মাত্র আট মাসের ব্যবধানে গর্বের একই ইতিহাস যে ফিরে আসবে, কে জানত!
দলীপ ট্রফি ফাইনালে আবার বাংলা ক্রিকেটারদের গর্জন। পূর্বাঞ্চলের ঘরে উপর্যূপরি দলীপ ট্রফি ঢুকে পড়া। সৃষ্টি এক অমর কীর্তির, যা আগে কখনও ঘটেনি। একান্ন বছর পর গত বার প্রথম দলীপ জয়, এ বার আবার। তাতে তফাত কত দিনের? না, আট মাস! এবং ফেব্রুয়ারির ইনদওর যদি ঋদ্ধিমান সাহার মহানায়কোচিত ইনিংস দেখে থাকে, বৃহস্পতিবারের চিপক দেখে নিল বাংলার দুই স্পিনারের পুনর্জন্ম। এঁরা--অনুষ্টুপ মজুমদার এবং ইরেশ সাক্সেনা। চিপকে যাঁদের স্পিনের ফাঁসে দমবন্ধ হয়ে গেল মহম্মদ কাইফের মধ্যাঞ্চলের।
পুনর্জন্মের কারণ, বাঁ-হাতি ইরেশ এই মুহূর্তে বাংলার এক নম্বর স্পিনার হলেও তাঁর স্পিনে বিশেষ কারও ভরসা ছিল না। চলতি মরসুমেও নির্বাচক এবং সিএবি কর্তাদের বলতে শোনা গিয়েছে, রঞ্জিতে ভাল স্পিনারের অভাব ভোগাতে পারে বাংলাকে। সেই ইরেশের নামের পাশে দলীপ ফাইনালে পাঁচ উইকেট। মাত্র ৫৮ রানে। কী বলবেন এ বার? প্রশ্ন শুনে ফোনে হাসেন ইরেশ। “কিছুই না। আমি ও সবে পাত্তা দিই না। আজ পাঁচটা নিয়েছি। আবার নেব।”
তবু সেটা ক্রিকেটমহলের হজম হচ্ছে। কিন্তু অনুষ্টুপ? এত দিন ক্রিকেটমহল জানত, তিনি মূলত ব্যাটসম্যান, দরকারে কিপিংটাও করেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার কাইফদের বিরুদ্ধে চার উইকেট (৪-২৯) তাঁর নামের পাশে আরও একটা পরিচয় জুড়ে গেল। অনুষ্টুপ যে লেগ স্পিনার হিসেবে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন, ক’জনই বা জানতেন? |
পূবার্ঞ্চলকে ট্রফি দিলেন বাংলার যে দুই স্পিনার।
ইশাঙ্ক জাগ্গির সঙ্গে অনুষ্টুপ (বাঁ দিকে) ও ইরেশ। ছবি: পিটিআই |
“ভেবেছিলাম বোলারই হব। দ্বিতীয় ডিভিশনে বলও করেছি। কিন্তু পাকেচক্রে হলে গেলাম ব্যাটসম্যান,” চেন্নাইয়ের হোটেল থেকে ফোনে বলছিলেন অনুষ্টুপ। গত বারের দলীপ চ্যাম্পিয়ন টিমেও যিনি ছিলেন। একটু থেমে ফের যোগ করলেন, “আজ বিশেষ ভেবেচিন্তে নটরাজ আমাকে বল দেয়নি। ওদের রান তখন বাড়ছে। ক্যাপ্টেন বলল, চেষ্টা করে দেখো এক বার। প্রথম ওভারেই উইকেট পেলাম, পরে গুগলিতে এল আরও দু’টো।”
গত বার বাংলার যে চার জন পূর্বাঞ্চলকে দলীপ দিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে সামি আহমেদ এবং ঋদ্ধিমান সাহা এ বার ছিলেন না। কিন্তু তাতে কী? পূর্বাঞ্চল ক্রিকেটাররা যেন ধরেই রেখেছিলেন, ফাইনাল পর্যন্ত যখন যাওয়া গিয়েছে, ট্রফি এ বারও আসছে! অশোক দিন্দাকেই ধরা যাক। যিনি ফোনে সাফ বলে দিচ্ছেন, “কথা দিয়েছিলাম ট্রফি নিয়ে পুজোর পর কলকাতা ঢুকব। সেটা কিন্তু ঢুকছি।” অনুষ্টুপ আবার ধরিয়ে দিলেন, “গত বারেরটা অনেকের মনে হয়েছিল, ফ্লুক। এক বার হয়ে গিয়েছে। এ বারও আমাদের বিশেষ কেউ ধরেনি। মধ্যাঞ্চলে অতগুলো ইন্ডিয়া প্লেয়ার।” পাশ থেকে তখন ফুট কাটছেন ইরেশ, “কিন্তু ঘটনা হল, ওরা ভাল টিম হয়েও স্রেফ স্পিরিটেই উড়ে গেল আমাদের কাছে। আমাদের জেদকে সামলাতে পারল না।”
ঘটনা। ঝাড়খণ্ডের ইশান্ত জাগ্গির সেঞ্চুরি পূর্বাঞ্চলকে ২৩২-এ পৌঁছে দিলেও সেটা স্বস্তির স্টেশন কখনও ছিল না। বরং তন্ময় শ্রীবাস্তব (৯৪) ভালই এগোচ্ছিলেন। কিন্তু ওই যে, ইরেশ-অনুষ্টুপদের ‘জেদ’। ফেব্রুয়ারির দলীপ ফাইনাল শেষ করতে ঋদ্ধিমানদের লেগেছিল সাড়ে তিন দিন। অনুষ্টুপদের লাগল আরও কম। মাত্র আড়াই দিন! মাঝে বৃষ্টিতে ম্যাচ বন্ধ থেকেছে। শেষ পর্যন্ত ট্রফি এল প্রথম ইনিংসে এগিয়ে থাকার সুবাদে।
ম্যাচের আগে প্র্যাক্টিস নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে দিন্দাদের। কিন্তু তাতে পূর্বাঞ্চলকে আটকানো যায়নি। সিএবি ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, রঞ্জিতে বাংলার প্রথম ম্যাচের সময় পূর্বাঞ্চলের তিন বঙ্গ-ক্রিকেটারকে বিশেষ চা-চক্রে ডাকা হবে। দেওয়া হবে ব্লেজার এবং এক লক্ষ টাকা আর্থিক পুরস্কার। কিন্তু দলীপ জয়ের জাঁকজমক নয়, অনুষ্টুপদের চোখ আটকে এখন রঞ্জিতে। দশ দিনের মধ্যে টুর্নামেন্ট শুরু। অনুষ্টুপ বলেও দিলেন, “পূর্বাঞ্চলের হয়ে যা চেয়েছিলাম হয়েছে। মনে হচ্ছে, এ বার বাংলার হয়ে রঞ্জিটাও হবে।”
কী দাঁড়াল? শহরে বিসর্জনের সুর বাজতে পারে। কিন্তু বাংলা ক্রিকেটে সবে বোধনের রং!
সংক্ষিপ্ত স্কোর: পূর্বাঞ্চল ২৩২ ও ৮-০ (ইশাঙ্ক জাগ্গি ১০০, জলজ সাক্সেনা ৫-৬২)
মধ্যাঞ্চল ১৮৯ (তন্ময় শ্রীবাস্তব ৯৪, ইরেশ ৫-৫৮, অনুষ্টুপ ৪-২৯, দিন্দা ০-৪২)। |