|
|
|
|
ছেলেদের বিশ্রাম দিয়ে বিজয়ার দায়িত্বে মেয়েরা |
সুমন ঘোষ • মেদিনীপুর |
দুর্গাপুজো শেষ হয়ে গেলেও পাড়ায় পাড়ায় এখনও চলছে উৎসবের রেশ। চলছে বিজয়া সম্মিলনীর পালা। কিন্তু পুজোর দায়িত্ব সামলে আবার এই অনুষ্ঠান আয়োজনের দায়িত্ব কাঁধে নেওয়া তো মুখের কথা নয়। তাই প্রতিবার এই দায়িত্বটা কাঁধে তুলে নেন মেয়েরাই। শরৎপল্লি সৃজনী সোশিও কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনে এটাই রীতি। পাড়ার মহিলাদের মতে, অফিস-কাছারি-ব্যবসা সামলে চার দিনের পুজোর যাবতীয় দায়িত্ব যদি ছেলেরা নিতে পারে, তাহলে মেয়েরাই বা কম কিসে। তাই তাঁরাও এ বার ঘর-গেরস্থালি, অফিস, হাসপাতাল সামলে এগিয়ে এসেছেন বিজয়া সম্মিলনীর প্রস্তুতিতে। |
|
ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
পেশায় শিক্ষিকা সুপ্রিয়া চক্রবর্তী, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডেপুটি নার্সিং সুপারিন্টেন্ডেন্ট মৌসুমী গঙ্গোপাধ্যায়, গৃহবধূ স্বাতী কোলে, মহুয়া মুখোপাধ্যায়, সুকৃতি চট্টোপাধ্যায়, পূর্ণিমা ঘোষ, বর্ণালী বেরারা পুরোদমে শুরু করে দিয়েছেন বিজয়া সম্মিলনীর প্রস্তুতি। পাড়ার ছেলেদের তাঁরা বললেন, “বিজয়া সম্মিলনীর দায়িত্বটা আমরাই নেব। সেদিনের অনুষ্ঠানের যাবতীয় কাজ সামলাবো আমরাই। পুজোর হাড়ভাঙা খাটুনি শেষে ওই দিন তোমরা (পুরুষেরা) শুধুই আনন্দ করবে।” তাঁরাই জানালেন, প্রতিবারই দশমীর পর কোনও একটা দিন পুজো মণ্ডপেই মঞ্চ তৈরি করে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এবারেও নাচ, গান, আবৃত্তি তো থাকবেই সঙ্গে থাকবে ভানু সিংহের পদাবলী, শ্রীরাধার মান ভঞ্জন। কী অনুষ্ঠান হবে, কে, কোন গান গাইবে, নৃত্যনাট্যে কে,কোন ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে–এসবও ঠিক করছেন মেয়েরাই। তবে শুধু সবাইকে জানিয়ে দিয়েই ক্ষান্ত নয়, রীতিমতো অনুষ্ঠানের মহড়া চলে। প্রশিক্ষকের ভূমিকাতেও সেই মহিলারাই। একটানা স্কুলের ক্লাস নেওয়ার মাঝখানে এটাতেই আনন্দ খোঁজেন সুপ্রিয়াদেবী। নার্সের একটানা চাকরির মাঝে নিজের মনের টানেই এখনও সিন্থেসাইজার বাজান মৌসুমীদেবী। অনুষ্ঠানেও তাতে সুর তুলবেন তিনি। রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী সুকৃতিদেবী গান গাইবেন। বাদ পড়বেনা ছোটরাও। স্কুল, কলেজ পড়ুয়া ঐশী চক্রবর্তী, সায়ন্তনী ভৌমিক, সুকন্যা রায়রাও যোগ দেবে এই অনুষ্ঠানে। কেউ নাচে, গানে বা নৃত্যনাট্যে। তবে অনুষ্ঠানের দখল কিন্তু শুধু মেয়েদেরই। সঞ্চালনা থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ সবই করবেন তাঁরা। ছেলেরা কাজ শুধু নিশ্চিন্তে বসে অনুষ্ঠান উপভোগ করা। কারণ পুজোর চার দিনের চাঁদা তোলা, প্যাণ্ডেল-মাইক ভাড়া করা, প্রতিমার বায়না দেওয়া, ভিড় সামলাতে স্বেচ্ছাসসেবক রাখা, পুরোহিত, প্রসাদ তৈরি–সমস্ত ঝক্কিই সামলেছেন তাঁরা। তাই পুজো শেষে সম্মিলনীটা মেয়েদের। অনুষ্ঠান দেখতে শুধু এলাকার মানুষ নন, পাশাপাশি অনেক এলাকা থেকেই বহু মানুষ ভিড় জমান। মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠান সূচনার পরে কোরাস এবং ধীরে ধীরে মূল অনুষ্ঠানের দিকে এগিয়ে চলা হবে এ দিন। সব শেষে থাকবে পাড়ার সকলে মিলে খাওয়া দাওয়া। সুপ্রিয়াদেবীর কথায়, “এটাই আমরা চালিয়ে যেতে চাই। এতে পরিশ্রম হয় না। মনে হয়, বছরভরের ক্লান্তি যেন ধুয়ে গেল।” এই সম্মিলনী থেকে পরের বছরের জন্য নতুন উদ্যমে এগিয়ে চলার শক্তি পান তাঁরা। |
|
|
|
|
|