এ যেন ছবির ধাঁধা। আর সেই ধাঁধার জট খুলতে গিয়ে বেঁধেছে জোর বিতর্ক। তাঁর ‘উইম্যান আয়রনিং’ ছবির আড়ালে কোন পুরুষের ছবি এঁকেছিলেন পাবলো পিকাসো? সেই আবছা পুরুষ অবয়বটি কি পিকাসোরই আঁকা? সম্প্রতি এমনই প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন ছবি বিশেষজ্ঞরা।
চলতি মাসে নিউ ইয়র্কের সোলোমন আর গুগ্গেনহাইম জাদুঘরে শুরু হয়েছে পিকাসোর ছবির প্রদর্শনী। যার মূল উদ্যোক্তা জাদুঘরটির মুখ্য সংরক্ষক ক্যারল স্ট্রিংগ্যারি। ‘পিকাসো ব্ল্যাক অ্যান্ড ওয়াইট’ নামে আয়োজিত ওই প্রদর্শনীর প্রথম ছবিটিই ‘উইম্যান আয়রনিং’ যেখানে দেখা যাচ্ছে প্রাণপণ শক্তি দিয়ে ইস্ত্রি করছেন এক কঙ্কালসার মহিলা। এত দিন বিশেষজ্ঞদের ধারণা ছিল, পিকাসো ছবিটি এঁকেছিলেন তাঁর ‘ব্লু পিরিয়ড’-এর শেষের দিকে, ১৯০৪ সাল নাগাদ। মূল ছবিটিতে ব্যবহার করা হয়েছিল নীল এবং ধূসর রং। কিন্তু ক্যারল জানাচ্ছেন, সম্প্রতি নিজের ‘ভোল’ পাল্টেছে ‘উইম্যান আয়রনিং’। কী রকম? |
ক্যারলের দাবি, পরিবর্তনের পর ছবিটির মধ্যে প্রচুর গোলাপি রঙের ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তিনি বললেন, “পটভূমিতে তো বটেই এমনকী ওই মহিলার পোশাকেও ফুটে উঠেছে হালকা গোলাপি আভা।” যা থেকে তাঁদের ধারণা, ব্লু পিরিয়ড নয়, ছবিটি হয়তো রোজ পিরিয়ডেই এঁকেছিলেন পিকাসো। তবে আসল বিতর্ক অন্যত্র। ছবির ভোল পাল্টানোর সঙ্গে সঙ্গে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে ওই মহিলার ছবির পিছনে থাকা এক পুরুষের অবয়ব। সেটিকে খুঁটিয়ে দেখতে ওয়াশিংটনের জাতীয় আর্ট গ্যালারির চিত্র বিশেষজ্ঞ জন কে ডেলানিকে ডেকে পাঠান তাঁরা। এ বার তাঁরই ইনফ্রারেড ক্যামেরায় স্পষ্ট ধরা পড়েছে গোঁফওলা এক পুরুষের আদল। বোঝা গিয়েছে তাঁর চোখ, এমনকী ধরা পড়েছে তাঁর বোতাম দিয়ে আটকানো শার্টের হাতাও। ক্যারল এবং তাঁর সহকারী জুলি বার্টেনের দৃঢ় ধারণা, ছবিটি চিত্রকর রিকার্ড ক্যানালসেরই। তবে বিষয়টি নিয়ে একমত নন পিকাসোর জীবনীকার জন রিচার্ডসন। তিনি জানান, ছবিটি অবশ্যই এক চিত্রকরের। তবে তিনি রিকার্ড নন, ম্যাতিউ ফার্নান্দেজ দ্য সোতো। বার্সেলোনা এবং প্যারিসে থাকার সময় বহুবার তাঁর আদল এঁকেছিলেন পিকাসো। তাঁর দাবি, ব্লু পিরিয়ডের সময়ে রিকার্ডের সঙ্গে সেই অর্থে কোনও পরিচিতিই ছিল না পিকাসোর। ফলে ওই গোঁফওলা পুরুষের ছবি আদতে রিকার্ডের না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে ক্যারল এবং বার্টেনের মতে, ছবির গোলাপি রং দেখে মনে হতে পারে, ওটি ব্লু পিরিয়ডের পরে, রোজ পিরিয়ডে আঁকা। সে ক্ষেত্রে ওটি রিকার্ডের ছবিও হতে পারে। বিশেষত যেখানে রিকার্ডের সঙ্গে ওই পুরুষের আদলের মিল বেশ স্পষ্ট, জানালেন ক্যারল। তবে ছবিটি যে আসলে পিকাসোরই আঁকা, তা নিয়ে একরকম নিশ্চিত ক্যারল-বার্টেনরা। কারণ, ছবিটিতে যে ধরনের ‘ব্রাশ-স্ট্রোক’ ব্যবহার করা হয়েছে, তার সঙ্গে পিকাসোর শৈলির মিল রয়েছে বলে মনে করেন তাঁরা। যদিও তাতে বিতর্ক থামছে না। স্রষ্টার খোঁজ মিললেও সৃষ্টি এখনও রহস্যের খাসমহল বানিয়ে রেখেছে। |