|
|
|
|
প্রভাব বাড়বে রাহুলের |
ভাবমূর্তি রাখতে রদবদলই অস্ত্র মনমোহনের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
ইন্দিরা বা রাজীব গাঁধী এক সময় যা করতেন, এ বারে মনমোহন সিংহও হাঁটতে চাইছেন সেই পথে।
নানা সঙ্কটে জীর্ণ সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে মন্ত্রিসভার রদবদল করতে নামছেন মনমোহন সিংহ। আগামী রবিবারই হয়ে যেতে পারে বহু প্রতীক্ষিত সেই রদবদলটি। তফাত হচ্ছে, ইন্দিরা বা রাজীব যে পূর্ণ কর্তৃত্ব নিয়ে কাজটা করতেন, সেটা মনমোহনের নেই। সেখানে সনিয়া গাঁধীই শেষ কথা। তবে মনমোহনেরও নিজস্ব অভিমত রয়েছে। সনিয়া ও মনমোহনের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনার পর রদবদলের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হচ্ছে। কংগ্রেস সূত্রের খবর, শনিবার চূড়ান্ত তালিকা ঠিক করতে আর এক বার আলোচনায় বসতে পারেন সনিয়া গাঁধী ও মনমোহন সিংহ। রাহুল গাঁধীর পছন্দের বিষয়টি নিয়েও তখনই কথা হবে দু’জনের।
কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, শুধু সরকারের ভাবমূর্তি ফেরানোই নয়, সেই কাজ করতে গিয়ে রাহুল গাঁধীর উত্থানের মঞ্চ তৈরি করার চেষ্টাও হবে এই রদবদলে। কংগ্রেস নেতারা বলছেন, রদবদলে অনেকটাই প্রভাব থাকবে রাহুলের।
কী ভাবে ভাবমূর্তি ফেরাবেন মনমোহন? কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, যে সব মন্ত্রীর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে, তাঁদের ডানা ছাঁটা হতে পারে। যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তাঁদেরও সরানো হতে পারে। আবার রাহুলের ঘনিষ্ঠদের মন্ত্রিসভায় এনে বা পদোন্নতি ঘটিয়ে নবীন প্রজন্মকে এগিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে সদর্থক বার্তা পাঠানো হতে পারে। তবে অর্থ, স্বরাষ্ট্র, বিদেশ, প্রতিরক্ষার মতো প্রধান চারটি মন্ত্রকে কোনও হেরফের হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বিশেষ করে সংস্কার প্রশ্নে সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে অর্থ এবং বাণিজ্য, এই দুই মন্ত্রকে রদবদল মানে দেশ-বিদেশের বণিকমহলের কাছে আবার উল্টো বার্তা যাওয়া। সেটা কোনও ভাবেই হতে দিতে চান না মনমোহন। |
|
জুন থেকেই এই রদবদল হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছিল। কিন্তু রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য তা পিছিয়ে যায়। তার পর কয়লা কেলেঙ্কারি এবং তৃণমূলের সমর্থন প্রত্যাহারের জেরে সেটি আরও পিছোয়। অথচ গত দু’বছরে বিভিন্ন কারণে খালি হয়েছে একাধিক মন্ত্রক। যেমন, ডিএমকে-র দুই নেতা আন্দিমুথু রাজা ও দয়ানিধি মারান সরে গিয়েছেন। বিলাসরাও দেশমুখ মারা গিয়েছেন, ইস্তফা দিয়েছেন বীরভদ্র সিংহ। তার উপরে তৃণমূল বিদায় নেওয়ায় পাঁচটি প্রতিমন্ত্রীর পদ তো এমনিতেই খালি রয়েছে। এ সবের ফলে কোনও কোনও মন্ত্রীর উপরে বোঝাও বেড়েছে। যেমন, রেলের বাড়তি দায়িত্ব পড়েছে গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী সি পি জোশীর কাঁধে। এর মধ্যে এ বছরের মাঝামাঝি প্রণব মুখোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর চিদম্বরমকে অর্থ মন্ত্রকে ও সুশীলকুমার শিন্দেকে স্বরাষ্ট্রে নিয়ে আসেন প্রধানমন্ত্রী। তবে সেটা ছিল ছোট বদল।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, সি পি জোশীর ভার কমানো হতে পারে। এই তালিকায় আর রয়েছেন ভায়লার রবি, বীরাপ্পা মইলি, নারায়ণস্বামী, কুমারী শৈলজা, কপিল সিব্বল, সলমন খুরশিদ। তা ছাড়া, বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণকে সরাতে চেয়েছিলেন সনিয়া। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আপত্তি করেন। কপিল সিব্বল কিংবা সলমন খুরশিদের ডানা ছাঁটার ব্যাপারেও সনিয়া ও মনমোহনের মত ভিন্ন। তবে সরকারি সূত্রের মতে, সুবোধকান্ত সহায়, বেণীপ্রসাদ বর্মার মতো মন্ত্রীকে সরানো হতে পারে।
অন্য দিকে, দুই মন্ত্রী সরে গেলেও ডিএমকে সেই পদ পূরণে খুব আগ্রহী নন। সে ক্ষেত্রে ইউপিএ সরকারের অন্য জোট সঙ্গী শরদ পওয়ারের এনসিপি লাভবান হতে পারে। এনসিপি নেতৃত্ব ইতিমধ্যেই পূর্ণ সাংমার মেয়ে আগাথাকে মন্ত্রিসভা থেকে সরানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। সে ক্ষেত্রে সেখানে আসতে পারেন তারিক আনোয়ার। প্রজারাজ্যমের চিরঞ্জীবীকেও নেওয়া হতে পারে। তবে রদবদলের দিন সব থেকে বেশি নজর থাকবে রাহুল কতটা প্রভাব বিস্তার করলেন, তার উপর।
নিজেদের মধ্যে আলোচনার পরে মনমোহন এবং সনিয়া যেমন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক করেন, তেমনই রাহুলও দু’বার গিয়েছেন রাইসিনা হিলে। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান সত্ত্বেও সনিয়া-পুত্র মন্ত্রিসভায় যোগ দিতে উৎসাহী নন। তবে তাঁর ব্রিগেডের সদস্যদের প্রাধান্য দেওয়া হতে পারে। জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, সচিন পায়লট, আর পি এন সিংহ, জিতেন্দ্র সিংহ, জিতিন প্রসাদের মতো নবীনেরা, যাঁরা মনমোহন সরকারের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন, তাঁদের পদোন্নতি হতে পারে। আসতে পারেন রাহুল ঘনিষ্ঠ নতুন মুখও। নাম আছে মনীশ তিওয়ারিরও। পশ্চিমবঙ্গ থেকেও একাধিক মুখ আসতে পারেন মন্ত্রিসভায়। প্রদীপ ভট্টাচার্য ছাড়া মালদহ থেকে সংখ্যালঘু মুখ আবু হাসেম খান চৌধুরীও মন্ত্রী হতে পারেন। যুব কংগ্রেসের দায়িত্বে থাকায় মৌসম নুর এখনই মন্ত্রী হতে চান না। অধীর চৌধুরীকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি করা না হলে মন্ত্রিসভায় তাঁর কথাও বিবেচনা করা হতে পারে। তালিকায় রয়েছেন দীপা দাশমুন্সিও।
তবে প্রশ্ন হল, রদবদলের মাধ্যমে ভাবমূর্তি কতটা বদলাতে পারবেন মনমোহন। রাজনীতির ইতিহাস সম্পর্কে যাঁরা ওয়াকিবহাল, তাঁরা বলছেন, ইন্দিরা-রাজীবও সব সময় এই কাজে সফল হননি। মনমোহন কি হবেন? সেটা বলবে ২০১৪-র ভোট। |
|
|
|
|
|