ভারতে ব্যবসা চালাতে শেষ পর্যন্ত নতুন সঙ্গী বেছে নিল টেলিনর। আগের সঙ্গী ইউনিটেকের সঙ্গে গাঁটছড়া ভাঙাকে ঘিরে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল, এতে অবসান ঘটল তারও। এ বার টেলিনরের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে সামিল হচ্ছে সুধীর ভালিয়ার সংস্থা লক্ষদীপ ইনভেস্টমেন্টস অ্যান্ড ফিনান্স। ওই গাঁটছড়ায় তৈরি নতুন সংস্থার নাম টেলিউইংস কমিউনিকেশন্স।
টেলিনরের হাত ধরেই টেলিকম শিল্পে পা রাখছেন সান ফার্মাসিউটিক্যালস-এর এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর সুধীর ভালিয়া। দেড় দশকেরও বেশি সময় সান-ফার্মার সঙ্গে যুক্ত ভালিয়া ওই সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর দিলীপ সাংভির শ্যালক। টেলিনরের অবশ্য দাবি, ভালিয়া ‘ব্যক্তিগত’ ভাবে এই লগ্নি করছেন।
টেলিউইংস কমিউনিকেশনের ২৬% শেয়ার হাতে নিচ্ছেন ভালিয়া। তবে এ জন্য কত টাকা তিনি উপুড় করেছেন, তা নিয়ে কোনও পক্ষই মুখ খোলেনি। টেলিনর শুধু জানিয়েছে, ভালিয়া টেলিউইংস-এর ইক্যুইটির একাংশ নিতে রাজি হয়েছেন। নয়া যৌথ সংস্থায় টেলিনরের হাতে ৭৪% শেয়ার তো থাকবেই, সেই সঙ্গে সংস্থা পরিচালনার রাশও নিজেদের হাতেই রাখছে তারা।
‘ব্যক্তিগত’ ভাবে লগ্নি করলেও, ভালিয়ার টেলিকম শিল্পে লগ্নির সঙ্গে অনেকেই আর এক ওষুধ সংস্থা পিরামল গোষ্ঠীর কর্তা অজয় পিরামলের মিল দেখছেন। সম্প্রতি পিরামল হেলথ্কেয়ার ভোডাফোনে লগ্নি করেছে। যদিও অজয় পিরামলের দাবি, এটা তাঁদের স্বল্পমেয়াদি লগ্নি পরিকল্পনার অঙ্গ মাত্র।
প্রসঙ্গত, দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৮-এ নিলাম হওয়া আটটি সংস্থার ১২২টি লাইসেন্স গত ফেব্রুয়ারিতে বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই তালিকায় ছিল টেলিনর ও ইউনিটেকের যৌথ সংস্থা ইউনিনরের লাইসেন্সও। তবে টেলিনরের দাবি ছিল, তারা নিয়ম মেনেই এ দেশে লগ্নি করেছে। বরং এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ার দায় অনেকটাই ইউনিটেকের উপর চাপিয়ে দিয়েছিল তারা। এই টানাপোড়েনের জল অনেক দূর পর্যন্ত গড়ায়। আলোচনা হয় দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে। অন্য গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের মধ্যেও দফায় দফায় বৈঠক হয়।
এর পর টেলিনর জানায়, এ দেশে ব্যবসা করলেও তারা আর ইউনিটেকের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধবে না। নতুন সঙ্গীর জন্য সরকারি অনুমোদনের আবেদন জানায় তারা। তাতে আপত্তি তোলে ইউনিটেক। কয়েক মাস এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব চললেও শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়, ইউনিনরে ইউনিটেকের ৩২.৭৫ শতাংশ অংশীদারি কিনে নেবে টেলিনর। এবং ইউনিটেকের যাবতীয় সম্পত্তি নিয়ম মেনে চলে যাবে তৈরি হওয়া নতুন সংস্থার হাতে। এরই মধ্যে নয়া সঙ্গী খোঁজা শুরু করে দেয় টেলিনর। বাতিল লাইসেন্সের নিলাম হবে ১২ নভেম্বর। সে জন্য ইতিমধ্যেই আবেদন করেছে টেলিনর। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী, কোনও টেলিকম সংস্থায় বিদেশি লগ্নির পরিমাণ ৭৪%-এ বেশি হলে চলবে না। ফলে ব্যবসা চালিয়ে যেতে শেষ পর্যন্ত কোনও ভারতীয় সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতেই হত টেলিনরকে। |