|
|
|
|
তদন্ত শুরুর পর গডকড়ীর বিদায় আসন্ন, নেতা কই |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
দুর্নীতির অভিযোগে কাঠগড়ায় দাঁড়ানো নিতিন গডকড়ীর বিদায় প্রায় নিশ্চিত। কিন্তু নতুন সভাপতি কে হবেন, তা নিয়েই সমস্যায় বিজেপি।
লোকসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেসের ‘দুর্নীতি’র বিরুদ্ধে যখন আরএসএস-বিজেপি সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইছে, সেই সময় খোদ বিজেপি সভাপতির বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সঙ্ঘ নেতারাও এখন আর গডকড়ীকে দ্বিতীয় বারের জন্য ওই পদে রাখতে চাইছেন না। গডকড়ীকে সঙ্ঘ নেতৃত্ব সে কথা বোঝাচ্ছেন। লালকৃষ্ণ আডবাণী-সহ বিজেপির শীর্ষ নেতাদেরও সে কথা জানিয়ে দিয়েছেন আরএসএসের শীর্ষ নেতৃত্ব।
যাঁরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ছেন, গত কাল বিজয়া দশমীর দিনে নাগপুরের জনসভাতেও সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত তাঁদের বাহবা দিয়েছেন। বিজেপির শীর্ষ সূত্রের মতে, সঙ্ঘ নেতৃত্ব বিজেপি নেতাদেরও জানিয়ে দিয়েছেন, গডকড়ীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় জনমানসে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। লালকৃষ্ণ আডবাণী ও সুষমা স্বরাজের মতো বিজেপির দুই শীর্ষ নেতা প্রথমে সভাপতির পাশে দাঁড়ালেও এখন গডকড়ীকে সরানোর পক্ষেই সওয়াল করেছেন।
গডকড়ীর পূর্তি গ্রুপের বেশ কয়েকটি সংস্থার বড়সড় আর্থিক অনিয়ম সামনে এসেছে। সন্দেহজনক সূত্র থেকে এই গোষ্ঠীর নানা সংস্থায় বিপুল বিনিয়োগ হয়েছে বলে অভিযোগ। বেশ কিছু ভুয়ো ডিরেক্টরও নিয়োগ করা হয়েছে। ‘পূর্তি পাওয়ার অ্যান্ড সুগার’ সংস্থার বিরুদ্ধে আপাতত তদন্ত শুরু করেছে আয়কর দফতর। ১৮টি ‘বেনামী’ কোম্পানি এই সংস্থায় প্রচুর অর্থ ঢেলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
আডবাণীর মতো গুরুত্বপূর্ণ নেতারা এখন সঙ্ঘ নেতৃত্বকে পরামর্শ দিচ্ছেন, আয়কর দফতর তদন্তে নেমে পড়ার পরে গডকড়ীকে এখনই ইস্তফা দিতে বলা হোক। কারণ তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত গডকড়ী পদ আঁকড়ে বসে থাকলে বিজেপির দুর্নীতি-বিরোধী আন্দোলন ধাক্কা খাবে। একই কারণে হাওয়ালার অভিযোগ ওঠার পরেই আডবাণী লোকসভা থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন। বিজেপি নেতা বলবীর পুঞ্জ তাই গডকড়ীর সমর্থনে মুখ খুললেও ঠারেঠোরে আডবাণীর সেই দৃষ্টান্তের কথাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন।
কিন্তু দল ও সঙ্ঘের কাছে এখন প্রধান প্রশ্ন, গডকড়ীর পরে কে?
বিজেপি সূত্রের মতে, বিতর্ক দানা বাধার আগে থেকেই গডকড়ীকে দ্বিতীয় বারের জন্য সভাপতি করায় আপত্তি ছিল অনেকের। এমনকী আডবাণী-সুষমাদেরও। কিন্তু গডকড়ী না হলে অরুণ জেটলি সভাপতি হয়ে যাবেন, এই কথা বলে সুষমাদের রাজি করিয়েছিল সঙ্ঘ। নতুন পরিস্থিতিতে জেটলি সভাপতি হতে রাজি হলেও আডবাণী বা সুষমাদের তাতে যথেষ্ট আপত্তি রয়েছে। সঙ্ঘ সুষমাকে সভাপতি করার প্রস্তাব দিলে আডবাণী হয়তো রাজি হবেন, কিন্তু সুষমা নিজে কতটা আগ্রহী হবেন, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ, সুষমা মনে করেন, এক বার সভাপতি হয়ে গেলে ভবিষ্যতে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্নে বাধা আসতে পারে।
আবার নরেন্দ্র মোদীকে অনেক দিন ধরেই কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে। কিন্তু সঙ্ঘকে নতুন সভাপতির ব্যাপারে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মোদী এখন ব্যস্ত গুজরাতের বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে। ফলে তাঁকে সভাপতি করার সম্ভাবনা বেশ কম।
বিজেপির এক নেতা বলেন, “বিজেপির নেতারা গডকড়ীকে সরিয়ে আসলে দলের মধ্যে আরএসএসের নিয়ন্ত্রণ কমাতে চান। কিন্তু সঙ্ঘ যদি বিজেপি নেতাদেরই সভাপতি বাছাই করতে বলেন, তা হলে নেতায়-নেতায় যা কোন্দল, তাতে কোনও এক জনকে বেছে নেওয়া অসম্ভব। যে লড়াইটা প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ের ক্ষেত্রে রয়েছে, সেটি সভাপতির বেলাতেও নতুন করে শুরু হবে।”
কারণ শুধু দ্বিতীয় প্রজন্মের নেতারাই নন, মুরলীমনোহর জোশীর মতো প্রবীণ নেতারাও এই পদের দিকে মুখিয়ে রয়েছেন।
বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ মনে করছেন, দলের মধ্যে নেতাদের এই খেয়োখেয়ির জন্য শেষ পর্যন্ত আরএসএসকেই হস্তক্ষেপ করতে হবে। তার পর গডকড়ীর মতোই আর এক জন অল্প পরিচিত ব্যক্তিকে এনে বসিয়ে দেবে সঙ্ঘ। তখন আর বিজেপি নেতাদের কিছু করার থাকবে না। আবার এই ডামাডোলে গডকড়ীই যদি দ্বিতীয় বার সভাপতি হয়ে যান, সেটাও অস্বাভাবিক কিছু নয়। |
|
|
|
|
|