|
|
|
|
উৎসবের শহর |
ছক বদলেই যানশাসনের পরীক্ষায় পাশ পুলিশ |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
নিম্নচাপের ভ্রূকুটি সরেছিল। রাজ্যে বিদ্যুৎ বাড়তি হওয়ায় লোডশেডিংয়ের সম্ভাবনা ছিল না বললেই চলে। কিন্তু পুজোর ক’দিন শহরের জনস্রোত আর যানবাহনের চাপ সামলাতে পুলিশ নাস্তানাবুদ হবে কি না, সেই আশঙ্কা থেকেই
গিয়েছিল। কারণ পঞ্চমীতেও ভিড় আর যানবাহন সামলানো নিয়ে বেশ কিছুটা জটিলতা ছিল। দেখা গেল, সেই পরীক্ষায় ভাল ভাবেই উতরে গেল কলকাতা পুলিশ। বাড়তি চাপ
সামলে উতরে দিল মেট্রো রেলও।
কী ভাবে সাফল্য পেল পুলিশ? কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের কর্তারা দাবি করছেন, কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় যথেচ্ছ ‘পার্কিং’ বন্ধ করা, সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত তরতাজা একটি বাহিনীকে মোতায়েন রাখা এবং বড় ট্রাফিক গার্ডের দক্ষ সার্জেন্টদের সকাল ১০টার মধ্যে রাস্তায় নামিয়ে দেওয়াই সাফল্যের মূল কারণ।
কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের কর্মীরা জানান, গত কয়েক বছর ধরে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গাড়িতে চেপে প্রতিমা ও মণ্ডপ ঘুরে দেখার ভিড়টা বেড়ে চলেছে। আগের কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে রাসবিহারী কানেক্টর, গড়িয়াহাট থেকে ঢাকুরিয়া, টালিগঞ্জ সার্কুলার রোড, সাহাপুর রোড, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার দু’দিকে অজস্র গাড়ি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকছে। তাতে রাস্তা সরু হয়ে যেত। আটকে যেত যানবাহন। সকাল থেকে যে যানজট হত, তা স্বাভাবিক হতে সন্ধে সাতটা বেজে যেত। আগের বছরের এই ‘ভুল’ থেকে শিক্ষা নিয়েই এ বার যান শাসনের পরিকল্পনা বদলেছে পুলিশ। পুজোর ক’দিন বাড়িতে বসে শহরের যান শাসনের উপরে নজরদারি চালিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় স্বয়ং। সমানেই যোগাযোগ রেখে গিয়েছেন ট্রাফিক কর্তাদের সঙ্গে।
এ বছর ওই সব রাস্তায় তো বটেই এমনকী কম গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাতেও (যেমন সিআইটি রোড, উল্টোডাঙা মেন রোড, মানিকতলা মেন রোডের মতো রাস্তা) যথেচ্ছ পার্কিং একেবারেই বন্ধ করে দেওয়া হয়। কেবল তাই নয়, বেআইনি ভাবে ‘পার্কিং’ করা হলে মামলা করা হয়েছে।
রাস্তায় কাঁটা লাগানো ক্ল্যাম্প হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন ট্রাফিক কনস্টেবলরা। কড়া ব্যবস্থা নেওয়ায় রাস্তার ধারে গাড়ি দাঁড় করাতে ভরসা পাননি কেউই। চেতলার বাসিন্দা বহুজাতিক সংস্থার কর্মী দেবপ্রিয় ভদ্র বলেন, “গত বছরেও বেলা ১০টা নাগাদ গড়িয়াহাট রোডে (সাউথ) গাড়ি রেখে বন্ধুদের সঙ্গে ঠাকুর দেখেছি। এ বার তো ওই রাস্তার কোথাও পুলিশ গাড়ি রাখতে দিল না।” পুলিশের দাবি, এই ব্যবস্থা নেওয়ায়
রাস্তা অপ্রশস্ত হয়নি, যানচলাচলেও ব্যাঘাত ঘটেনি।
কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের এক কর্তা জানান, প্রতি বছর সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বেশি সংখ্যায় পুলিশকর্মী রাখা হত, সকাল বা দুপুরে তুলনায় কম। এ বার পুজোর চার দিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত বিশেষ একটি বাহিনীকে রাস্তায় নামানো হয়েছিল।
ওই বাহিনীর অধিকাংশই তরুণ। দুপুর ২টোয় যে কর্মীরা রাস্তায় নেমেছেন, তাঁদের বাড়তি দু’ঘণ্টা সাহায্য করেছে সকালের ওই বাহিনী। বরাহনগরের বাসিন্দা রিনা ভৌমিক জানালেন, “গত বছরও পুজোর সময় সকালের দিকে বিটি রোড দিয়ে শ্যামবাজার পৌঁছতে আধ ঘণ্টা লেগেছিল। এ বার কুড়ি মিনিটেই পৌঁছে গিয়েছি।”
লালবাজারের এক ট্রাফিক কর্তা জানান, বড় মণ্ডপের আওতাধীন ট্রাফিক গার্ডের দক্ষ সার্জেন্টদের এ বার রাত ১১টার মধ্যে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। আবার পরদিন বেলা ১০টা নাগাদ হাজির হতে বলা হয়। এর ফলে এক দিকে যেমন ওই সার্জেন্টরা কিছুটা সময় পরিবারের সঙ্গে কাটাতে পেরেছেন, তেমনই ডিউটির সময়ে উৎসাহের সঙ্গে কাজ করতে পেরেছেন।
কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের যুগ্ম কমিশনার সুপ্রতিম সরকারের কথায়, “প্রচলিত ছকের আমূল পরিবর্তনই এ বারের সাফল্যের চাবিকাঠি।” |
|
|
|
|
|