|
|
|
|
|
|
|
নানা রকম... |
|
আমি সেই মেয়ে |
ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায় এবং একক। জি ডি বিড়লা সভাঘরে।
শুনে এলেন বিপ্লবকুমার ঘোষ |
জীবনের জন্য কবিতা? না কি কবিতার জন্য জীবন? জি ডি বিড়লা সভাঘরের ঠান্ডা প্রেক্ষাগৃহে বসে অন্তত এটুকু উপলব্ধি হয়েছে, কবিতার জন্যই জীবন। মনের ওঠা-পড়া, ভাল লাগা, অনুভূতি বা দুঃখের সবটুকুই একটা ছোট্ট পাখির মতো নীল দিগন্তেও ভাসিয়ে দেওয়া যায়। ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাফল্য সেখানেই। জীবনটাকে টুকরো টুকরো করে ময়না তদন্তের টেবিলে শুইয়ে এক জন শ্রোতাকে উপলব্ধি করাতে পারেন, যেখানে শুধু ব্যর্থতা নয়, সুখ-সাফল্যও অনিবার্য। তাই অবলীলায় ব্রততী বলতে পারেন, “সেই কবে থেকে কবিতার সাথে পথ চলা শুরু! আজও চলেছি। যে সব কবিতা আমার সুখ-দুঃখ প্রেম বিরহ প্রতিবাদের ভাষা ভাগ করে নেয় অহরহ, তাদের নিয়ে আপনাদের কাছে- আমি সেই মেয়ে।”
মঞ্চে বিশালাকার ঘড়ি। সামনেই ব্রততী। চার অধ্যায়ের প্রতীক। ‘ঐতিহ্য’, ‘প্রতীক’, ‘প্রেম’ ও ‘সময়’। পূর্ণাঙ্গ জীবনের এক-একটি স্মৃতি-বিজড়িত মুহূর্ত। এ দিন ‘চিরদিনের কবিতায়’ ব্রততী মেলবন্ধন ঘটিয়েছিলেন সেই ঘড়িকেই সাক্ষী রেখে। কবিতার সূত্রপাঠে সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের উপস্থিতি এখানে এক অন্য মাত্রা এনে দিয়েছিল। কারণ এই সতীনাথই ব্রততীর জীবনের প্রথম এককের সঞ্চালক ছিলেন। |
|
‘আজি হতে শতবর্ষ পরে’ তাঁর কণ্ঠে জাদু এবং মাহাত্ম্য। আবার তিনিই পরমুহূর্তে বলতে শুরু করলেন, ‘বিপুলা এই পৃথিবীর কতটুকু জানি।’ শুনতে শুনতে মনে হয়, রেনেসাঁ থেকে এই আধুনিক যুগ-এই দীর্ঘ সময়, দীর্ঘ পথ পেরিয়েও কবিতা শুদ্ধিকরণে কত উন্নত, নির্ভুল। ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় ‘বল বীর’ যখন শ্রোতাদের অন্তরে উত্তেজনার পারদ চড়ে তখন ব্রততী ধীর-স্থির। মনে পড়ে গেল কবি শঙ্খ ঘোষের একটি উক্তি, ‘সত্য বলা ছাড়া কবিতার আর কোনও দায় নেই।’ সত্যিই দায় নেই যখন কবি সুকান্তও লিখেছিলেন, ‘যে শিশু ভূমিষ্ঠ হল আজ রাত্রে।’ ব্রততী নির্দ্বিধায় তাই বেছে নিয়েছিলেন জীবনানন্দের ‘হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি।’
জীবনের কঠিন পথ তো ব্রততী কম পেরোননি। বাস্তবকে উপলব্ধি করা এবং কবিতায় মিশিয়ে দেওয়া এটা তাঁর পক্ষেই সম্ভব। রবীন্দ্রনাথ থেকে জীবনানন্দ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় থেকে জয় গোস্বামী। ছাপা অক্ষরের কবিতার চরিত্রগুলিও মঞ্চে কোথায় যেন অদৃশ্য থেকেও ধরা দেয়। তিনি বলতে থাকেন, ‘অবনী বাড়ি আছো।’ সত্যিই যেন অবনী দরজা খুলে দাঁড়িয়ে পড়ল। অনুষ্ঠানে ব্রততীর সঙ্গী ছিলেন আবহে কল্যাণ সেন বরাট ও প্রত্যুষ বন্দ্যোপাধ্যায়। টানা দু’ ঘণ্টা কুড়ি মিনিটের অনুষ্ঠানে কোনও বিরতি না থাকলেও শ্রোতাদের বিরক্তি ছিল না। কারণ ততক্ষণে শোনা হয়ে গেছে, ‘অমলকান্তি রোদ্দুর হতে চেয়েছিল।’ চাওয়া-পাওয়ার মর্মস্পর্শী অনুভব। অমলকান্তি রোদ্দুর হতে পারেনি। কিংবা ‘কেউ কথা রাখেনি’। বোষ্টমি কোথায় হারিয়ে গেল, কেউ খোঁজ দিল না। আসলে কেউ কথা রাখে না। এমন অনুভবে অসাধারণ ব্রততী। বা বলা যায়, কবিতার জন্যই এই জীবন। |
শ্রোতারা মুগ্ধ |
আশিস চট্টোপাধ্যায় |
প্রয়াত তবলিয়া শ্যামল বসুর পুত্র সৌরভ বসু দিল্লি থেকে এসে তবলা বাজিয়ে গেলেন কলাশ্রীর আঠাশতম বার্ষিক বিচিত্রানুষ্ঠানে। ফারুক্কাবাদ ঘরানার সঠিক পদ্ধতিতে তিন তালে তবলা বাদনে পেশকার। কায়দা- ধেরে ধেরে কেটে তাক। টুকড়া চক্রদার বিভিন্ন অঙ্গের তেহাই, রেলা ইত্যাদি পরিচ্ছন্ন হাতে সৌন্দর্য বজায় রেখে পরিবেশন করে শ্রোতাদের মুগ্ধ করে দেন। সারেঙ্গিতে নগমা রাখেন পঙ্কজ মিশ্র। আর একটি লহরা অনুষ্ঠানে গুরু-শিষ্যা বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায় ও ঝুমা পাল। দু’জনের বাজনায় সুন্দর সমঝোতার প্রকাশ ছিল। শিষ্যার হাত ভাল। অংশগ্রহণকারী বিশ্বনাথের অন্যান্য কয়েকটি ছাত্রের নাম প্রিয়ব্রত চক্রবর্তী, শুভ্রাংশু দে, ইন্দ্রজিৎ দাস ও রিতম পাল। বৃন্দাবনী সারং রাগে খেয়াল শোনান সৌমিলি কাঁড়ার, পুরিয়া রাগে সেতারে ইন্দ্রাণী কাঁড়ারের সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করেন সুমন কাঁড়ার। তিনজনেই আনন্দদায়ক। মলয়কান্তি ধরের নজরুলগীতি ও ভজন শ্রুতিসুখকর। অনবদ্য তবলা সঙ্গত করেন জয়দীপ চক্রবর্তী। পুরিয়া ধানেশ্রী রাগে খেয়াল গান করেন অমিতাভ ঘোষ। তিথি আচার্যের পরিচালনায় কত্থক ও সৃজনশীল নৃত্যে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেন সংসৃতি সেন ও সঙ্গীতা বাগানি। |
|
|
|
|
|