নাটক সমালোচনা...
কর্নেলকে কেউ চিঠি লেখে না
ঙ্গ রঙ্গমঞ্চে সম্ভবত এই প্রথম গার্বিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ। গোবরডাঙা শিল্পায়ন-এর হাত ধরে। আশিস চট্টোপাধ্যায়ের নাট্য নির্মাণে যেমন হয়েছিল দশ বছর আগেও। লাতিন আমেরিকার নোবেল পুরস্কার জয়ী এই সাহিত্যিকের ‘নো ওয়ান রাইটস টু কর্নেল’ অবলম্বনে ‘কর্নেলকে কেউ চিঠি লেখে না’। আশিস ঠিক আগের মতোই পঁচিশ জন ছেলেমেয়ে নিয়ে মার্কেজের রচনার অন্যতম স্বাদ যে ‘ম্যাজিক রিয়ালিটি’ তাই তুলে ধরলেন নাট্যমঞ্চে।
নাটকের শুরু মোরগের লড়াই দিয়ে। এটি এ নাটকের প্রতীক। মাঝে মধ্যেই সেই ইঙ্গিত নাটকে ঘুরে ফিরে এসেছে। দারিদ্রকে নিত্যসঙ্গী করে ১৫ বছর ধরে পেনশনের চিঠির জন্য অপেক্ষা করে আছেন কর্নেল। দেশের জন্য লড়াইয়ের বিনিময়ে এই পেনশনের প্রতিশ্রুতি। কিন্তু প্রতিশ্রুতিই সার। ফি শুক্রবার এক বুক আশা নিয়ে আর জীর্ণ ছাতা বগলে চাপিয়ে স্টিমার ঘাটে যাওয়া আর ফিরে আসা শূন্য হাতে। লাল ফিতের ফাঁসের কাছে মানুষ সত্যিই অসহায়।
ক্রমশ এই ধারণা কর্নেলের মনে পোক্ত হয়ে বসে। বিপ্লবের নামে ভাঁওতা দেওয়া ক্ষমতাধর শাসকশ্রেণির মুখোশ উন্মোচনের এ এক তীব্র ব্যঙ্গ। লাতিন আমেরিকান সাহিত্যের অন্যতম বৈশিষ্ট্যই হল ম্যাজিক রিয়্যালিজম। টুকরো টুকরো দৃশ্যে, কোলাজে, মাপেট-এর ব্যবহারে, কার্নিভালের দৃশ্যের মাধ্যমে নিপীড়িত মানুষের যন্ত্রণার কথা প্রকৃত অর্থে সেই ম্যাজিক রিয়্যালিজম-এর আবহেই গড়েছেন আশিস। সুরেশ দত্তের মাপেট নির্মাণ আর রাজু ভট্টাচার্যের আলোর প্রয়োগ এ নাটকে অন্য ব্যঞ্জনা এনে দিয়েছে।
কর্নেল-এর চরিত্রে প্রিয়েন্দুশেখর দাস অনবদ্য অভিনয় করেছেন। কর্নেল-এর স্ত্রীর চরিত্রে দীপা ব্রহ্মের অভিনয় বাংলা নাট্যমঞ্চে এই সময়ের নজর কাড়া রূপায়ণ। এ ছাড়াও ভাল অভিনয় করেছেন উকিলের চরিত্রে অভীক বন্দ্যোপাধ্যায়, আগুস্তিনের চরিত্রে শৌভিক সরকার। অন্যান্যদের মধ্যে তাপস দত্ত চৌধুরী, সাহেব আলি মণ্ডল, স্বপন বণিক, রাজেশ কর্মকার। নাটকে চমকপ্রদ একটি সংলাপ আছে ‘মহড়া দিয়ে নাটক হয়, বিপ্লব হয় না।’ সবটাই প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতে। কিন্তু স্পষ্ট এবং ঋজু। শিল্পায়নের এই নাটক তার নিজস্বতায় তাই নজর কাড়ে।

নাটকের মোড় ঘুরিয়েছে আবহ সঙ্গীত
‘দমদম নাট্যদীপ’ প্রযোজিত ‘বড় আশা করে’ নাটকটি যান্ত্রিক গোলযোগের জন্য শুরুতেই ব্যাহত হয়। কিছু ভুলত্রুটি থাকলেও আশা জাগায় নাটকের বক্তব্যের উপস্থাপনায়। সানি বিশ্বাস খৃষ্টান, স্ত্রী আশা। রোজগারপাতির কোনও ঠিক নেই। চেষ্টা আছে শুধু উদ্ভট কিছু আবিষ্কারের। একটা আবিষ্কার হয়ে গেল আচমকা। অজান্তে আবিষ্কৃত ওষুধ প্রয়োগ করা হয়ে গেল কাজের লোক জটার উপর। জটার মরণ হল সাময়িক, আবার বেঁচেও উঠল। এটাই চাইছিল সানি। একটা পথ বোধ হয় পাওয়া গেল বেঁচে থাকার।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে যাঁরা অভিনয় করেছেন তাঁদের মধ্যে প্রদীপ বসু, দীপা মল্লিক, তপন সরকার, গোপীনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ ভাল। জটার চরিত্রে মানিক ভট্টাচার্য ভাল। কিন্তু ভাষা প্রয়োগের ক্ষেত্রে আরও যত্নবান হতে হবে। সুন্দর অভিনয় করেছেন সানির চরিত্রে মানবব্রত মুখোপাধ্যায় এবং আশার চরিত্রে দেবযানী মুখোপাধ্যায়। অন্যান্য চরিত্রে সুমিত মিত্র, প্রসূন ঘোষ, শেফালি চক্রবর্তী, অভিষেক চৌধুরী যথাযথ।
আবহ সঙ্গীত এই নাটককে অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে। সঙ্গীত পরিচালক শ্যামল বন্দ্যোপাধ্যায় তার দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.