আমার আরও একটা সফর-কাহিনি বলি শুনুন। সেঞ্চুরিয়নের সুপার স্পোর্ট পার্ক চেনেন নিশ্চয়ই? শুক্রবারের সেমিফাইনালটা যেখানে হল। জানেন, ওই মাঠের স্কোরার টিমের সব সদস্য মহিলা। মনে হয় সব মিলিয়ে পাঁচ-ছ’জন রয়েছেন। তাঁরা সবাই ক্রিকেটকে প্রচণ্ড ভালবাসেন। পুরুষদের খেলার এ রকম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন কয়েকজন মহিলাদারুণ ব্যাপার, তাই না?
স্কুল আর ক্লাবের হয়ে খেলার সময় অনেক ম্যাচে আমি স্কোরারের দায়িত্বে ছিলাম। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, কাজটা মোটেও সহজ নয়। প্রচণ্ড একাগ্রতা আর চটপটে ভাব দরকার। মেয়েরা কি এই কাজে ছেলেদের চেয়ে বেশি ভাল? নাকি সেঞ্চুরিয়নের মহিলা-স্কোরাররা খুব গুছিয়ে কাজ করতে পারেন বলেই ম্যাচের স্কোর রাখার ব্যাপারে তাঁরা এত ভাল?
যাক গে। বছরদুয়েক আগে জাতীয় দলের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়ে এই মহিলা-স্কোরারদের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। ওঁরা আমাকে স্কোরিং-বক্সে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আমাদের ড্রেসিংরুমের পাশেই বক্সটা। ওঁরা নিজেদের কাজটা খুব ভাল তো জানেনই। প্রত্যেকেই খুব চনমনে।
স্কোরিং বক্সের দেওয়াল জুড়ে নিজেদের প্রিয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে স্কোরারদের ছবি। হাশিম আমলা থেকে জাক কালিস, ক্রিস গেইল থেকে শাহিদ আফ্রিদি প্রত্যেক দেশেরই কোনও না কোনও প্রতিনিধি আছে ওই চার দেওয়ালে। খুব বেশি খেয়াল না করলেও বুঝতে পারবেন, স্কোরারদের সবচেয়ে প্রিয় ক্রিকেটার ইংরেজ অফস্পিনার গ্রেম সোয়ান। সেঞ্চুরিয়নের স্কোরিং বক্সে ওর যত ছবি আছে, সোয়ানের নিজের কাছেই বোধহয় ওর অতগুলো ছবি নেই!
হয়তো এই জন্যই শুক্রবারের সেমিফাইনালে টাইটান্স ভাল খেলল। এখানে জিতলে দর্শক তো বটেই, মহিলা স্কোরারদের সমর্থনও ওরা পাবে। জাক রুডল্ফ দক্ষিণ আফ্রিকায় বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু শুক্রবার জিতলে দর্শকদের মনে আরও পাকাপাকি ভাবে জায়গা করে নিতে পারত। ও নিজে মাত্র এক রানে আউট হয়ে গেলেও ওর দল মোটামুটি ভদ্রস্থ রান করেছিল। ডেভিড ওয়াইস বেশ ভাল খেলে স্কোরটা ১৬৩-তে নিয়ে গেল। ২৮ বলে করা ওর ৬১ অসাধারণ একটা ইনিংস। তবে ওর দলের বোলাররা সেই ইনিংসের মর্যাদা দিতে পারল না।
সিডনি সিক্সার্স সত্যিকারের অস্ট্রেলীয় টিমের মতো খেলেছে। হোঁচট খেতে খেতেও ওরা লড়াই ছেড়ে দেয়নি। চার ওভারে ৫১ রান দেওয়ার পরে হয়তো ব্যাট হাতে আরও কিছু রান করা দরকার ছিল প্যাট কামিন্সের। শেষমেশ যে ও দশ বলে ১৪ করে টিমকে জেতাল, সেটা এক দিক থেকে প্রতীকী। কামিন্স বরাবরই দক্ষিণ আফ্রিকান সমর্থকদের মন ভেঙে দিয়ে আসছে। এই তো বছরখানেক আগে জো’বার্গে একটা টেস্ট ম্যাচে জেতার জন্য ৩১০ তাড়া করছিল অস্ট্রেলিয়া। সেই ম্যাচেও খুব লড়েছিল কামিন্স। জানি না আমার স্কোরার বন্ধুরা কামিন্সের ছবি দেওয়ালে লাগাবেন কি না!
জো’বার্গের ফাইনালে আমার মনে হয় সিডনি সিক্সার্সই বাড়তি সুবিধে পাবে। শেষ বলে জিতে ওদের আত্মবিশ্বাস নিশ্চয়ই দারুণ জায়গায় আছে। এই রকম জয়ই কিন্তু দলের ক্রিকেটারদের আরও কাছাকাছি নিয়ে আসে। আর আমি আগেও বলেছি, সিডনি দলে অনেক বেশি ভারসাম্য রয়েছে। অস্ট্রেলীয় লড়াকু মনোভাবের কথা ছেড়েই দিলাম। আরও এক বার আমি গোলাপি জার্সিকে সমর্থন করব। আমার পুরনো কেকেআর সতীর্থ ব্র্যাড হাডিনের জন্য গলা ফাটাব। জানি না দক্ষিণ আফ্রিকান স্কোরার-বন্ধুরা আমাকে নিয়ে কী ভাববে! |