কেউ বোনেন মাদুর, আবার কেউ বা পাট বা বাঁশ দিয়ে তৈরি করেন ঘর সাজানোর নানা উপকরণ। জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের বহু মানুষই এইসমস্ত শিল্প কর্মের উপর নির্ভর করে জীবন চালান। কিন্তু দিনে দিনে রুগ্ন হয়ে পড়ছে এই শিল্প। রাজ্যের ক্ষুদ্র শিল্প ও কুটির শিল্প মন্ত্রক যদিও মাঝে মাঝে এই শিল্পীদের সাহায্য করে, তবুও তা দিয়ে অভাব মেটে না। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান খুঁজতে, এই শিল্পকর্মগুলি বিপণনের স্থায়ী ব্যবস্থা করতে এ বার গ্রামীণ হাট তৈরিতে উদ্যোগী হল সরকার। পশ্চিম মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রামে এই হাট তৈরির জন্য ইতিমধ্যেই ৩ কোটি টাকা দিয়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার। জেলা পরিকল্পনা ও উন্নয়ন আধিকারিক প্রণব ঘোষ বলেন, “হাটের নক্সা তৈরি হয়ে গিয়েছে। দ্রুত গতিতে কাজ শেষ করতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”
জেলার বিভিন্ন জায়গাতেই ছড়িয়ে রয়েছে প্রাকৃতিক উপাদান। কোথাও হয় মাদুর কাঠির চাষ, যা দিয়ে রকমারি মাদুর বোনেন সবংয়ের মানুষ। কোথাও বাঁশ থেকে তৈরি হয় কলমদান, কৃত্রিম ফুল-সহ নানা সরঞ্জাম। শহরে শৌখিন মানুষদের কাছে এসবের কদর থাকলেও প্রত্যন্ত গ্রামের শিল্পীদের সেখানে পৌঁছনো মুশকিল। মাঝে মধ্যে বিভিন্ন সংস্থা বা সরকারি উদ্যোগে রাজ্যের কিছু জায়গায় হস্তশিল্প মেলা হয় ঠিকই, কিন্তু তা দিয়ে সারা বছরের জোগান হয় না। ফলে অনেক সময় নির্ভর করতে হয় দালালদের উপরে, যাঁরা গ্রাম থেকে কম দামে এই সমস্ত সামগ্রী শহরে নিয়ে যান এবং চড়া দামে বিক্রি করেন। স্থায়ী হাট তৈরি হলে সমস্যা অনেকটাই কমবে বলে আশা করছে প্রশাসন। হাট দেখভালের দায়িত্বে থাকবেন জেলা শিল্প কেন্দ্রের আধিকারিকেরা। এখানে দোকান দিতে পারবেন শিল্পী বা স্ব-সহায়ক দল। ফলে ক্রেতারাও তুলনায় কম দামে প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে সরঞ্জাম কিনতে পারবেন, লাভবান হবেন শিল্পীরাও। প্রশাসন সূত্রে খবর, একটি তিনতলা ভবন তৈরি হবে। থাকবে ১০৮টি স্টল। এছাড়াও গুদাম, ডরমিটরি-সহ যাবতীয় সুবিধেও থাকবে। এই ভবনেই থাকবে অফিসও। যেখানে জেলা শিল্প কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী বা আধিকারিকেরা গিয়ে বসবেন। যদি কোনও সংস্থা একসঙ্গে অনেক জিনিস কিনতে চান তাহলে সরকারি হস্তক্ষেপে নির্দিষ্ট দামে তা বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে বলেও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। চেষ্টা করা হবে উন্নত মানের শিল্পকলা ভিন রাজ্যে পাঠানোরও। তাতে জেলার শিল্পকলা যেমন ছড়িয়ে পড়বে তেমনি লাভবান হবেন গ্রামীণ শিল্পীরাও। এমনকী যাঁরা হতাশ হয়ে শিল্পকর্ম ছেড়ে রুজির সন্ধানে ঘুরে বেড়াতেন বা সারাদিন খেটেও দু’বেলা অন্ন সংস্থান করতে পারতেন না-তাঁরা উৎসাহের সঙ্গে আরও বেশি করে নানা শিল্পসামগ্রী তৈরি করবেন বলেই প্রশাসনিক কতার্দের অনুমান। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিকভাবে ঝাড়গ্রামেই এই হাট তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এতে সাফল্য মিললে পরবর্তীকালে অন্যত্রও এরকম হাট তৈরিতে উদ্যোগী হবে প্রশাসন। |