ভাড়া নিয়ে সাড়া নেই,
বাস-মালিকরা এ বার মরিয়া
দু’দিন বাদেই লক্ষ্মীপুজো। কিন্তু তার পরেও লক্ষ্মীলাভের কোনও আশা এখনও দেখতে পাচ্ছেন না বাস-মালিকরা।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুরোধে লক্ষ্মীপুজো অবধি ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে ডাকা ধর্মঘট স্থগিত রেখেছিলেন বাস-মালিকরা। তাঁদের আশা ছিল, এর মধ্যেই সরকার আলোচনার মাধ্যমে ভাড়া বাড়ানোর ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু সরকারের দিক থেকে তেমন কোনও ইঙ্গিত মেলেনি শুক্রবারও। ভাড়া নিয়ে আলোচনার জন্য সরকারের তরফ থেকে যে ধরনের প্রস্তুতির দরকার ছিল, শুরু হয়নি সেই প্রক্রিয়াও। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার অল্প হলেও ফের বেড়েছে ডিজেলের দাম। এই পরিস্থিতিতেও নিজে কোনও মন্তব্য করতে রাজি নন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। এ দিনও তিনি বলেন, “পুরো বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী দেখছেন। উনি ঠিক সময়ে ঠিক সিদ্ধান্তই নেবেন।” কিন্তু বার বার এই একই আশ্বাসে বিশেষ ভরসা রাখতে পারছেন না অধিকাংশ বাস-মালিকই। তাঁদের একাংশের বক্তব্য, ভাড়া না বাড়লে লক্ষ্মীপুজোর পরে বাস চালানোই সম্ভব হবে না। নয়তো কয়েকটি রুটে যেমন যাত্রীদের সমর্থনে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে, তেমন কোনও রাস্তা নিতে হতে পারে। অর্থাৎ, সরকার নিজের জেদে অটল থাকলে বাস-মালিকরাও এ বার সংঘাতে নামতে তৈরি।
ভাড়া না বাড়ালে বাস বসে যাওয়ার আশঙ্কা যে কতটা সত্য, সরকারি পরিবহণ নিগমগুলির দশাই তার বড় প্রমাণ। পুজোর মুখে নিগমের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পরে পরিবহণমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, পুজোর শহরে দৈনিক অন্তত পাঁচশো বাস চলবে। কিন্তু চলেছে তার চেয়েও কম। বিশেষ করে দুপুরের আগে বিভিন্ন রুটে সরকারি বাস প্রায় ছিলই না বললেই চলে। পরিবহণমন্ত্রীর অবশ্য দাবি, “ছুটিতে প্রথম দিকে তো ভালই সরকারি বাস চলেছে! কর্মীরা অনেকেই পুজোয় ছুটি পাননি। পরের দিকে ওঁরা ছুটি নেওয়ায় বাস একটু কমতে পারে। তবে, পরিষেবা যে যথেষ্ট ভাল ছিল, তা তথ্য সহকারে জানিয়ে দেব।”
পরিবহণ দফতর সূত্রের অবশ্য খবর, ভাড়া না বাড়ানোয় সরকারি নিগমগুলো মারাত্মক অর্থ সঙ্কটে পড়েছে। অগস্টে ডিজেলের দাম বাড়ার পরেও ভাড়া একই থাকায় ভর্তুকি বেড়েছে নিগমগুলিতে। অথচ পরিবহণ দফতর বাড়তি অর্থ বরাদ্দে আগ্রহী নয়। এই অবস্থায় সরকারি পরিবহণ কর্মীদের বেতন-বৃদ্ধি এবং বোনাস বন্ধ রাখা হয়েছে।
সরকারি বাসে না হয় ভর্তুকি রয়েছে, কিন্তু বেসরকারি বাস-মালিকরা কেন গাঁটের কড়ি খরচ করে বাস চালাতে আগ্রহী হবেন? মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধে ধর্মঘট তুলে নিলেও তাই উৎসবের শহরে বাসের সংখ্যা বাড়েনি। উল্টে কমেছে। শুক্রবারও বাসের জন্য রাস্তায় হা-পিত্যেশ করে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে যাত্রীদের। অফিস-কাছারি পুরোপুরি চালু হলে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে, তা ভেবে আতঙ্কিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
মিনিবাস কো-অপারেটিভ কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতা অবশেষ দাঁ বা বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের নেতা দীপক সরকাররা বলছেন, “পরিস্থিতি প্রতি দিনই খারাপ হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীকে সম্মান জানিয়ে আমরা লক্ষ্মীপুজো অবধি অপেক্ষা করছি। কিন্তু তার পরে আমাদের ভাড়া বাড়াতেই হবে। না হলে আর বাস চালানো যাবে না।” একই কথা জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটের নেতা সাধন দাসেরও। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী কথা দিয়েছেন। লক্ষ্মীপুজোর পরে নিশ্চয়ই উনি কোনও সিদ্ধান্ত নেবেন। পরিস্থিতি যা, তাতে ভাড়া বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই।”
শেষমেশ ভাড়া না বাড়ালে কি বাস-মালিকরা ফের ধর্মঘট ডাকবেন? এর উত্তরে দীপকবাবুরা বলেন, “আমাদের আর ধর্মঘট ডাকতে হবে না। এমনিতেই বাস রাস্তা থেকে উঠে যাবে।”
বাস-মালিকরা ভেবেছিলেন, লক্ষ্মীপুজোর মধ্যেই সরকারের তরফে পরিবহণের পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করা হবে। কিংবা কোনও কমিটিকে বাসের ভাড়া সমীক্ষা করে দেখার দায়িত্ব দেওয়া হবে। কোনওটিই না হওয়ায় হতাশ বাস-মালিকরা। তাঁদের কথায়, “সরকারের পক্ষ থেকে কিন্তু পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কোনও লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। আমরা ভাড়া নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি বিশেষ কমিটি তৈরির দাবি জানিয়েছিলাম। তা নিয়েও কোনও আলোচনা হয়নি। সব মিলিয়ে পরিবহণ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার কোনও সরকারি উদ্যোগই কিন্তু এখনও চোখে পড়ছে না।”
সরকারের উদ্যোগের উপরে আস্থা না রেখে কয়েকটি রুটে অবশ্য যাত্রীরাই বাস ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন। বজবজের দু’টি রুটে বর্ধিত ভাড়া অনুমোদনও করেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিবহণ দফতর। ভাড়া বেড়েছে হাওড়া-হুগলির কয়েকটি রুটেও। সেখানে সরকারি অনুমোদন ছাড়াই বাড়তি ভাড়া দিতে রাজি হয়েছেন যাত্রীরা। কলকাতার এক বাস-মালিক বলেন, “সরকার যদি ভাড়া না-বাড়ায়, তবে বাধ্য হয়ে আমাদের নিজেদেরই বাঁচার পথ বার করতে হবে। যে সব রুট নিজেরা ভাড়া বাড়িয়েছে, সেখানকার যাত্রীরা তো তা মেনে নিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত অটোর মতো আমরাও নিজেদের মতো ভাড়া বাড়িয়ে নেব। আশা করি, মানুষও আমাদের সমস্যা বুঝে তা মেনে নেবেন।”

পুজোয় শহরে সিএসটিসি-র বাস
দিন এ শিফট বি শিফট
ষষ্টী ২৮৬ ৩৭৮
সপ্তমী ২৬৩ ৪০০
অষ্টমী ২৬৩ ৪১৬
নবমী ২৬০ ৪১৩
দশমী ৩০৫ ২৩০
এ শিফট: ভোর ৪টে-বেলা ১টা
বি শিফট: বেলা ১টা- রাত১১টা



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.