|
|
|
|
নির্বিঘ্নেই মিটল বিসর্জনের দু’দিন |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
নির্বিঘ্নেই মিটেছে শারদোৎসবের দিনগুলি। প্রতিমা নিরঞ্জনের দু’দিনেও সেই ধারা বজায় থাকল। সুষ্ঠু ভাবেই বিসর্জনের শোভাযাত্রায় সামিল হলেন আট থেকে আশি। পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুকেশ কুমার জৈন বলেন, ‘‘বিজয়া দশমীর দিনেই জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৩০০ প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে। বৃহস্পতিবার বাকি প্রতিমা নিরঞ্জন হয়েছে। কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া জেলায় শান্তিপূর্ণ ভাবেই বিসর্জন পর্ব সম্পন্ন হয়েছে।”
জেলা পুলিশের হিসাব অনুযায়ী, পূর্ব মেদিনীপুরে এ বার প্রায় ৫৫০টি দুর্গাপূজা হয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি দুর্গাপ্রতিমার বিসর্জন হয়েছে বুধবার। দশেরা উপলক্ষে এ দিন সন্ধ্যায় নন্দকুমার ফুটবল ময়দানে ৪০ ফুট উঁচু রাবণবধের আয়োজন করেছিল স্থানীয় মহারাজা নন্দকুমার দুর্গাপুজা কমিটি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী, নন্দকুমারের বিধায়ক সুকুমার দে প্রমুখ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কোলাঘাটের অধিকাংশ পূজাকমিটির প্রতিমা বিসর্জন হয় রূপনারায়ণের গৌরাঙ্গঘাটে। পাঁশকুড়ার প্রতিমা বিসর্জন হয় কাঁসাই নদীতে।
দশমীর সন্ধ্যায় কাঁথি শহরের ক্যানেলপাড় ও সাধু জানার পুকুরপাড়ে শহরের বিভিন্ন সবর্জনীন পুজোর প্রতিমা নিরঞ্জনের পালা চলে গভীর রাত পর্যন্ত। হিম-পড়া রাতেও আবালবৃদ্ধবনিতার ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। দশমীর দিনেই অধিকাংশ পুজোকমিটির বিসর্জন হয়ে গিয়েছে বলে জানান কাঁথির মহকুমা পুলিশ অফিসার ইন্দ্রজিৎ বসু।
বুধবারই বিষাদের সুর ছেয়েছে শিল্পশহর হলদিয়াতেও। দুর্গাচকের বড় পুকুর, পাতিখালির নদীর ঘাট, টাউনশিপের ফেরিঘাটেই অধিকাংশ বিসর্জন হয়েছে। এ ছাড়াও গেঁওখালি, কুকড়াহাটি ঘাটে মহিষাদল, সুতাহাটা ব্লকের পুজোগুলির প্রতিমা নিরঞ্জন হয়েছে। তবে কোথাও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন এসডিপিও অমিতাভ মাইতি। এ দিনই টাউনশিপের হেলিপ্যাড ময়দানে রাবণ বধ অনুষ্ঠনের সূচনা করেন সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। অনুষ্ঠানে শুভেন্দু ঘোষণা করেন, ডিসেম্বরের চতুর্থ সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষিত শিল্প-বাণিজ্য মেলা হবে হলদিয়ায়।
পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রতিটি জায়গাতেই বিসর্জনের দিন ও সময় নির্দিষ্ট করে দিয়েছে পুলিশ। যাতে কোথাও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সে জন্য সর্বত্র পুলিশ মোতায়েন রাখা হচ্ছে। রবিবারও বিসর্জন চলবে। পুলিশ-প্রশাসনের আশা, সব মিলিয়ে নির্বিঘ্নেই মিটবে বিসর্জন পর্ব। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, “পুজোর দিনগুলিতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। মানুষ আনন্দ করেছেন নির্বিঘ্নে। একই ভাবে বিসর্জন প্রক্রিয়া শেষ করতে আমরা সব ধরনের পদক্ষেপ করছি।” মেদিনীপুর ও খড়্গপুরে প্রায় ৩০০টি পুজো হয়। তার মধ্যে সর্বজনীন পুজো যেমন রয়েছে, তেমন আছে পারিবারিক পুজোও। বুধবার অর্থাৎ দশমীতেই দুই শহরের ৫০টির মতো প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে। নদীতে জল না থাকায় কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ বার বৃষ্টি কম হওয়ায় কংসাবতীতে জল একেবারেই কম। ফলে, প্রতিমা সহজে জলের তলায় যাচ্ছে না। তবে নদীতেই যাতে প্রতিটি প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়, সে বিষয়ে পুলিশ ও পুরসভা সতর্ক। পুকুরে বিসর্জন না দেওয়ার জন্য প্রতিটি পুজো কমিটিকে আবেদন জানিয়েছে মেদিনীপুর পুরসভা। পুরপ্রধান প্রণব বসু বলেন, “নদীতে বিসর্জনের জন্য নির্দিষ্ট রাস্তার কথাও প্রত্যেককে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সকলেই নিয়ম মেনে প্রতিমা বিসর্জন দিক, এটাই আমরা চাই।” এ বার আবার মেদিনীপুর পুরসভার পক্ষ থেকেও শারদ-পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। পুরপ্রধানের কথায়, “পুরসভার পুরস্কার পেতে হলে যে শর্তটি মানা অত্যন্ত জরুরি তা হল, নিয়ম। যে সব পুজো কমিটি নির্দিষ্ট রাস্তা দিয়ে যাবে না, যাদের শোভাযাত্রায় গণ্ডগোল হবে, তাদের প্রতিযোগিতা থেকে বাদ দেওয়া হবে।” |
|
|
|
|
|