|
|
|
|
রোগ-সন্ত্রাস থেকে সতর্ক থাকার পরামর্শ |
শীতের এই আগাম হানাদারির পিছনেও পাকিস্তান |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
রাতে পাখা লাগছে না। সাতসকালে বেরতে হলে জড়িয়ে নিতে হচ্ছে পাতলা চাদর। কান খোলা থাকলে আর নিস্তার নেই। অবধারিত কাশি। গলাব্যথা। জ্বর-জ্বর ভাব।
অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে যে আবহাওয়াটা থাকা উচিত, তা যে নেই সেটা শরীরের প্রতিক্রিয়াতেই স্পষ্ট। থার্মোমিটারের পারদও জানাচ্ছে আবহাওয়াটা অস্বাভাবিক। শনিবার কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমেছে ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এ সময়ের স্বাভাবিক সর্বনিম্ন তাপমাত্রার থেকে যা ৩ ডিগ্রি কম।
শীতের এই আগাম হানাদারি, নিউমোনিয়া-সহ নানা রোগজীবাণুর সন্ত্রাসের পিছনে পাকিস্তানেরই হাত দেখছে দিল্লি। কী রকম? আবহবিদরা বলছেন, পাক ভূখণ্ড থেকে অন্যান্য বারের চেয়ে বেশি তীব্র ঝঞ্ঝা ঢুকেছে কাশ্মীরে। তারই প্রভাব পড়েছে উত্তর ভারতে। এমনকী, এই সুদূর বাংলাতেও। |
|
শীতের শুরুতে যে রকম হয়ে থাকে তাপমাত্রা এখন তেমনটাই। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, তবে কি বর্ষা বিদায় নিতেই সরাসরি এসে পড়ল শীত? শরৎ উধাও হয়েছে। এ বার কি নিখোঁজ হল হেমন্তও? বিশ্ব জুড়ে আবহাওয়ার যে রকম দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে, তাতে এমনটা ঘটে থাকলে সেটাকেও অস্বাভাবিক বলে মনে করতে পারছেন না আবহবিদদের অনেকে। যদিও এই জল্পনা নাকচ করে দিল্লির মৌসম ভবন বলছে, এটা শীত নয়। শীতের পদধ্বনিও নয়। উত্তর ভারতে হঠাৎ করে জোরালো উত্তুরে হাওয়া বইতে শুরু করায় এবং সেখানে তাপমাত্রা দ্রুত কমছে। আর তারই জের এসে পড়েছে পূর্ব ভারতেও। এই শীত-শীত ভাবটা সাময়িক বলেই মনে করছেন তাঁরা।
এক আবহবিদের কথায়, গত কয়েক বছর ধরেই অক্টোবরের শেষ থেকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত হঠাৎ করে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কমে যাচ্ছে গোটা মধ্য ও পূর্ব ভারতে। নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ফের বাড়ছে তাপমাত্রা। গত বছরও নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তাপমাত্রা নেমে গিয়েছিল ২১ ডিগ্রিতে। সেই অবস্থাটা এ বার দেখা যাচ্ছে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহেই। মনে হচ্ছে শীত বুঝি এসে পড়ল। আসল শীত আসবে সেই ডিসেম্বরের মাঝামাঝি। গত বারেও এমনটা হয়েছিল।
হঠাৎ করে উত্তর ভারতে তাপমাত্রা এতটা নেমে গেল কেন? আবহবিদরা জানাচ্ছেন, অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহের পর থেকেই পাকিস্তান থেকে পশ্চিমী ঝঞ্ঝা ঢুকে পড়ে কাশ্মীরে। সেই পশ্চিমী ঝঞ্ঝা কতটা তীব্র, তার উপরে নির্ভর করে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কতটা নামবে। সাধারণত বছরের এই সময়টায় পাকিস্তান থেকে আসা ঝঞ্ঝা তেমন তীব্র হয় না। তাই কাশ্মীর বা তার সঙ্গে উত্তর ভারতের তাপমাত্রাও তেমন কমে না। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরেই এ সময়ে পশ্চিমী ঝঞ্ঝার তীব্রতা হঠাৎ করে বেড়ে যাচ্ছে। তাই গত বছরের মতো এ বারেও অক্টোবরের শেষ দিকে পারদ দ্রুত নেমে যাচ্ছে।
অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত নিম্নচাপ ও নিম্নচাপ অক্ষরেখার প্রভাবে বৃষ্টি হচ্ছিল। ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত বৃষ্টি ভুগিয়েছে। তার পরে হঠাৎ করেই বিদায় নিয়েছে নিম্নচাপ অক্ষরেখা। আর তার জেরেও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এক ধাক্কায় নেমে গিয়েছে। কতটা? আলিপুর আবহাওয়া দফতরের রেকর্ড বলছে, ১৪ অক্টোবর কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৪.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৯ অক্টোবর তা কমে হয় ২১.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়ার এই হঠাৎ পরিবর্তনে শরীর কিন্তু বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে। ঘরে-ঘরে সর্দি, কাশি, জ্বর। আবহাওয়ার এই পরিবর্তনে হঠাৎ করে বিভিন্ন জীবাণুও সক্রিয় হয়ে উঠছে বলে জানাচ্ছেন পরজীবী বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে শহরে নিউমোনিয়ার জীবাণু সক্রিয় হয়েছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। বিশেষ করে যাঁরা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হচ্ছেন তাঁদের অনেককেই নিউমোনিয়ার জীবাণু আক্রমণ করছে। কড়া শীত পড়ার আগে তাপমাত্রা এই ভাবে কমবে বাড়বে। তাই এই সময়টায় শিশু এবং প্রবীণদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ায় যাঁরা একবার আক্রান্ত হয়েছেন তাঁদেরও বিশেষ সতর্ক থাকতে বলছেন তাঁরা। পাকাপাকি ভাবে শীত এলে আবহাওয়া কিছুটা স্থিতিশীল হবে। রোগের প্রকোপও কমে আসবে তখন। |
|
|
|
|
|