পুজোর মুখেও প্রাণ ফিরল না অভয় আশ্রমের।
চালু না হওয়ায় আশ্রমের কর্মীরা কাজ ফিরে পাননি। হাতে আসেনি বকেয়া বেতন। ফলে, পুজোর আনন্দ থেকে তাঁরা বঞ্চিত। তাঁদের অভিযোগ, বছরের পর বছর রাজনৈতিক টালবাহানার জন্যই আশ্রমের এই অবস্থা।
খাদির পোশাক, ঘানিতে ভাঙা সর্ষের তেল, নানা ধরনের কাগজ বা ধূপকাঠি উৎপাদন করে এক সময়ে কুটির শিল্পে সুনাম কুড়িয়েছিল গাঁধীজি-দেশবন্ধু-নেতাজির সাধের এই আশ্রম। ২০০৮ সাল থেকে তা বন্ধ। চলতি বছরের মাঝামাঝি বন্ধ আশ্রমটি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরের তৎকালীন মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় খাদি কমিশন ও রাজ্য খাদি বোর্ডের কর্তাদের নিয়ে কয়েকটি বৈঠকও করেন। ২ অক্টোবর, গাঁধীজির জন্মদিনে কারখানা চালুর সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয় তৃণমূল। তৃণমূলের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের পদত্যাগের পরে রাজ্য সরকারের মন্ত্রিত্ব থেকে সরে দাঁড়ায় কংগ্রেসও। পদত্যাগ করেন মানসবাবু। অভয় আশ্রম খোলার প্রক্রিয়া চলে যায় বিশ বাঁও জলে। |
ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতর সূত্রে খবর, মানসবাবুর পদত্যাগের পরে রাজ্য সরকার ওই আশ্রম খুলতে আর উদ্যোগী হয়নি। রাজ্য সরকার জানিয়ে দিয়েছে, বকেয়া বেতন দিয়ে আশ্রম খোলার তহবিল নেই। রাজ্য চায়, বকেয়া দেওয়ার ব্যাপারে কেন্দ্রই উদ্যোগী হোক। মানসবাবু অবশ্য বলেন, “আশ্রম খোলার ব্যাপারে খাদি ও ভিলেজ কমিশন উদ্যোগী হচ্ছে।” কিন্তু কেন্দ্রীয় খাদি কমিশনের অধিকর্তা (রাজ্য) রঞ্জিত সাহা বলেন, “বকেয়ার ব্যাপারে কেন্দ্র কিছুই জানায়নি। আশ্রমের সমস্যা নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে কয়েকটি বৈঠক করে তা চালু করার কাজ অনেকটা এগিয়েছিল ঠিকই। কিন্তু তা সেখানেই আটকে রয়েছে।”
আশ্রম না খোলায় মুষড়ে পড়েছেন প্রায় ৫০ জন কর্মী। ২০ মাস ধরে তাঁরা বেতন পাচ্ছেন না। অজয় ভৌমিক নামে এক কর্মী বলেন, “এত নামকরা একটি উৎপাদনশালা খোলা নিয়ে যে ভাবে রাজনীতি হচ্ছে, তাতে আমরা ক্লান্ত।” আর এক কর্মী প্রভাস পালের ক্ষোভ, “আশ্রমে গিয়ে আগের বামফ্রন্ট এবং বর্তমান সরকারের প্রতিনিধিরা সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছিলেন। কিন্তু কিছুই হল না।” অজয়বাবু, প্রভাসবাবুরা এখনও প্রতিদিন বিরাটিতে আশ্রমের মূল কেন্দ্রের একটি ঘরে হাজিরা দিতে যান।
আশ্রম খোলা নিয়ে সরকারি উদ্যোগ অবশ্য এ বারই প্রথম নয়। ২০১০ সালে কর্মীদের বকেয়া বেতন দিয়ে আশ্রমটি কেন্দ্রীয় খাদি কমিশনের কাছ থেকে অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় বাম সরকার। বকেয়া বেতন বাবদ কর্মীদের হাতে ২৮ লক্ষ টাকা তুলে দেয় অর্থ দফতর। কিন্তু সরকার আশ্রমটি অধিগ্রহণ করতে পারেনি। রাজ্যে ঘটে যায় পালাবদল।
কলকাতা-সহ রাজ্যের ১০টি এলাকায় ৪০ বিঘা জমি-সহ কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে অভয় আশ্রমের। বিরাটিতে আশ্রমের মূল কেন্দ্রের দখল নিয়েছে আগাছা, ঝোপঝাড়। একদা কর্মমুখর আশ্রমে কি সত্যিই প্রাণ ফিরবে? দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে কর্মীদের। |