|
|
|
|
|
|
অন্য হাওয়া |
ব্যজন-বিলাস |
বিভূতিসুন্দর ভট্টাচার্য |
সে রাজাও নেই, সে চামরও নেই।
বনেদি বাড়ির পুজোর দালান হোক বা থিমের মণ্ডপ, আরতির শেষ উপকরণ চামর যেন আজও উস্কে দেয় অতীতের স্মৃতি। ঢাকের বাদ্যি, ধুনোর গন্ধ আর চামরের ব্যজন সবই তো সেই স্মৃতিবিলাসের অঙ্গ।
প্রাচীন কালে রাজসভায় রাজার দু’পাশে থাকত চামরধারিণী। পুরাণ ও মহাকাব্যে চামর ব্যবহারের উল্লেখ রয়েছে। ভারতশিল্পেও নানা ধারায় দেখা যায় চামরের ব্যবহার। মৌর্য-সুঙ্গ যুগ থেকে আজ পর্যন্ত চলেছে চামরের ব্যবহার। তবে তা আজ শুধু ভক্তির উপকরণ। তবু এই হাইটেক যুগেও টিকে আছে চামরের ব্যবসা। |
|
নাখোদা মসজিদের কাছে রবীন্দ্র সরণি ও কলুটোলা স্ট্রিটের মোড়ের অদূরেই চোখে পড়বে বেশ কিছু চামরের দোকান। আর তার নিয়মিত ক্রেতাও আছেন।
তেমনই এক জন, সোমনাথ রায় বললেন, “সামনেই লক্ষ্মীপুজো। এখানে আসল চামর পাব জানি, তাই এসেছি।” সুন্দরবন থেকে আসা প্রাণকৃষ্ণ রায় বললেন, “বেশির ভাগ জায়গায় এখন পাওয়া যায় নকল চামর।” চামর ব্যবহারের কিছু রীতিনীতি আছে। যেমন কালো চামর ব্যবহার করা হয় শুধু কালী ও মনসা পুজোয়। মাজারে ব্যবহার করা হয় কালো চামর আর গুরুদ্বারায় সাদা। লাল সালুর ওয়াড় তৈরি করে দেওয়ালে টাঙিয়ে রাখতে হয় চামর। দেওয়াল ভিজে থাকলে বিপত্তি, চামরের লোম খসে পড়ে যাবে। তাই মাসে এক দিন রোদ খাওয়ানো দরকার।
এই অঞ্চলের চামরের দোকানগুলির সাইনবোর্ডে কিন্তু লেখা ‘উইগ হাউজ’। কেন? প্রায় চার পুরুষ ধরে চামরের ব্যবসায়ী মহম্মদ হুসেন বললেন, “শুধু চামর বিক্রি করে তো আর সারা বছর চলে না। পরচুলা বা উইগ, মেক-আপের দাড়ি-গোঁফও বিক্রি করতে হয়। পুজোপার্বণে আজও ভাল ব্যবসা হয় চামরের।” |
|
আর এক ব্যবসায়ী শেখ বাবুলাল আলি জানালেন, ব্যবসা আগের মতোই চলছে। দুর্গাপুজো থেকে জগদ্ধাত্রী পুজো পর্যন্ত রমরমিয়ে চলে বিক্রি। দোলেও কিছু বিক্রি হয়। দাম নির্ভর করে আমদানির উপর। তবে নকল নাইলনের চামরের দাম অনেক কম।
আসল চামর চমরি গাইয়ের লেজ থেকে তৈরি হয়। বছরে এক বার তিব্বত ও নেপাল থেকে চামর আসে এ শহরে। চামরের হাতল আগে রুপোর হলেও এখন জার্মান সিলভার ও পিতলের হয়। |
|
|
|
|
|