বন্দরে শান্তি রাখতে
প্রশাসনকে নির্দেশ আদালতের
প্রশাসনের বক্তব্য এবং হলদিয়া বন্দরের বাস্তব পরিস্থিতি যে এক নয়, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে তা সামনে চলে এল শুক্রবার। সেখানে কাজ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়া সংস্থার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও বন্দরে শান্তি বজায় রাখতে পূর্ব মেদিনীপুর প্রশাসনকে এ দিন চার দফা নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হলদিয়ার গিয়ে জনসভায় ঘোষণা করেছিলেন, বন্দরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক। সব ঠিক মতো চলছে। সেই সুরেই পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার বৃহস্পতিবার জানান, কোনও অশান্তি নেই বন্দরে। প্রশাসনের বক্তব্য শোনার পরে আদালত কিন্তু মনে করছে, পরিস্থিতি আদৌ স্বাভাবিক নয় বন্দরে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার দায়িত্ব জেলা প্রশাসনেরই। বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের নির্দেশ, হলদিয়া বন্দরে যাতে এবিজি সংস্থা নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকে।
বন্দরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় তারা কাজ করতে পারছে না বলে এবিজি কলকাতা হাইকোর্টে অভিযোগ জানিয়ে তাদের হস্তক্ষেপ চেয়েছিল। সংস্থাটির অভিযোগ, তাদের কর্মীদের বন্দরে ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। বার বার পুলিশকে জানিয়েও সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে না। রাজ্য সরকার আদালতকে জানায়, বন্দরের মধ্যে পুলিশের কিছু করার নেই, কোনও দায়িত্বও নেই। সেখানে সব দায়িত্ব সিআইএসএফের। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, বন্দরে মালপত্রের নিরাপত্তা দেওয়াই সিআইএসএফের কাজ। তারা এফআইআর দায়ের করতে পারে না। কাউকে গ্রেফতারও করতে পারে না। আদালতও মনে করে, যে কোনও স্থানেই আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা দেখা দিলে ব্যবস্থা নিতে হবে রাজ্যের পুলিশ ও প্রশাসনকেই। এবং সে কারণেই বিচারপতি দত্ত তলব করেন জেলা প্রশাসনের কর্তাদের। সেই মতো এ দিন জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার হাইকোর্টে গিয়ে নিজেদের রিপোর্ট পেশ করেন। কিন্তু তাঁদের রিপোর্টে খুশি হতে পারেনি হাইকোর্ট।
হলদিয়ায় হাল ফেরাতে
• বন্দরের ভিতরেও এবিজি-র সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে হবে।
• বন্দরের ১০০ মিটারের মধ্যে কোনও ইউনিয়নবাজি নয়।
• এ ব্যাপারে যত পুলিশ লাগবে তার খরচ জোগাবে এবিজি।
• ছাঁটাই কর্মী কিংবা বহিরাগতরা বন্দরে ঢুকতে পারবেন না।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, পুলিশ সুপার সুকেশ জৈনের কাছে এবিজি অভিযোগ জানিয়েছিল ১২ অক্টোবর। সুপার পর দিন তা পান। তিনি খাম খুলে সেটি পড়েন ১৭ অক্টোবর। অভিযোগপত্র পড়ার পরে তিনি কী ব্যবস্থা নিয়েছেন? বিচারপতির প্রশ্নে সুপার বলেন, “বন্দর এলাকার বাইরে কোনও অশান্তি ছিল না। তাই বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন ছিল না।”
জেলাশাসক পারভেজ আহমেদ সিদ্দিকি জানিয়েছেন, ছুটি থেকে ফিরে ১৭ অক্টোবর তিনি অভিযোগপত্র পান। তার পরেই তিনি তা মহকুমাশাসক ও মহকুমা পুলিশ অফিসারের কাছে পাঠিয়ে দেন। জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করে বিচারপতি জানতে চান, একটি সংস্থা কাজ করতে পারছে না বলছে, কর্মীরা বন্দরে ঢুকতে বাধা পাচ্ছেন, তবু পুলিশ পিকেট বসানো হল না কেন?
আবেদনকারী সংস্থার আইনজীবী সমরাদিত্য পাল এ দিন অভিযোগ করেন, “দুই এবং আট নম্বর বার্থ ছাড়া অন্য ৬টি বার্থে যে সব সংস্থা কাজ করে, তারাই এবিজি-কে কাজ করতে দিতে চাইছে না। তাই তারা অশান্তি করছে।” বিচারপতি দত্ত এই সমস্যা সমাধানে গভর্নমেন্ট প্লিডার অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় ও জেলাশাসকের পরামর্শ চান। অশোকবাবু কোনও পরামর্শ দেননি। তিনি জানান, বন্দর এলাকার বাইরে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হয়নি। জেলাশাসক নীরব ছিলেন।
এর পরে শুনানি শেষ করে দিয়ে বিচারপতি দত্ত জানিয়ে দেন, বন্দরে ও বন্দর এলাকার বাইরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব প্রশাসনের। এবিজি যাতে বন্দরে কাজ করতে পারে তার জন্য বন্দরের বাইরে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রাখতে হবে। বসাতে হবে পুলিশ পিকেট। এই পুলিশি ব্যবস্থার খরচ দেবে এবিজি। বন্দরের ১০০ মিটারের মধ্যে আন্দোলন করতে পারবে না শ্রমিক সংগঠন। ছাঁটাই, বদলি বা অবসরপ্রাপ্ত কর্মী বন্দর এলাকায় ঢুকতে পারবেন না।
তবে এতেই সমস্যা মিটে যাবে, এমনটা আশা করা যাচ্ছে না। এবিজি-কে শ্রমিক জোগানোর দায়িত্বে থাকা সংস্থার মালিক শেখ মুজফ্ফর এ দিনও রানিচকে সাংবাদিক বৈঠক করে হুঁশিয়ারি দেন, এবিজি বকেয়া না মেটালে তাঁর সংস্থার শ্রমিকরাই কাজে বাধা দেবেন। সিপিএমের এই প্রাক্তন কাউন্সিলর এখন শাসক দলের ঘনিষ্ঠ। তাঁর কথায়, “এবিজি টনপিছু পণ্য খালাসে নির্ধারিত টাকা না দিয়ে প্রতারণা করেছে। ফলে শ্রমিকদের বকেয়া টাকা মেটাতে পারছি না আমরা।” গত বছর লোহার আকরিক নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিলেন মুজফ্ফর। বেশ কিছু দিন জেলে থাকার পর জামিন পান। এ বছর পুর নির্বাচনে একদা লক্ষ্মণ শেঠের ঘনিষ্ঠ মুজফ্ফর প্রচারে নামেন তৃণমূলের হয়ে। এবিজি চলে গেলে বন্দরের ক্ষতি হবে স্বীকার করলেও শ্রমিক ছাঁটাইয়ের তীব্র নিন্দা করেন তিনি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.