|
মনোরঞ্জন ২... |
|
তোমার সঙ্গে বাইকে |
বাইক মানে মাসল। বাইক মানেই আদিগন্ত উদ্দাম এক ঝড়। মর্দানি।
মস্তানি। বাইক নিয়ে এই ক্রেজের খবরে অরিজিৎ চক্রবর্তী |
রাত ১১-৩০। এজেসি বোস রোড ফ্লাইওভারের অ্যাম্বার সিগনালটা ব্লিঙ্ক করছে।
চোখের পলকে সোঁ করে বেরিয়ে গেল দুটো ডিউক। স্পিড কোনওমতেই ৯০-এর কম হতে পারে না। বোদ্ধাদের ভাষায় এটাই ‘ড্র্যাগ রেস’।
রেস শুরুর আগে রাস্তায় গাড়ির চাকা ঘষিয়ে ‘বার্ন আউট’ করে নেওয়া। সেই থেকেই এর নাম ড্র্যাগ রেস। বিগ ম্যাক, জিনজার বার্গারের দেশ থেকে আমদানি হওয়া কালচারের এক নতুন সংযোজন।
গতি... ঝুঁকি... অ্যাড্রিনালিন রাশ।
মেয়েদের বয়স, আর বাইকের মাইলেজ...
যত কেতা দেখানো বাইক, তেলও কিন্তু ততই পুড়বে। তবে তাতে দমে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না বাইক-পাগল জনতার। “বাইকের মাইলেজ আর মেয়েদের বয়স। জিজ্ঞেস করবেন না। এনফিল্ড চালানোর রয়্যালটিটাই আলাদা। সেখানে মাইলেজ-টাইলেজ...” গর্বের ঝাঁঝ সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের গলায়। পেশায় ফোটোগ্রাফার, কিন্তু বাইকের নেশায় পুরো বুঁদ।
এই পথ যদি না শেষ হয়...
বাইকওয়ালা বয়ফ্রেন্ডই চাই শতরূপার। তাই বাইক কিনতে হয়েছিল অনুরাগকে। কিন্তু এখন সে প্রেমটা কিছুটা ডাইভার্ট হয়েছে বাইকে। ‘প্যাশান’ ছেড়ে ও এখন আপগ্রেডেড হয়েছে ইয়ামাহা আর ওয়ানে।
দেবাঞ্জলি আর অর্ক-র যেমন ব্রেক আপ, প্যাচ আপ দুটোই হয় বাইকে! “লং ড্রাইভের সুবিধা বস,” সাফ কথা দেবাঞ্জলির। |
|
‘এক থা টাইগার’ ছবির এক দৃশ্যে
সলমন-ক্যাটরিনা |
শুধুই স্টাইল? |
দু’চাকা। শো অফ। হাজার সিসির ব্যারিটোন। সময়ের মুখে ধোঁয়া উড়িয়ে চলে যাওয়া। ঔদ্ধত্য। শুধুই কি তাই? বাইকে চড়ার সুবিধাগুলোকে কিন্তু উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। ট্রাফিকের লম্বা লাইন। দিব্যি এ-দিক ও-দিক দিয়ে কাটিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়।
এই সুবিধার জন্যই সলমন খান মাঝেমাঝেই শ্যুটিং ফ্লোরে চলে আসেন নিজের হায়াবুসা চড়ে। মহেন্দ্র সিংহ ধোনিও কলকাতার রাস্তায় হাঁকিয়ে বেড়ান হার্লে-ডেভিডসন।
|
জাম্প কাট |
‘ধুম’, ‘ব্লু’ থেকে হালের ‘সন অব সর্দার’। বাইক নিয়ে কেতা দেখাতে কোন কসুর করেনি রুপোলি পরদা। তবে এ ট্রেন্ডটা কিন্তু নতুন কিছু নয়। চল্লিশ বছর আগেই বাইকে তুফান তুলেছিলেন রাজেশ খন্না। ‘আন্দাজ’ সিনেমায়। ব্যাস, সেটার অনুকরণে লেগে গেল তখনকার ‘জেন ওয়াই’। আর এখন তো পপ কালচারে বাইক আর ইয়ুথ সমার্থক। ‘লাফাঙ্গে পরিন্দে’, ‘জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা’ থেকে ‘জব তক হ্যায় জান’।
|
এক দিন দল বেঁধে... |
“চেনা পথের বাইরে বেরোতেই শুরু করেছিলাম এই বাইকিং ক্লাব।” বলছিলেন জিৎ রায়। চার জন মিলে শুরু করা ক্যারাভান বাইকিং ক্লাবের নিয়মিত সদস্য-সংখ্যা এখন প্রায় আশি। “এই তো মে মাসে ওল্ড সিল্ক রুট হয়ে সিকিম ঘুরে এলাম।”
বাইকিংয়ে পিছিয়ে নেই মেয়েরাও। যেমন দিল্লির উর্বশী পটেল। করেছেন ‘বাইকার্নি’ নামের এক বাইক ক্লাব। “অ্যাড্রিনালিন রাশ যতই থাকুক না কেন, সেফটিরই কিন্তু সব সময় প্রায়োরিটি পাওয়া উচিত।” স্পষ্ট গাইডলাইন এক সুপার বাইকার্স ক্লাবের সদস্য লিও মাসকেরেনাসের ।
|
পথ গেছে বেঁকে |
“একটা সময় ছিল, যখন অর্ডার দিতে হত। তার পর কয়েক মাস অপেক্ষার পর দেখা মিলত সেই বাইকের।” ষাটোর্দ্ধ জয় মুখোপাধ্যায় মুচকি হেসে বললেন, “তবে এখন তো বাইক কেনা আর মলে গিয়ে জামা-কাপড় কেনা, দুই এক।”
এখানেও ডিম্যান্ড আর সাপ্লাই! তাই ভারতে আসছে পৃথিবী-বিখ্যাত সব সুপার বাইকস। হায়াবুসা, নিনজা কী হার্লে-ডেভিডসন। |
|
বাইকে মাহি
|
বাইক ক্রেজ |
বাইক দু’রকম। সুপার বাইকস আর ক্রুজার। সুপার বাইকসে চট-জলদি গতি তোলা যায়। যেমন নিনজা, হায়াবুসা। আর ক্রুজার বাইকের ‘থ্রটল’ কম। কিন্তু যাত্রা? পুরো মাখন। এর মধ্যে পড়ে বিএমডাবলিউ, এনফিল্ড, হার্লে-ডেভিডসন।
চেহারা হোক বা রঙ। চমক সবেতেই। স্ট্রাইকিং লালের সঙ্গে ড্যাজলিং হলুদ। ইলেকট্রিক ব্লু-র সঙ্গে মেটালিক ব্রোঞ্জ। দাম লাখ খানেক হলেও ক্রেতার কোনও ঘাটতি নেই। “গত মাসে ১১টা হার্লে-ডেভিডসন বিক্রি হয়েছে আমাদের যাত্রাগাছির শোরুম থেকে।” জানালেন সুমিতা।
কিন্তু কেন? একটা বাইকের টাকায়
যেখানে হেসেখেলে দু’-তিনটে ফোরহুইলার
হয়ে যায়, সেখানে কীসের এই বাইক প্রীতি?
“জেমস ডিন থেকে উত্তমকুমার। পর্দায় দেখার একটা প্রভাব তো থাকবেই।” কারণটা বাতলালেন মনস্তত্ত্ববিদ জয়রঞ্জন রাম, “তবে শো-অফ করার টেনডেন্সিটাও বাদ দেওয়া যাবে না। দামি সানগ্লাস-জ্যাকেট পরে গাড়ির মধ্যে বসে থাকলে কে আর দেখতে পাবে!”
|
গতি... আরও গতি |
স্পিড: আগের জেনেরেশনের বাইকের গতি যেখানে ছিল ৭০-৮০ কিমি। এখন সুপার বাইকে নিমেষে ওঠে ১২০-১৪০ কিমি। দুটো চাকার দূরত্ব যত কম, গতি তুলতে তার তত
কম সময় লাগবে। |
ইঞ্জিন: জেন-নেক্সটের বাইকের ইঞ্জিন ৫০০ সিসির কমে হবে না। আর এখনকার বাইকের ইঞ্জিন কিন্তু কম্পিউটার ছাড়া টিউনিং করা
যায় না।
|
ট্রান্সমিশন: ক্রুজার বাইকে ফ্লোট পিন বাড়িয়ে বা কমিয়ে ইঞ্জিনে জ্বালানির জন্য তেল আর বাতাসের অনুপাত ঠিক করা হয়। যেমন পাহাড়ি রাস্তায় চলার সময় ফ্লোট পিন বাড়িয়ে নেওয়া হয়, ইঞ্জিনে বেশি তেল আনার জন্য। |
টায়ার: বিভিন্ন রাস্তায় চলার জন্য এই সব বাইকে টায়ারের গ্রিপ হয় আলাদা আলাদা। সফট বা হার্ড, যে গ্রিপই হোক না কেন, এক বছরের বেশি চলাটা মুশকিল। |
সাসপেনসন: এখনকার ক্রুজার বাইকগুলোর সাসপেনসন খুব ভাল। তাই দীর্ঘ জার্নিতেও
ক্লান্ত হবেন না। তবে সুপার বাইকে লং টুর না করাই ভাল। |
|
|