|
|
|
|
নেতাদের দ্বন্দ্বই খড়কুটো ডুবন্ত গডকড়ীর |
দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় • নয়াদিল্লি |
দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর নিতিন গডকড়ীকে সরানোর প্রবল চাপ রয়েছে। কিন্তু বিজেপির নতুন সভাপতি কে হবেন, তা নিয়ে কিছুতেই ঐকমত্য হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিকে ‘খড়কুটো’ হিসাবে ধরেই গদি বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন গডকড়ী।
গডকড়ী ভালই জানেন, দলে নেতাদের মধ্যে যে প্রবল সঙ্ঘাত, তাতে কোনও এক জনকে সভাপতি বাছা কঠিন। এ দিকে সামনে গুজরাত আর হিমাচলে বিধানসভা নির্বাচন। নরেন্দ্র মোদীও চাইছেন না, গুজরাতে নির্বাচন পর্ব মেটার আগে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে অস্থিরতা তৈরি হোক। কারণ দল ‘মুণ্ডহীন’ হয়ে পড়লে নির্বাচনে বিরূপ প্রভাব পড়বেই। এই অবস্থায় এই দুই রাজ্যে জয়লাভ করাটাও গডকড়ীর অক্সিজেন হতে পারে। গুজরাতে জয়ের কৃতিত্ব নরেন্দ্র মোদী নিজেই নেবেন। কিন্তু হিমাচলে বিজেপি জিতলে গডকড়ী তাঁর ‘সাফল্যের ধ্বজা’ তুলে ধরতে পারবেন। তখন তাঁকে সভাপতি পদ থেকে সরতে বলাটাও কঠিন হয়ে পড়বে। সে কারণেই যাবতীয় কলঙ্ক মাথায় নিয়েও হিমাচল প্রচারে নেমে পড়েছেন গডকড়ী। |
|
নির্বাচনী প্রচারে নিতিন গডকড়ী। শনিবার কিন্নরে। ছবি: পিটিআই |
এক সময়ে গডকড়ীর মতো অপরিচিত মুখকে সভাপতি করে বিজেপিকে নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে চেয়েছিল আরএসএস। কিন্তু সাম্প্রতিক বিতর্কে বিচলিত সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবত গডকড়ীর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ থেকে দূরত্ব বজায় রাখছেন। এ বারও সঙ্ঘ নেতৃত্ব সতর্ক থাকছেন, যাতে তাঁদের নিয়ন্ত্রণ কমে যায় এমন কারওকে সেই পদে বসানো না হয়। অরুণ জেটলিকে সভাপতি করার একটি প্রস্তাব রয়েছে। কিন্তু লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষমা স্বরাজরা তাতে বাদ সাধছেন। জেটলি সভাপতি হওয়ার থেকে বরং গডকড়ীর থেকে যাওয়াও তাঁদের স্বস্তির হবে। সে কারণে গডকড়ীর ‘বিপদের দিনে’ আগ বাড়িয়ে বিবৃতি দিয়ে তাঁর সমর্থনে এগিয়ে এসেছিলেন আডবাণী-সুষমা।
দলে আধুনিকতার হাওয়া আনতে অপেক্ষাকৃত তরুণ মুখ গডকড়ীকে বেছে নিয়েছিলেন মোহন ভাগবত। তার পরে লোকসভা নির্বাচনের আগে আর কোনও প্রবীণ নেতাকে তিনি সেই পদে বসাতে চান না। আবার দিল্লির বাইরের অন্য কোনও রাজ্যের নেতাকে সভাপতি করে আনার আগেও সাত-পাঁচ ভাবতে হচ্ছে সঙ্ঘকে। কারণ, গডকড়ীকে তুলে আনার পরীক্ষা যে সফল হয়নি, তা বুঝতে পারছেন সঙ্ঘ নেতৃত্ব। আরএসএস সুষমাকে সভাপতি করতে চাইলে আডবাণী আপত্তি করবেন না। কিন্তু সুষমাই সেই পদ নিতে আগ্রহী হবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। সে ক্ষেত্রে তাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে যাবে। এই অবস্থায় গডকড়ী এখন দ্বিতীয় বারের মেয়াদ সুনিশ্চিত করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। বিজেপির এক শীর্ষ নেতার কথায়, কাল রাতে গডকড়ীর বাড়িতে দলের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে বেশ কিছু নেতা সভাপতির বিরুদ্ধে সরব হবেন, এমন আশঙ্কা ছিল। সে কারণে তিনি বৈঠকে অনুগতের সংখ্যা বাড়িয়ে দেন। দলের সাধারণ সম্পাদক থেকে মুখপাত্রদেরও ডেকে নেওয়া হয়। আপাতত গুজরাত ও হিমাচলে ভোটের আগে ফের বদল হওয়ার সম্ভাবনা কম। কিন্তু দ্বিতীয় বার তাঁকে সভাপতি করা হবে কি না, তা এখন আর নিশ্চিত বলা যায় না। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত কী পরিস্থিতি দাঁড়ায়, তার উপরে অনেক কিছু নির্ভরশীল। সরকারি তদন্তের মোড় কোন দিকে গড়ায়, ডিসেম্বরের মধ্যে তা স্পষ্ট হয়ে যাবে। ফলে নিজেকে টিকিয়ে রাখার লড়াইটা এর মধ্যেই শেষ করতে হবে গডকড়ীকে। |
|
|
|
|
|