|
|
|
|
‘রুগ্ণ’ কাঁসাইয়ে সঙ্কট বিসর্জনে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় শুধু কৃষিকাজ নয়, সমস্যায় পড়ল দুর্গা বিসর্জনও। কংসাবতীর জলস্তর নেমে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছে মেদিনীপুর-খড়্গপুর দুই শহরেরই অধিকাংশ পুজো কমিটি। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমসিম দশা পুর-কর্তৃপক্ষের। এমনকী ঘাটের পাশে মাটি খুঁড়ে জল ধরে রাখার বন্দোবস্তও করতে হয় তাঁদের। মেদিনীপুরের পুরপ্রধান প্রণব বসু বলেন, “এ বার নদীতে জল কম থাকায় সমস্যা হয়েছে। ক্রেন দিয়ে প্রতিমার কাঠামো তুলতে হয়েছে। এমন পরিস্থিতি এই প্রথম।”
মেদিনীপুর শহরের গা ঘেঁষেই বইছে কাঁসাই। নদীর এক দিকে সদর শহর, অন্য দিকে খড়্গপুর গ্রামীণ এলাকা। কিছু দূরে রেলশহর খড়্গপুর। ফলে প্রতি বছরই দুই শহরের অধিকাংশ প্রতিমা কাঁসাই নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয়। পুর-কর্তৃপক্ষ সব রকম ব্যবস্থাও করেন। মেদিনীপুরের গাঁধীঘাটে আলোর ব্যবস্থা করা হয়, পুরকর্মীরা শিবির করেন। এ বারও সেই সব ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু নদীর পরিস্থিতি ছিল অন্য বারের থেকে আলাদা। ঘাট থেকে জলস্রোতের ফারাক ছিল অনেকটা। ফলে প্রতিমা বিসর্জন দিতে এসে সমস্যায় পড়তে হয় অধিকাংশ পুজো কমিটিকে। গাঁধীঘাট এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর মৃণাল চৌধুরী বলেন, “ঘাটের কাছে জল একেবারে নেই বললেই চলে। নদীতে দিন দিন যেন জল কমছে। নবমীর দিন গিয়েও পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে এসেছিলাম। সেই দিন যেখানে জলস্রোত দেখেছি, দশমীর দিন গিয়ে দেখলাম জলস্রোত আরও দূরে চলে গিয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “পুজো উদ্যোক্তাদের সুবিধার্থে ক্রেন রাখা হয়েছিল। তা দিয়েই প্রতিমার কাঠামো তোলা হয়েছে। সমস্যা হয়েছে। তবে আমরা সব রকম ভাবে সহযোগিতার চেষ্টা করেছি।” |
|
— নিজস্ব চিত্র। |
কাঁসাই বৃষ্টির জলে পুষ্ট নদী। ফলে বর্ষা ফুরোলে জলস্তর এমনিতেই কমতে থাকে। গ্রীষ্মে অনেক এলাকায় জল শুকিয়ে যাওয়ায় বছরের অধিকাংশ সময় চাষের কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই বর্ষায় স্বাভাবিকের তুলনায় কম বৃষ্টি হওয়ায় সমস্যা হল বিসর্জনেও। গত ১০ বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী মে মাসে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমান ১২৭.২ মিলিমিটার। এ বছর তা দাঁড়িয়েছে ৫২.৭ মিলিমিটারে। জুন মাসে ২৬৬ মিলিমিটারের পরিবর্তে বৃষ্টি হয়েছে ১২৫ মিলিমিটার। অগস্ট মাসে গড় বৃষ্টিপাতের থেকে ৩১ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে। সেপ্টেম্বরেও ২৩ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে। ফলে নদীতে জল কম থাকায় এ বছর মেদিনীপুর-খড়্গপুরের প্রায় ৩০০টি পুজোর মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রতিমা পুকুরে বিসর্জন হয়েছে। পরিস্থিতির কথা মেনে মেদিনীপুরের পুরপ্রধান পারিষদ (কনজারভেন্সি) সুনন্দা খান বলেন, “নদীতে একহাঁটু জল রয়েছে। ফলে পুজো উদ্যোক্তাদের সমস্যায় পড়তে হয়েছে। কয়েকটি প্রতিমা শহরের পুকুরগুলিতে বিসর্জন হয়েছে বলে শুনেছি। পুকুরগুলি পরিষ্কারের বন্দোবস্ত করা হবে।” প্রায় একই বক্তব্য খড়্গপুরের পুরপ্রধান পারিষদ (কনজারভেন্সি) কমল কুণ্ডুরও। তিনি বলেন, “শহরের যে সব পুকুরে প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে, সেগুলি পুরসভার পক্ষ থেকে পরিষ্কার করার ব্যবস্থ করা হবে।” মেদিনীপুর শহরের নন্দীবাড়ির দুর্গা প্রতিমা প্রতি বছরই কাঁসাই নদীতে বিসর্জন হয়। এ বারও তাই হয়েছে। পরিবারের সদস্য জয়দীপ নন্দী বলেন, “এ বার যে সমস্যা হয়েছে, অনান্য বার তা হয় না। ঘাটের কাছে জলই নেই। এ বার যাঁরাই গাঁধীঘাটে প্রতিমা বিসর্জন দিতে গিয়েছেন, সকলেই কমবেশি সমস্যা পড়েছেন।” |
|
|
|
|
|