গভীর রাতে স্ত্রীকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে খুন করার পর মেয়েদেরও মারার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ এক বেসরকারি ব্যাঙ্কের অফিসারের বিরুদ্ধে। বড় মেয়ে আহত অবস্থায় বোনকে নিয়ে কোনওক্রমে ফ্ল্যাটের বাইরে বার হয়ে অন্য আবাসিকদের ডেকে তোলে। আর সেই সময় নিজের বাঁ হাতের শিরা কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ওই ব্যাঙ্ক অফিসার। আশঙ্কাজনক অবস্থায় বর্তমানে শিলিগুড়ি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁকে স্ত্রীকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার গভীর রাতে শিলিগুড়ি থানার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে মহানন্দাপাড়ার একটি বহুতল আবাসনের ঘটনার। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম রিমা ঘোষ (৩২)। তাঁর স্বামী রাজীবকুমার ঘোষ শিলিগুড়ির ইসকন মন্দির রোডের একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের অফিসার। আদতে বিহারের বাসিন্দা এই দম্পতি তিন বছর যাবৎ ওই আবাসনে থাকছিলেন। এর আগে রাজীববাবু ওই ব্যাঙ্কের বিহারের কিসানগঞ্জ শাখায় কর্মরত ছিলেন। রীমাদেবী দুই মেয়েকে নিয়ে শিলিগুড়িতেই থাকতেন। বড় মেয়ে তনুষ্কা শহরের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। ছোট মেয়ে শিরিন প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। তাঁদের সঙ্গে ওই বাড়িতে পরিচারক রোহিত কুমারও থাকত। |
আবাসনের সামনে ভিড়।—নিজস্ব চিত্র। |
জানুয়ারি মাসে রাজীববাবুর মাথায় অস্ত্রোপচার হয়। তখন থেকেই তিনি হতাশায় ভুগতেন বলে অভিযোগ। তাঁর পরিবার সূত্রের খবর, ঠিকঠাক কাজকর্ম না করতে পারা ছাড়াও তিনি অনেক কিছু ভুলে যেতেন। এই অবস্থায় চাকরি চলে গেলে তিনি পরিবার নিয়ে কী করবেন এই হতাশা তাঁর মাথায় সবসময় ঘুরত। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানাচ্ছে, ব্যাঙ্কে বেশ কিছু ঋণ ছাড়াও কিছুদিন আগে তিনি একটি নতুন ফ্ল্যাট কেনার জন্য ঋণও নিয়েছিলেন। এই অবস্থায় তাঁর কিছু হলে স্ত্রী মেয়েদের নিয়ে কীভাবে থাকবেন তাই দিনরাত তিনি ভাবতেন। এমনকি, সবাই মিলে একসঙ্গে মরে গেলে কোনও সমস্যা থাকবে না বলেও সম্প্রতি তিনি বড় মেয়েকে বলেছিলেন। ঘটনার পর থেকে ছোট্ট মেয়ে দুটি কার্যত বাকরুদ্ধ। শিলিগুড়ি ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (সদর) ও জি পাল বলেন, “মানসিক অবসাদ থেকে ঘটনাটি ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে। মেয়ে দুটির সঙ্গেও কথা বলা হয়েছে। তদন্ত চলছে। রাজীববাবু ব্যাঙ্কের ঋণ, চাকরি, শারীরিক অবস্থা সব নিয়ে ভেঙে পড়েছিলেন মনে হচ্ছে। উনি সুস্থ হলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে।” পুলিশ তদন্তে জানতে পেরেছে, নবমী অবধি রাজীববাবু সপরিবারে ছুটি কাটান। দশমীতে রিমাদেবী পাড়ার মণ্ডপে বিজয়া দশমী করতে যান। অষ্টমীতে তাঁরা সন্ধিপুজোর ১০৮টি ফুলও দিতে যান। তখন রাজীববাবুর ব্যবহারে অসংলগ্ন কিছু ধরা পড়েনি। বাড়ির পরিচারক রোহিত জানিয়েছে, দশমীর দিন রাত ১০টা নাগাদ সকলে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। মাঝরাতে তনুষ্কা ডাকাডাকি করে। উঠতেই বলে বাবা মাকে মেরে ফেলেছে। দরজা খুলে দুই বোনকে নিয়ে বাইরে বার হই। তনুষ্কাই বলেছে, বাবা সকলে মিলে মরার কথা বলেছিল। ক’দিন আগেই ওই ধারাল অস্ত্রটি বাড়ির কাজের জন্য তিনি কিনে এনেছিলেন। ওই আবাসনেই থাকেন শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের সচিব অরূপরতন ঘোষ এবং জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কুন্তল গোস্বামী। দুই জনেই বলেন, “এত রাতে ছোট মেয়ে দুটিকে দেখে আঁতকে উঠি। ফ্ল্যাটের সামনে যেতেই দেখি রক্তে দু’টি ঘর ভেসে যাচ্ছে।” পুলিশ জানিয়েছে, তিন বেডরুমের ফ্ল্যাটের একটি ঘরে খাটের উপর রিমাদেবীর দেহটি পড়ে ছিল। পাশেই অচৈতন্য অবস্থায় রাজীববাবুর দেহটি পড়েছিল। |