পোল নিশ্চিত করলেন যে ভাবে, দেখে মনে হচ্ছে যেন গাড়ি নয়, জাদুকরি উড়ান খাটোলায় সওয়ার জার্মান তরুণ! শত চেষ্টাতেও যাঁকে ছুঁতে পারছে না বাকিরা!
যোগ্যতা পর্বের শেষে ফর্মুলা ওয়ানের সরকারি সাংবাদিক বৈঠকে এসে ভেটেল অবশ্য স্বভাবসিদ্ধ বিনয়ী। বললেন, “রেস শুরুর সময় ফের্নান্দো আমার সামনে থাকার বদলে পিছনে থাকাটা অনেক ভাল। কাল লম্বা রেস। তবে পোল পোজিশন পেয়ে আমি খুশি।” বুদ্ধ সার্কিটে পোল পোজিশনটা নিজের জায়গির করে ফেলেছেন তিনি। পরপর দু’বছর পোল পেলেন। এটাকে কি এখন নিজের দেশ বলে মনে হয়? প্রশ্নটায় অবশ্য হেসে ফেললেন। বললেন, “না না, আমার দেশ এখান থেকে অনেক দূরে। তবে গত বছর জেতাটা স্পেশাল ছিল। আর টার্গেট হচ্ছে এ বারও সেটাই করে দেখানো।” থেমে যোগ করলেন, “এই সার্কিটে ওভারটেক করার অনেক সুযোগ আসবে। তবে আশা করি আমাকে ওভারটেক কেউ করবে না।”
তাঁর পিছনে স্টার্টিং গ্রিডে যাঁরা আছেন, তাঁরা ঠিক উল্টো প্রার্থনায় ব্যস্ত। দুইয়ে থাকা ভেটেলের টিমমেট মার্ক ওয়েবার, তিনে লুইস হ্যামিল্টন, চারে জেনসন বাটন, পাঁচে আলোনসো এবং ছয়ে ফিলিপে মাসা। গ্রিডে দু’টো করে গাড়ি যেহেতু পাশাপাশি দাঁড়ায় তাই কাল ছবিটা দেখে মনে হবে প্রথম জোড়া রেড বুলের, দ্বিতীয় জোড়া ম্যাকলারেনের, তৃতীয় জোড়া ফেরারির। যা নিয়ে প্রাক্তন ফর্মুলা ওয়ান তারকা ডেভিড কুল্টহার্ডের টিপ্পনী, “যেন নোয়ার তরি। সব জোড়ায় জোড়ায়!”
রেড বুল বনাম ফেরারি যুদ্ধে এ দিন ধাঁ করে ঢুকে পড়েছে ম্যাকলারেন! ভারতীয় রেসে এ বার ব্রিটিশ দলের সহ-স্পনসর সচিন তেন্ডুলকরের নিখাদ ভারতীয় এনার্জি ড্রিঙ্ক। ‘সিক্রেট অব সচিন’স এনার্জি’র দৌলতেই কি না কে জানে, হ্যামিল্টন আর বাটন যোগ্যতা পর্বের পরে এ দিন বাড়তি চনমনে। হ্যামিল্টন বললেন “গ্রেট পোজিশন টু স্টার্ট ফ্রম।”
রেস যে কাল জমছে, সে ব্যাপারে দলগুলো একমত। তবে আয়োজকদের কপালের ভাঁজ সরে গিয়েছে টিকিট বিক্রির কাঁচা হিসেবটা হাতে চলে আসায়। সচিন-শূন্য ময়দানেও পঁয়ষট্টি থেকে পঁচাত্তর হাজার লোক হবে, জানালেন জে পি স্পোর্টসের ভাইস প্রেসিডেন্ট আস্কারি জায়েদি। আজ যোগ্যতা পর্ব দেখতেই হাজির ছিলেন হাজার তিরিশ। আথির্র্ক মন্দার বাজারে যা জে পি গোষ্ঠীর প্রতাশাকে ছাপিয়ে যাচ্ছে। কাল রেস শুরুর আগে গ্রিডেই ফর্মুলা ওয়ান প্রধান বার্নি একলেস্টোনের জন্মদিন পালনের একটা পরিকল্পনা রয়েছে জে পি কর্তা মনোজ গৌরের। আসর আগের বারের মতো জমতে পারে কি না জানতে চাওয়া হলে একলেস্টোন সকালে বলছিলেন, “দেখুন, যে কোনও নতুন সার্কিটেই দ্বিতীয় বছরটা সব জায়গায় একটু ফাঁকা যায়। আগের বার একটা নতুনত্বের টান ছিল। সেটা এ বার থাকবে না।” তবে পঁচাত্তর হাজার স্ট্যান্ড ভরালে একলেস্টোনের জন্য সেটাই সম্ভবত হবে সেরা জন্মদিনের উপহার। যিনি গত তিন দিন বারবার বলেছেন, ভারতীয় জনতার উৎসাহ ফর্মুলা ওয়ানের স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি।
তবে জমজমাট একটা রেস পরের বছরের আবেদনে যে বাড়িয়ে দেবে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই।
দুপুরে ফেরারির টিম বিল্ডিংয়ে লাঞ্চ করার সময় দেখলাম আলোনসো খেতে খেতেও এক হাতে অবিরাম টিপে চলেছেন মোবাইলের পর্দা। খবর নিয়ে জানা গেল, তিনি এবং মোবাইল ট্রাকের বাইরে অভিন্ন হৃদয়। আরও একটা খবর মিলল। আলোনসো নাকি তাসের নানা ট্রিক জানেন! সর্বদা সেই সব দেখিয়ে মাতিয়ে রাখেন সবাইকে। এ দিন যোগাতা পর্বের শেষে টিম বিল্ডিংয়ের আড্ডায় তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হল, কাল পাঁচ থেকে রেস শুরু করতে হবে বলে চ্যাম্পিনশিপটা কি হাতের বাইরে চলে গেল? উত্তর এল, “একেবারেই না। বরং চ্যালেঞ্জটা উপভোগ করছি। আমি লড়ব। আর লড়ে জিতব!” ভেটেলও বললেন, “ফেরারি স্টার্টে আমাদের চমকে দিতে পারে কিন্তু!”
তবে চমক দেওয়ার জন্য কাল ট্র্যাকেও নিজের লুকোনো কোনও তাস বের করতেই হবে আলোনসোকে।

বুদ্ধ-লিপি
গাড়ি যেখানে ওল্টাতে পারে
পাঁচ এবং ছ’নম্বর টার্ন। খুব অল্প ব্যবধানে দুটো বাঁক এবং দুটোতেই অ্যান্টি ক্লকওয়াইজ টার্ন নিতে হবে। ফলে ড্রাইভারদের কাছে বিপজ্জনক চ্যালেঞ্জ।
চিন্তায় রাখবে চাকা
ভারতীয় আবহাওয়া এবং প্রায় নতুন ট্র্যাক হওয়ার জন্য গাড়ির চাকা গরম হতে সময় লাগছে। চাকা গরম না হওয়ায় প্রথম দিককার ল্যাপে প্রত্যাশামতো স্পিড উঠছে না।
চমক হয়তো রাইকোনেন
পিছন থেকে এসে পোডিয়ামে শেষ করার নজির রয়েছে। আক্রমণাত্মক ড্রাইভিং এবং ওভারটেক করার ক্ষমতা কাজে লাগতে পারে।
ওভারটেকের সুযোগ যেখানে
তিন থেকে চার নম্বর টার্নের মাঝে ১.২ কিলোমিটার সোজা স্ট্রেচ। ড্রাইভাররা ঘণ্টায় প্রায় সাড়ে তিনশো কিলোমিটার গতি তুলতে পারেন এখানে। বাকি রেসে গড় স্পিড যেখানে ২৪০-২৪৫ কিলোমিটার উঠতে পারে।
শুরু: দুপুর ৩-০০ | ল্যাপ: ৬০ | মোট দূরত্ব: ৩০৮.৪ কিলোমিটার।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.