ভবিষ্যতের কথা ভেবে রাজ্য কমিটিতে তরুণ মুখ বাড়াতে চাইছে আলিমুদ্দিন। রাজ্য কমিটির ফাঁকা জায়গায় তুলে আনতে চাইছে যুব ও ছাত্র সংগঠনের কিছু নেতাকে। কিন্তু তাতেও যথারীতি কাঁটা হিসাবে দেখা দিচ্ছে গোষ্ঠী সমীকরণের অঙ্ক! কার লোককে কতটা অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, বিরোধ তা নিয়েই!
দীপাবলির আগেই আগামী ৬-৭ নভেম্বর সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠক বসছে আলিমুদ্দিনে। পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতি এবং আন্দোলনের কর্মসূচিই সেই বৈঠকের উদ্দেশ্য। তবে দলের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটের উপস্থিতিতে ওই বৈঠকেই রাজ্য কমিটিতে কিছু নতুন মুখ অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে বলে সিপিএম সূত্রের খবর। গত বছর রাজ্য সম্মেলনে যে ৮৪ সদস্যের রাজ্য কমিটি গঠিত হয়েছিল, তাতে শূন্য রাখা হয়েছিল ৭টি স্থান। তার মধ্যে জলপাইগুড়ি, মালদহ, কোচবিহার ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার প্রতিনিধির জন্য বরাদ্দ চারটি জায়গা। বাকি তিনটি শূন্য স্থান সাধারণ। এবং দলের অন্দরে এখন চর্চা চলছে এই তিনটি সাধারণ ফাঁকা আসন নিয়েই।
সিপিএম সূত্রের খবর, যুব ও ছাত্র ফ্রন্টের নেতাদের আরও জায়গা দিয়ে রাজ্য কমিটিতে তরুণ রক্ত বাড়াতে চাইছেন বিমান বসুরা। এসএফআইয়ের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক সায়নদীপ মিত্র গত বছর রাজ্য কমিটিতে জায়গা পান তাঁর ওই পদের জন্যই। কিন্তু এখন ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বে পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার পরে দলের একাংশ চাইছে, এসএফআইয়ের নতুন রাজ্য সভানেত্রীকে রাজ্য কমিটিতে জায়গা করে দেওয়া হোক। তাতে মহিলা মুখের সংখ্যাও বাড়ানো যাবে। ডিওয়াইএফআইয়ের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক আভাস রায়চৌধুরী ইতিমধ্যেই রাজ্য কমিটিতে আছেন এবং তিনিই এ বার যুব সংগঠনের রাজ্য সভাপতি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ডিওয়াইএফআইয়ের বর্তমান না প্রাক্তন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কাকে রাজ্য কমিটিতে আনা উচিত, তা নিয়ে দলে টানাপোড়েন রয়েছে। প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক আবার দিল্লির নেতৃত্বের সুনজরে নেই। কোঝিকোড় পার্টি কংগ্রেসে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির প্যানেলের একমাত্র বিরোধিতা তিনিই করেছিলেন। সেপ্টেম্বরে সর্বভারতীয় সম্মেলনে যুব সংগঠনের দায়িত্ব ছাড়ার পরে তাঁকে এখনও নতুন কোনও দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। আলিমুদ্দিনের একাংশ চায়, তাঁকে এ বার রাজ্য কমিটিতে পুনর্বাসন দেওয়া হোক।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ইচ্ছাকে মর্যাদা দিয়ে কারাটেরা অবশ্য তরুণ এক নেতাকে রাজ্য কমিটিতে বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে পাঠাতে পারেন। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে বাকি পদগুলি নিয়ে সার্বিক সমীকরণ কী চেহারা নেয়, তার উপরে। রাজ্য কমিটির এক সদস্যের বক্তব্য, “নির্দিষ্ট প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করেই যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার, নেওয়া হবে।”
এ বারের রাজ্য কমিটির বৈঠকের শেষ দিনেই ধর্মতলায় লেনিন মূর্তিতে মালা দিতে জড়ো হবেন সিপিএম-সহ বাম নেতারা। ওই অনুষ্ঠানের অনুমতি দেওয়া যাবে না বলে পুলিশের তরফে সিপিআইয়ের একটি সংগঠনকে চিঠি দেওয়ায় বাম নেতৃত্ব ওই বাৎসরিক আচারকে এ বার মর্যাদার প্রশ্ন হিসাবে নিয়েছেন। রাজ্য কমিটির শেষ দিন, ৭ তারিখেই কারাটেরা সমবেত হবেন দিলখুশা স্ট্রিটে সমর মুখোপাধ্যায়কে শতবর্ষের সংবর্ধনা দিতে। জীবদ্দশায় শতায়ু হয়েই কারাটদের যে ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানের সুযোগ করে দিচ্ছেন প্রাক্তন পলিটব্যুরো সদস্য সমরবাবু। |