|
|
|
|
সরকারের মুখ বদল আজ |
দলে দায়িত্ব বাড়তে পারে রাহুলের |
দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় • নয়াদিল্লি |
বিপদের সময় অনেক বারই মন্ত্রিসভায় রদবদল করেছিলেন ইন্দিরা গাঁধী। এমনকী কামরাজ প্ল্যান করে গোটা মন্ত্রিসভাকে সংগঠনের কাজে পাঠিয়ে সংগঠন থেকে বেছে বেছে মুখ এনেছেন মন্ত্রিসভায়। লোকসভা নির্বাচনের আগে চলতি রাজনৈতিক মন্দা কাটাতে মনমোহন সিংহ ও সনিয়া গাঁধী যেটা করতে চলেছেন সেটা যেন মিনি-কামরাজ। মন্ত্রিসভায় রদবদলের মুখে গত কাল বিদেশ মন্ত্রক থেকে ইস্তফা দিয়েছেন এস এম কৃষ্ণ। এর পরে আজ ইস্তফা দিয়েছেন আরও ছ’জন। অম্বিকা সোনি, মুকুল ওয়াসনিক, সুবোধকান্ত সহায়, মহাদেও সিংহ খান্ডেলা, ভিনসেন্ট পালা ও আগাথা সাংমা। সাত জনের ইস্তফাই গ্রহণ করে নিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। অম্বিকা, মুকুল, সুবোধকান্তরা মুখে অন্তত বলছেন, তাঁরা সংগঠনের কাজ করতে আগ্রহী।
আগামিকালের রদবদলের মুখে মন্ত্রীদের এমন ঢালাও ইস্তফার একটিই কারণ। লোকসভা নির্বাচন ২০১৪-য়। বিরোধীরা এখনও নিজেদের কোন্দল আর দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে ছন্নছাড়া হলেও এ মোটেই সুখের সময় নয় মনমোহন সরকারেরও। দুর্নীতির ধারাবাহিক অভিযোগ, প্রশাসনিক দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন, নীতির পঙ্গুত্বের কটাক্ষ— এই সব কিছু নিয়ে জেরবার সরকার ও দলকে একটা নতুন চেহারা দিতে চান মনমোহন-সনিয়া। সংস্কারে কঠোর পদক্ষেপ করে মনমোহন সরকার এক দিকে যেমন অর্থনীতির দিশা ঘোরাতে চেয়েছে, এ বারে মন্ত্রিসভার রদবদলকেও হাতিয়ার করে সরকারের ক্ষত মেরামতের চেষ্টা করছে তারা। |
পদত্যাগী যাঁরা |
অম্বিকা সোনি |
সুবোধকান্ত সহায় |
মুকুল ওয়াসনিক |
আগাথা সাংমা |
মহাদেও খান্ডেলা |
ভিনসেন্ট পালা |
|
গত ক’বছরে শরিকদের সমর্থন প্রত্যাহার থেকে মন্ত্রীদের ইস্তফা মিলিয়ে প্রায় কুড়িটির মতো পদ এমনিতেই খালি রয়েছে মন্ত্রিসভায়। কিন্তু এ শুধুই শূন্য পদ পূরণ নয়। মন্ত্রিসভায় এ বার অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে রাহুলের টিমকে। সংগঠনে বড় দায়িত্ব দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে রাহুলকে। কংগ্রেসের মুখপাত্র জনার্দন দ্বিবেদী বলেন, মন্ত্রিসভায় রদবদলের পরেই সংগঠনে কিছু বদল ঘটানো হবে। আর তার পরেই বড় জনসভা করবেন সনিয়া-মনমোহন-রাহুল। রাহুলের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে অম্বিকা সোনি এ দিন বলেন, “তিনি সংগঠন চালানোর মতো বড় দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন।” কংগ্রেস সূত্রের খবর, পরের সাংগঠনিক রদবদলে রাহুলকে কার্যনির্বাহী সভাপতি করা হতে পারে।
মন্ত্রিসভায় রদবদলের ক্ষেত্রে নজর সব থেকে বেশি কৃষ্ণর ইস্তফায় খালি হওয়া বিদেশ মন্ত্রকের দিকে। এই পদটিকে নিয়ে আনন্দ শর্মা আর কপিল সিব্বলের মধ্যে কাড়াকাড়ির কথাই শোনা যাচ্ছিল গত কাল থেকে। কিন্তু আনন্দ শর্মাকে প্রধানমন্ত্রী চান না। আবার সিব্বলকে মনমোহন চাইলেও সনিয়া পছন্দ করেন না। এই অবস্থায় শিকে ছিড়তে পারে সলমন খুরশিদের মতো কোনও উত্তর ভারতের নেতার ভাগ্যে। মন্ত্রিসভার বড় চার মাথার মধ্যে পি চিদম্বরম এবং এ কে আ্যন্টনি দক্ষিণ ভারতের প্রতিনিধি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্দেও মহারাষ্ট্রের প্রতিনিধি। এ বারের মন্ত্রিসভায় অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে অন্তত ৫টি মুখ অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। এই অবস্থায় উত্তর ভারতের কাউকে বিগ-ফোরে নিয়ে আসতে চান মনমোহন-সনিয়া।
ফলে সংখ্যা ও গুরুত্ব দু’দিক থেকেই বেশ বড়সড় রদবদলই ঘটতে চলেছে কাল। যে কারণে গভীর রাত পর্যন্ত মন্ত্রক বণ্টন নিয়ে চলেছে টানাপোড়েন। মন্ত্রক পাচ্ছেন না জেনে অন্ধ্রের এক কংগ্রেস সাংসদ তো ইস্তফাই দিয়েছেন। বদলের সম্ভাবনা রেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকেও। সেখানে পবন বনশলকে নিয়ে আসার কথা চলছে। আনন্দ শর্মাকে বিদেশ দেওয়া না হলে বস্ত্র মন্ত্রক পেতে পারেন তিনি। এর মধ্যেই দক্ষিণের নেত্রী পুরণ্ডেশ্বরী এ দিনই ঘোষণা করে দিয়েছেন, তাঁকে আনন্দ শর্মার বাণিজ্য মন্ত্রক দেওয়া হচ্ছে। যদিও স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী না পূর্ণমন্ত্রী করা হবে তাঁকে, তা এখনও নিশ্চিত নয়।
বিতর্কের জেরে মন্ত্রক ছাড়তে বাধ্য হওয়া শশী তারুরকেও ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কথা চলছে। কমল নাথকে সংসদীয় মন্ত্রক, কপিলের থেকে মানবসম্পদ উন্নয়ন নিয়ে জয়পাল রেড্ডিকে, জয়পালের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক গুলাম নবি আজাদকে দেওয়ার কথাও শোনা যাচ্ছে। নবীনদের মধ্যে অজয় মাকেনের পদোন্নতি ঘটিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকে কর্পোরেট বিষয়ক, দক্ষিণের সুপারস্টার চিরঞ্জীবীকে পর্যটনে নিয়ে আসার কথাও বিবেচনায় রয়েছে। |
|
|
|
|
|