একপাশে সিকিমের গ্যাংটক, অন্যপাশে পাকইয়ং-র পাহাড়ি ঢাল। দুই-র মাঝে অপরূপ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর মনোরম সারমসা এলাকা। রাজধানী গ্যাংটক থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে। প্রায় ১০ একর পাহাড়ি এলাকা ছড়িয়ে থাকা সৃদৃশ্য বাগান। নানান ধরণের অর্কিড, ফুলের সমাহার সারমসা বাগানে। চারদিকে পাহাড়ের ঢালে রয়েছে নানা সাজানো বাঁশ বাগান। এই সারসাতেই সরকারি উদ্যোগে আগামী বছরের শীতের শুরুতেই বসতে চলেছে উত্তর পূর্ব ভারতের অন্যতম আন্তর্জাতিক ফুল উৎসব। উল্লেখ্য, গত ২০০৮ সালে শেষবারের মত এই উৎসব হয়েছিল সিকিমে। সম্প্রতি সিকিমের কৃষি এবং উদ্যান পালন দফতরের তরফে একটি অনুষ্ঠানে ফুল উৎসবের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব কর্মা গিয়াৎসু। গত ২০০৮ সালে উৎসব তিনদিন হলেও এবারে চলবে পাঁচ দিন। উৎসবের জন্য তৈরি করা হচ্ছে আলাদা ওয়েবসাইটও। সিকিমের মুখ্যসচিব বলেন, “সিকিম বরাবরই প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। বর্তমানে সরকার জৈব সার ব্যবহার করে কৃষির উপর জোর দিচ্ছে। গোটা সিকিমের এই জৈব কৃষি প্রক্রিয়া ছাড়া আর অন্য কোনও উপায়ে চাষ করা হবে না। উৎসবে বিষয়টি জোরালো ভাবে তুলে ধরা হবে। পাঁচ বছর অন্তর অন্তর উৎসব এবার থেকে সিকিমে হবে।” সরকারি সূত্রের খবর, সিকিমের ২১০ হেক্টর জমিতে শুধুমাত্র ফুল চাষ হয়। তা ছাড়া রাজ্যের সম্পূর্ণ ভৌগলিক এলাকার ৮০ শতাংশই বন বিভাগের আওতাভুক্ত। তিস্তা, রঙ্গিত ভ্যালি অ্যালপাইন এবং সবুজ ঘাষের গালিচার জন্য বিশ্বখ্যাত। |
নানা ধরণের ফুল, গ্লাডিওলি, লিলিয়ামস, ফার্ন, মাঙ্গোলিয়া, রডডেনড্রন ছাড়া ৬০০ প্রজাতির অপূর্ব অর্কিডের চাষ হয় সিকিমে। গোটা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সিকিম থেকে অকির্ড-সহ ফুল পৌঁছায়। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এই জৈব কৃষি ব্যবস্থাকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরে বিনিয়োগ টানাও এই উৎসবের অন্যতম লক্ষ্য বলে ওই রাজ্যের কৃষি দফতরের অফিসারেরা জানিয়েছেন। সিকিম সরকারের তরফে ২০১২-১৩ সালকে উদ্যান পালন বছর হিসাবে ঘোষণাও করে দেওয়া হয়েছে। সিকিমের কৃষি এবং উদ্যান পালন দফতরের সচিব শান্তা প্রধান বলেন, “শীতকাল সিকিম অকির্ড, ফুলে ভরে থাকে। বিভিন্ন ভ্যালি রামধনুর রঙের চেহারা নেয়। বহু পর্যটক এই সিকিমে আসেন। সেই দিকে নজর রেখেই ফেব্রুয়ারিতে উৎসব করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী উৎসবের প্রচার করা হবে। আমাদের আশা, দেশি, বিদেশি মিলিয়ে অন্ততপক্ষে দুই লক্ষ পর্যটক উৎসবে যোগ দেবেন।” উল্লেখ্য, সরকারি হিসাবেই গতবার আন্তর্জাতিক ফুল উৎসবে পর্যটকের সংখ্যা ছিল তিন দিনে প্রায় লাখ খানেক। ২৩ ফেব্রয়ারি, ২০১৩ সালে সারমসাতে উৎসবের সূচনা হবে। ২৫ জন আন্তর্জাতিক, ৩০ জন অন্য রাজ্যের এবং ১৯০ জন সিকিমের প্রতিযোগী উৎসবে অংশ নেবেন। মূলত অর্কিড, গ্লাডিওলি, গোলাপ, লিলি, ক্যাকটাস, অ্যালপাইন, ক্রেপার, ফার্ন এবং ভেষজ নানা প্রজতির গাছ-ফুল নিয়ে প্রতিযোগীরা উৎসবে যোগ দেবেন। সিকিমের কৃষি দফতরের এক আধিকারিক জানান, যে এলাকায় উৎসব করা হচ্ছে সেই সামরসা এলাকাটিও বিশ্ববিখ্যাত। ১৯২২ সালে সারমসা বাগান তৈরি হয়। প্রথমে ফল তার পরে ওষুধ তৈরির ভেষজ বাগান ছিল এলাকায়। পরবর্তীকালে অর্কিড বাগান গড়ে তুলে এলাকাটি মনোরম পিকনিক স্পট হিসাবে স্বীকৃতি পায়। পর্যটকেরা সিকিম এসে এখানে ঘুরতেও যান। |