নবমী। রাত সওয়া ১২টা। বৈদ্যবাটি চৌমাথা রীতিমতো জমজমাট।
১টা। জোড়া অশত্থতলার মণ্ডপ। গুটিকতক যুবক কোমর দোলাচ্ছেন ঢাকের তালে। পাশে চেয়ারে বসে কিশোরী থেকে গৃহবধূ। পা দোলাচ্ছেন তাঁরা। ঘণ্টা দেড়েক পরেও অবিকল একই দৃশ্য সেখানে।
রাত দেড়টা। বৈদ্যবাটির বেণী ব্যানার্জি লেনের মণ্ডপ। অনেকেই তখনও প্রতিমা দেখতে ঢুকছেন। রাতে ঠাকুরের টানে পথে বের হওয়া মানুষজনের কাছে পুলিশি নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে সেই ভাবে পড়েনি।
রাতে সময় গড়িয়েছে। রাস্তায় লোক চলাচল বেড়েছে। মহিলারাও নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়িয়েছেন। বৈদ্যবাটি চক থেকে শেওড়াফুলি বৌবাজার, ছোট বেলু থেকে তারাপুকুর, বটতলা থেকে মাহেশ দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে মোটরবাইকে চষে বেরিয়েছেন পুলিশকর্মীরা। কোথাও বচসার খবর পেলেই নিমেষের মধ্যে ছুটে গিয়েছেন খাকি উর্দিধারীরা। সব মিলিয়ে, নির্বিঘ্নে পুজো মেটায় পুলিশকে বাহবা জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।
ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে পুলিশকর্মীরা বাইকে চেপে এলাকায় ঘুরছিলেন। পুরসভা অথবা বিভিন্ন সংগঠনের স্বেচ্ছ্বাসেবকরাও লাঠি হাতে ভিড় সামাল দিচ্ছিলেন। এক-একটি মণ্ডপে তখন উপছে পড়ছে ভিড়। নবমীর রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মদ্যপদের ঝুটঝামেলা বাড়তে থাকে। ছোট বচসা বড় আকার নেয়। ভিড় ঠেলে গাড়ি নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছতে অনেকটা সময় লেগে যেত পুলিশের। এ বার ‘বাইক বাহিনী’র কল্যাণে অনেক তাড়াতাড়ি পৌঁছনো গিয়েছে।
পুলিশের সতর্ক চোখ ঢুঁ-মেরেছে নিষিদ্ধপল্লিতেও। গোলমাল সামলাতে গিয়ে এক জায়গায় বিক্রেতার হাড়িভর্তি ঘুঘনি উল্টে গেল। নিজের পকেট থেকে তাঁকে টাকা দিয়েছেন শেওড়াফুলি ফাঁড়ির ইন-চার্জ।
শুধু শ্রীরামপুর নয়, উত্তরপাড়া, চুঁচুড়া বা চন্দননগরের মতো শহরেও নির্বিঘ্নে কেটেছে পুজো। বস্তুত এ বার পুলিশ পরিকল্পনা নিয়েছিল কোনও বড় গাড়ি নয়, তাতে যানজট বাড়বে। পুলিশও দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারবে না। তাই মোটর বাইকে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে পুলিশ চুঁচুড়ার ঘড়ির মোড় রবীন্দ্রনগর, হুগলি মোড়, ব্যাণ্ডেল জুড়ে রাতভোর চক্কর কেটেছে। উত্তরপাড়া থানা এলাকার কোন্নগর, ভদ্রকালীতেও টহল চলেছে দিনরাত। উত্তেজনাপ্রবণ এলাকায় কোথাও আবার পুলিশ পিকেট। গ্রামাঞ্চলেও অশান্তি তেমন হয়নি। রাতভর শ্রীরামপুর, ডানকুনিতে থেকেছেন পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী কাজকর্ম তদারকি করতে। বিসর্জনকে ঘিরে জেলায় সেই ভাবে বড় কোনও ঘটনা ঘটেনি কোথাও। |