|
|
|
|
মমতার উপর চাপ বাড়াতে দীপাকে মন্ত্রী করছে কংগ্রেস |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
নরসিংহ রাওয়ের জমানায় পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম বিরোধিতাকে তুঙ্গে নিয়ে যেতে মন্ত্রী করা হয়েছিল তরুণ মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এ বার সেই মমতার জমানায় তাঁরই ঘোরতর বিরোধী বলে পরিচিত দীপা দাশমুন্সিকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় ঠাঁই দিতে চলেছেন সনিয়া গাঁধী এবং মনমোহন সিংহ। অর্থাৎ বার্তা স্পষ্ট। তা হল, মমতার কাছে আর নতজানু হয়ে রাজনীতি নয়। বরং দীপাকে মন্ত্রী করে তৃণমূল নেত্রীকে চাপে রাখারই চেষ্টা করবে হাইকম্যান্ড।
রাজ্য কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের কাছে অন্তত এক জন পূর্ণমন্ত্রী চেয়েছিল। তাদের বক্তব্য ছিল, এর আগে প্রণব মুখোপাধ্যায় পূর্ণমন্ত্রী ছিলেন (তৃণমূলেরও একটি পূর্ণ মন্ত্রক ছিল)। প্রণববাবু রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরে (এবং তৃণমূল সরকার ছাড়ার পরে) পশ্চিমবঙ্গের এই মুহূর্তে কোনও পূর্ণমন্ত্রী নেই। এখন প্রশ্ন, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রী প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির স্ত্রী দীপাকে কি পূর্ণমন্ত্রী করা হবে? নাকি দেওয়া হবে স্বাধীন দায়িত্ব? অথবা নিছকই প্রতিমন্ত্রী করা হবে? প্রশ্ন আরও আছে। কোন মন্ত্রকে পাঠানো হবে তাঁকে, প্রিয়র ফেলে যাওয়া তথ্য-সম্প্রচার, নাকি সংস্কৃতি বা অন্য মন্ত্রকে নিয়ে যাওয়া হবে?
প্রধানমন্ত্রী নিজে ফোন করেছিলেন দীপাকে। তবে তাঁকে কী দায়িত্ব দেওয়া হবে, তা গভীর রাত পর্যন্ত জানানো হয়নি। দীপা অবশ্য পূর্ণমন্ত্রী না প্রতিমন্ত্রী, এই বিষয়ে কোনও উৎসাহ দেখাচ্ছেন না। বরং জানালেন, কাল খাদির শাড়ি পরে শপথ নিতে যাবেন।
প্রধানমন্ত্রীর ফোন পেয়েছেন আবু হাসেম খান চৌধুরীও (ডালু)। তাঁর দাদা প্রয়াত বরকত গনিখান চৌধুরীর আমলে রাজ্যে রেলের কাজ গতি পায়। তৃণমূল সম্প্রতি রেল মন্ত্রক ছেড়েছে। এ রাজ্যের বহু প্রকল্প এখনও পুরোদমে চলছে। রাজ্য কংগ্রেসের তাই দাবি, পশ্চিমবঙ্গ থেকেই কাউকে যেন রেলের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই মুহূর্তে দিল্লিতে রয়েছেন প্রদেশ সভাপতি তথা রাজ্যসভার সদস্য প্রদীপ ভট্টাচার্য এবং বহরমপুরের সাংসদ ও মমতা-বিরোধী হিসেবে পরিচিত অধীর চৌধুরীও। অধীরবাবু জানিয়েছেন, আজ এআইসিসি-র ফোন পেয়ে তিনি রাজধানী শহরে এসেছেন। রাতে তিনি বলেন, “হাইকম্যান্ড আমাকে কাল সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেছে। দেখি কী হয়।” এখনও পর্যন্ত হাইকম্যান্ডের অভিমত, রাজ্যসভার কোনও সদস্যকে এই মুহূর্তে মন্ত্রী করার ব্যাপারে উৎসাহী নন প্রধানমন্ত্রী। তাই প্রদীপ ভট্টাচার্যের ভাগ্যে শিকে ছিড়বে কি না, সন্দেহ। যদিও প্রদীপ ও অধীরকে মন্ত্রী করার জন্য গভীর রাত পর্যন্ত তদ্বির ও পাল্টা তদ্বির চলছে বলে দলীয় সূত্রে খবর।
রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, হাইকম্যান্ডের মোক্ষম চালটা হল দীপাকে মন্ত্রী করার সিদ্ধান্ত। তিনি পূর্ণ না প্রতিমন্ত্রী, কী হবেন, সেটা এখানে অপ্রাসঙ্গিক। আসল কথা, তাঁকে মন্ত্রী করে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে নিজেদের পরিসর বাড়াতে চাইছে কংগ্রেস। কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন, সেটা করতে গেলে মমতার সঙ্গে সংঘাতের পথে যেতেই হবে। না হলে সিপিএমের লেজুড় হয়ে সিপিআই, ফব, আরএসপি-র যে দশা, তাঁদেরও তা-ই হবে। কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা বলেন, এই সমীকরণকে মাথায় রেখেই দীপাকে মন্ত্রী করা হচ্ছে। তাঁকে এ বার জেলায় জেলায় চরকির মতো ঘোরানো হবে। এবং মমতার বিরুদ্ধে প্রধান মুখ হিসেবে তুলে ধরা হবে।
প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি মমতার জন্য দরজা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিল কংগ্রেস? কংগ্রেসের শীর্ষ এক নেতার মন্তব্য, “আমরা চাই, মমতা ইউপিএ-তে ফিরে আসুন। কিন্তু সেটা তাঁর শর্তে নয়, কংগ্রেস শর্তে।” তাঁর বক্তব্য, সে জন্য মমতাকে রাজ্য স্তরে চাপে রাখা জরুরি। |
|
|
|
|
|