শনিবারের নিবন্ধ ৩.. |
পরিচালনায় বসতে লক্ষ্মী |
এ বছর চার জন বাঙালি পরিচালকের ছবি বলিউডে ফাটাফাটি ব্যবসা জমাল।
এ নিয়ে তাঁদের মনের কথা কী? খবর নিলেন ইন্দ্রনীল রায় |
|
সুজয় ঘোষ
‘কহানি’র
মোট আয় ১০৪
কোটি |
|
|
• বয়স: ৪৫
• শিক্ষাগত যোগ্যতা: কম্পিউটার সায়েন্সে অনার্স। তারপর ম্যানচেস্টার বিজনেস স্কুল থেকে এমবিএ।
• প্রথম চাকরি: লিভারপুলে হাইঞ্জ কোম্পানি
• শেষ চাকরি: রয়টার্স—পদ: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মিডিয়া ম্যানেজার।
• কহানির মোট আয়: ১০৪ কোটি
• পয়সা মানে: টাকা আমার কাছে সব থেকে
গুরুত্বপূর্ণ। আমি ও রকম রোমান্টিকতা মানি না যে,
আর্টই শেষ কথা। ওগুলো শুনতে বা বলতে ভাল
লাগে শুধু। টাকার জন্যই তো আমি ভাল ভাবে
বেঁচে আছি। |
|
• ওয়ালেটে যে কোনও সময় কত টাকা থাকে: খুব অল্প। বিদেশে থেকে এই এক অভ্যেস হয়েছে আমার। টাকার থেকে ওয়ালেটে কার্ড বেশি থাকে।
•
‘কহানি’-র প্রভাব: ‘কহানি’ ছিল আমার কাছে শেষ ভরসা। এর আগের ছবি ‘আলাদিন’ ছিল সুপার ফ্লপ। মাথা ঠান্ডা রেখে নিজেকে বলতাম, “মাই টাইম উইল কাম”। ইনফ্যাক্ট এখন তো ‘কহানি’ দেখে লোকে কলকাতায় শ্যুট করতে আসছে। সে দিক থেকে দেখতে গেলে কহানি পায়োনিয়ার।
• সব থেকে বেশি টাকা খরচ হয়: বই কিনতে। অনেকের কাছেই হয়তো টাকাটা কম মনে হতে পারে, কিন্তু একটা বইয়ের দোকানে গিয়ে ৫০ হাজার টাকার বই কিনে ফেলেছিলাম।
•
‘কহানি’ যদি ফ্লপ করত: ‘কহানি’ ফ্লপ হলে জানতাম ফিল্ম লাইন থেকে আমার প্যাক আপ। আমি বিলেত চলে যেতাম। ৪৫ বছর বয়েসে তো কেউ ভাল চাকরি করে না। ওই ম্যাক-ডোনাল্ডসে ফ্রাই ভাজতাম।
•
কোন শব্দ সব থেকে বেশি ব্যবহার হয়: Calm down. মাথা ঠান্ডা রাখো। আমার জীবনের এটাই মন্ত্র। ফিল্ম লাইনের ফার্স্ট অ্যান্ড লাস্ট রুল। |
|
অনুরাগ বসু
‘বরফি’র
মোট আয় ১৪০ কোটি |
|
|
• বয়স: ৩৪
• পড়াশুনো: মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিজিক্সে অনার্স।
• মুম্বই শহরে কী করে যেন খাবার জুটে যায়: মুম্বই শহরের এটা একটা ম্যাজিক। বহু সময় রাতে বেড়িয়েছি, টাকা নেই একদম, কিন্তু কী করে যেন ঠিক একজন-দু’জন জুটে গেছে যারা আমাকে খাইয়েছে। কী করে এটা সম্ভব হয়, এটাই আজও আমার কাছে একটা বিস্ময়।
• রেগুলার টাকা ধার করি ড্রাইভারের কাছ থেকে: ওয়ালেট জিনিসটা ভগবান আমার জন্য বানাননি। একদম ভাল লাগে না ওয়ালেট ক্যারি করতে। টাকা এমনি পকেটে রাখি এবং সত্যি বলছি, অত টাকার খেয়াল থাকে না। |
|
• আমার এই গল্প শুনলে লোকে হাসবে: ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে আমার এই গল্পটা অনেকেই জানে। আজকে আপনাদের বলছি। মুম্বইয়ে গুরগাঁও থেকে লোখন্ডওয়ালার মধ্যে যত বড় বড় পানের দোকান আছে প্রায় প্রত্যেকটা দোকান থেকেই আমি টাকা ধার করেছি। গাড়িতে যেতে যেতে হঠাৎ কিছু কিনব মনে হলেই আমি গাড়ি থেকে নেমে টাকা ধার করি। এ রকম আমি রোজ করি। ইনফ্যাক্ট গতকালও করেছি। পরের দিন অবশ্য টাকা ফেরত দিয়ে দিই। খুব মজা লাগে।
•
‘বরফি’র মোট আয়: ১৪০ কোটি।
•
‘বরফি’র প্রভাব: ‘বরফি’ প্রমাণ করেছে, আজকের বলিউডে হিরো আর হিরোইন গোটা ছবিতে একটা শব্দ উচ্চারণ না করেও ছবিটাকে উতরাতে পারে। এটা আমার জীবনের ল্যান্ডমার্ক। সুস্থ হয়ে উঠে এই ছবিটাই বানাতে চেয়েছিলাম। আর ‘বরফি’র ব্লক বাস্টার হওয়া প্রমাণ করে, ভাল আইডিয়াকে দর্শক সব সময় স্বাগত জানায়।
• এই মুহূর্তে কী কিনতে চাই: জানি না। জানেন, একটা বাইক কেনার খুব ইচ্ছে আছে। সেটা ‘ডুকাটি’ হলে ভাল।
• টাকা মানে কী: মানি ইজ সামথিং দ্যাট বাইজ ইউ কমফর্ট। কিন্তু কী জানেন, আমি বিরাট সরস্বতী-ভক্ত। তার জন্যই বোধ হয় মা লক্ষ্মী আমার ওপরে সদয়। |
|
সুজিত সরকার
‘ভিকি ডোনার’-এর
মোট আয় ৭০ কোটি |
|
|
• বয়স: ৪৪
• পড়াশুনো: স্কুলিং ব্যারাকপুর আর নিউদিল্লির কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি কম অনার্স।
• স্পোর্টস কোটা বাঁচিয়ে দিয়েছিল আমায়: আমি কিন্তু ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছিলাম স্পোর্টস কোটায়। খুব ভাল ফুটবল খেলতাম বলে।
• প্রথম চাকরি: দিল্লির লা মেরিডিয়ান হোটেলে অ্যাকাউন্টস অ্যাসিসট্যান্ট। এই চাকরিটাও স্পোর্টস কোটায় পাওয়া। সারা দিন হিসেব-নিকেশ করতাম। আজকে ভাবলে অবাক লাগে।
• প্রথম বিজ্ঞাপন: ১৯৯০-এর ফুটবল বিশ্বকাপের সময় ডেটলের একটা অ্যাড বানিয়েছিলাম। ছ’জন বাচ্চা ছেলে সবুজ টি-শার্ট পরে ফুটবল খেলছে। |
|
• টাকার মুখ দেখলাম: টাকা এবং একটু বিখ্যাত, দু’টোই হলাম শুভা মুদগল আর শান্তনু মৈত্রের ‘মন কি মনজিরে’ মিউজিক ভিডিওটা বেরোনোর পর। ওটাই টার্নিং পয়েন্ট।
• পয়সা যখন ছিল না: মাসের পর মাস লাঞ্চ খেতাম না। আমি একা না, সেই সময় যারাই দিল্লিতে থিয়েটার করত সবারই এক অবস্থা। পীযূষ মিশ্রও ছিল সেই দলে। সারা দিনে একটাই খাবার ডিনার। বড় হয়ে যাওয়ার পর বাবা-মা র কাছে পয়সা চাইব না। আজকে ভাবি ওই জেদটাই আমার খিদে বাড়িয়ে দিয়েছিল।
• ‘ভিকি ডোনার’-এর মোট আয়: সাড়ে চার কোটি দিয়ে বানানো ছবি সত্তর কোটি কামিয়েছে। অত টাকা কোনও দিন দেখতে পাব স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি।
• ‘ভিকি ডোনার’-এর প্রভাব: ‘ভিকি ডোনার’ই দেখিয়ে দিয়েছে নতুন অভিনেতা অভিনেত্রীদের দিয়েও ছবি হিট করানো যায়। শুধু তাই নয়, ছবিটার একটা সোশ্যাল ইমপ্যাক্টও ছিল। ভিকি ডোনারের আগে ‘স্পার্ম ডোনেশন’, ‘ইনফার্টিলিটি’ শব্দগুলো ছিল ট্যাবু। আজ খোলাখুলি সবাই বলতে পারে এই কথাগুলো। এটা আমার কাছে সত্তর কোটি টাকার থেকেও অনেক বেশি। |
|
বেদব্রত পাইন ‘চিটাগং’-এর আয়
১৫ কোটি
(এখনও হিসেব চলছে) |
|
|
• বয়স: ৪৯
• শিক্ষাগত যোগ্যতা: মাধ্যমিকে তৃতীয়, উচ্চ মাধ্যমিকে চতুর্থ, আইআইটি খড়গপুরে ক্লাসে প্রথম। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স এবং অ্যাপ্লায়েড ফিজিক্সে পিএইচ ডি।
• আবিষ্কার: ডিজিটাল ইমেজিং প্রযুক্তি, যে টেকনলজি পরে রেড ক্যামেরায় ব্যবহার করা হয়।
• পেটেন্টের সংখ্যা: ৮৭
• আবিষ্কারের মূল্য: ১০ বিলিয়ন ডলার
• চাকরি: নাসা। তাঁর নিজের কথাতেই, “ ‘স্বদেশ’ সিনেমাতে দেখানো হয়েছিল নাসার বিজ্ঞানী জাগুয়ার করে ঘুরছে। সে রকম কিন্তু মোটেই হয় না। ওখানে আমার মতো বিজ্ঞানীরা টয়োটাই অ্যাফোর্ড করতে পারে।” |
|
•
‘চিটাগং’-এর প্রভাব: মনোজ বাজপেয়ী, নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকিকে নিয়ে করা ‘চিটাগং’ দু’বছর ধরে ক্যান-বন্দি পড়েছিল। কারণ? বড় বাজেটের ‘খেলে হাম জি জান সে’ ফ্লপ করেছিল। এর মাঝে অনুরাগ কাশ্যপ, যিনি নতুনদের সিনেমা বানাতে খুব উৎসাহ দেন, ছবিটা দেখেন। আর তাঁর ভাল লেগে যায়। ওঁর উদ্যোগেই ছবিটা দু’ সপ্তাহ আগে রিলিজ হয়। আজ অমিতাভ থেকে শাহরুখ কাজ করতে চান বেদব্রতের সঙ্গে।
• আমার সমস্য আমার পদবি: আমেরিকায় কেউ আমার পদবি উচ্চারণ করতে পারত না। ‘পাইন’-এর বদলে বলত ‘পেইন’। প্রথমে বিচলিত হলেও পরে ওই পদবিতেই ইনট্রোডিউস করতাম। শেষে জুড়ে দিতাম, নো পেইন নো গেইন।
• প্রিয় ছবি: ‘থ্রি ইডিয়টস’। নিজে খুব ভাল ছাত্র ছিলাম, আইআইটিতে পড়েছি, কিন্তু নিজেকে রিলেট করতে পারি সিনেমাটার সঙ্গে।
• পয়সা মানে: যা আমাকে নতুন কিছু করতে সাহায্য করে। খুব ইচ্ছে কলকাতায় একটা বিশ্বমানের ফিজিক্স ল্যাব বানাই। |
|