|
|
|
|
দশেরার রোশনাইয়ে ভাসল দুই শহর |
নিজস্ব সংবাদদাতা • খড়্গপুর |
উৎসব ফুরোয় না। দশমীর বাতাসে যখন বিদায়-বিষাদের সুর, বাঙালি মন ভারাক্রান্ত, তখনই দশেরা ঘিরে নতুন করে উৎসবে মাতে রেলশহর খড়্গপুর। রাবণ পোড়া দেখতে জড়ো হন হাজার হাজার মানুষ। এ বারও তার ব্যত্যয় হল না। দশেরা উৎসবে গা ভাসালেন ছোট-বড় সকলেই। রাবণ পোড়া ঘিরে উৎসাহে মেতেছে মেদিনীপুরও। সর্বত্র একটাই প্রার্থনা, অশুভকে হারিয়ে জয়ী হোক শুভ শক্তি।
শুরুটা হয়েছিল সেই ১৯২৫ সালে। ক্রমে দিন বদলেছে। বদলেছে উৎসবের রং। তবে দশমীতে রাবণ পোড়া ঘিরে একই রকম সরগরম রেলশহর। গিরি ময়দান এলাকার অদূরেই রাবণ পোড়া মাঠ। বুধবার এখানেই হাজার হাজার মানুষের ঢল নেমেছিল। সকাল থেকে একটু একটু করে ভিড় জমতে থাকে মাঠে। দুপুরের মধ্যে গোটা মাঠ উপচে পড়ে। দশেরা উৎসব কমিটির এক কর্তা বলছিলেন, “এই উৎসবের আনন্দই আলাদা। শহর ও শহরতলি থেকে কত মানুষ আসেন। আনন্দ করেন। এটা দেখতেই ভাল লাগে।” ‘মিনি ইন্ডিয়া’ খড়্গপুরে বহু ভাষাভাষি মানুষের বাস। শহরের একটা বড় অংশ জুড়েই রয়েছে রেল এলাকা। কর্মসূত্রে বহু অবাঙালি এখানে থাকেন। তাই যে কোনও উৎসবেই চোখে পড়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। রাবণ পোড়াও ব্যতিক্রম নয়। |
|
খড়্গপুরে রাবণ পোড়া। নিজস্ব চিত্র |
প্রস্তুতিটা শুরু হয়েছিল কয়েকদিন আগেই। নিউ সেটেলমেন্টের একটি ফাঁকা জায়গায় তৈরি হয়েছে রাবণের মুখোশ। মুখোশের মধ্যে থাকে আতসবাজি। তিরের আগুন রাবনের বুকে এসে লাগে। ক্রমে আগুন ছড়ায় দশাননের সর্বাঙ্গে। পুড়ে ছাই হয় দশটি মাথা। পুরো এলাকা আলোর রোশনাইয়ে ভরে ওঠে। ধাপে ধাপে এমনটাই হল বুধবার। উৎসব প্রাঙ্গণে উপস্থিত ছিলেন খড়্গপুরের ডিআরএম রাজীব কুলশ্রেষ্ঠ, ডিআইজি (মেদিনীপুর রেঞ্জ) লক্ষ্মীনারায়ণ মিনা, পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী প্রমুখ। মূল অনুষ্ঠান শুরুর আগে গোলবাজারের রাম মন্দির থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বেরোয়। রেলশহরের মানুষের কাছে এই শোভাযাত্রা ‘আখড়া’ নামে পরিচিত। কয়েকটি এলাকা থেকে পৃথক আখড়া এসে পৌঁছনোর পর দল বেঁধে সকলে রাম মন্দির থেকে রাবণ পোড়া মাঠের উদ্দেশে রওনা হন। শুরু হয় অশুভ বিনাশের উৎসব। রাবণ পোড়া ঘিরে উৎসাহ-উদ্দীপনা চোখে পড়েছে মেদিনীপুরেও। শহর সংলগ্ন ঝর্নাডাঙায় প্রতি বছরের মতো এ বারও রাবণ পোড়া হয়েছে। সঙ্গে নতুন করে পালবাড়ি মাঠ ও অরবিন্দনগর মাঠে এই উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল। অরবিন্দনগর সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির উদ্যোগে এ বারই প্রথম রাবণ পোড়া হল। সঙ্গে আতসবাজির প্রদর্শনী। দুর্গোৎসব কমিটির অন্যতম সদস্য কার্তিক ধর বলেন, “কিছু প্রতিকূলতা ছিল। তা কাটিয়েই সুষ্ঠু ভাবে উৎসব সম্পন্ন হয়েছে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে উৎসবে সামিল হয়েছেন। পরের বছর আরও বড় করে এই উৎসবের আয়োজন করা হবে।” পালবাড়ি মাঠেও এ বার প্রথম রাবণ পোড়া হল। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুনন্দা খানের উদ্যোগে এবং এলাকার কয়েকটি ক্লাব ও সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির সহযোগিতায় এই আয়োজন। সুনন্দাদেবীর কথায়, “বহু মানুষ এসেছেন। উৎসবে সামিল হয়েছেন। এটাই ভাল লেগেছে। পরের বছর আরও বড় করে উৎসবের আয়োজন করা হবে।” |
|
|
|
|
|