দলীয় আপ্ত সহায়কের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন উত্তরপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক অনুপ ঘোষাল। আর ওই ঘটনাকে ঘিরে হুগলি জেলা তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ফের প্রকাশ্যে এসেছে।
উত্তরপাড়া থানায় করা অভিযোগে অনুপবাবু দাবি করেছেন, তাঁর আপ্ত সহায়ক কালাচাঁদ বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে কালা সরকারবিরোধী এবং দলবিরোধী কাজের পাশাপাশি তোলাবাজি এবং বেআইনি কার্যকলাপের সঙ্গেও জড়িত। যদিও জেলা তৃণমূলেরই একাংশের দাবি, কালাচাঁদবাবুর বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে অভিযোগ করেছেন সঙ্গীতশিল্পী অনুপবাবু। আরও অভিযোগ, অষ্টমীর রাতে কালাচাঁদবাবুর বাড়িতে চড়াও হয়ে ভাঙচুরও চালান বিধায়কের অনুগামী উত্তরপাড়া পুরসভার দুই তৃণমূল কাউন্সিলরের দলবল। ঘটনার পরেই কালাচাঁদবাবু তাঁর অসুস্থ মাকে নিয়ে এলাকা ছেড়েছেন।
কালাচাঁদবাবুর অভিযোগ, “মায়ের বুকে পেসমেকার বসানো। কিন্তু, তাঁকেও রেয়াত করেনি হামলাকারীরা। মাকে গালিগালাজ করে তারা। মা হাতজোড় করে ক্ষমা চাওয়ার পরে ওরা চলে যায়।” পুলিশে কেন অভিযোগ করেননি? তাঁর মন্তব্য, “আপাতত দলকেই সব জানিয়েছি।” জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “বিধায়ক থানায় একটা অভিযোগ করেছেন। পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে।
অনুপবাবু থাকেন কলকাতায়। বারবার মোবাইলে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। শেষে শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁর মেয়ে অনুপমা ঘোষাল ফোনে বলেন, “এ ব্যাপারে উত্তরপাড়া পুরসভার ভাইস-চেয়ারম্যান পিনাকী ধামালি অথবা দুই কাউন্সিলর সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও সুমিত চক্রবর্তীর (টুকাই) সঙ্গে যোগাযোগ করুন। কারণ, উত্তরপাড়া এলাকায় ওঁরাই বাবার কাজ দেখাশোনার দায়িত্বে আছেন।” পিনাকীবাবুর বক্তব্য, “কালাচাঁদ চোর নন। তোলাবাজও নন। তবে, ওঁর কাছে কিছু কাগজপত্র আছে, যা বিধায়ক বারবার চেয়েও পাননি। সে জন্যেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তা ছাড়া, দলীয় কর্মীদের সঙ্গে কালাচাঁদের দুর্ব্যবহার নিয়ে আগেও অভিযোগ এসেছে।’’ পিনাকীবাবু এ কথা বললেও হুগলি জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্ত বলেন, “অনুপবাবু অত্যন্ত অন্যায় করেছেন। কালা আমাদের পুরনো ছেলে। সৎ। ওঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করার আগে বিধায়কের ভাবা উচিত ছিল।” দলের জেলা কার্যকারী সভাপতি দিলীপ যাদবও বলেন, “কোনও বিধায়ক যদি মনে করেন দলের কেউ কিছু দেখছে না, তা হলে ভুল করছেন। দলীয় স্তরে সকলে ভূমিকাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দলের কর্মীর বাড়িতে চড়াও হওয়া, তাঁর মাকে হেনস্থা করাএ সব কিন্তু দল সহ্য করবে না! পুলিশকে কড়া ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।” একই সুরে উত্তরপাড়া শহর তৃণমূলের সভাপতি তাপস মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “বিধায়কের কন্যা আমার কাছে দলের দীর্ঘদিনের সৎ কর্মী কালাচাঁদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানাতে এসেছিলেন। আমি তা নিইনি।” বস্তুত, দলীয় বিধায়কের বিরুদ্ধে ক্ষোভ রয়েছে তৃণমূলের একটা বড় অংশেই। তাপসবাবুর অভিযোগ, “পুর এলাকার উন্নয়নে বিধায়ক তাঁর তহবিলের টাকা খরচে দলীয় স্তরে ন্যূনতম আলোচনার প্রয়োজন বোধ করেননি। ভোটে জেতার পরে অনুপবাবু কত দিন এসেছেন উত্তরপাড়ায়? তিনি কাউকে সমাজবিরোধী, তোলাবাজ বললে আমরা মানব কেন?” উত্তরপাড়া পুরসভার চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল ইন্দ্রজিৎ ঘোষ বলেন, “দলের শীর্ষ নেতা মুকুল রায়কে জানিয়েছি। অন্যের সমালোচনা করার আগে নিজেদের দিকে তাকানো উচিত।” |