পুজোর ঠেক
রসনায় সুর
কটেল সহযোগে এক কোণে বসে কিছুক্ষণ গিটারে টুং-টাং বা ব্রাজিলের বিখ্যাত বাদ্যযন্ত্র প্যান্ডেরো নিয়ে কোনও হইচই মিউজিক। এ সবের সময় নেই? খাবারের অর্ডার দিয়ে পাশে রাখা কম্পিউটারে সেরে নেওয়া যায় অফিসের টুকটাকও। কিস্সু ভাল না লাগলে সেখান থেকেই ঘুরে আসা যায় এক বার। যা যা রং ভাল লাগছে, তাই দিয়ে খানিক আঁকিবুকি কেটে ফেলা যায় এক ধারে রাখা মস্ত ক্যানভাসটায়। তত ক্ষণে মন ভাল করে দেওয়ার মতো গরমাগরম ‘ওরিয়েন্টাল’ সুখাদ্য হাজির হয়ে যাবে টেবিলে। সত্যিই এমন আড্ডার জায়গা আছে কলকাতায়!
শপিং মলে কেনাকাটা সেরে যাদবপুর কানেক্টর দিয়ে বাইপাসে ওঠার আগে হঠাৎ চোখ চলে যেতে পারে ডান দিকের রংচঙে বাড়িটায়। সামনে ঝোলানো বোর্ডে একটা জাপানি শব্দ। কার্টুন চ্যানেল দেখলে চেনা ঠেকতে পারে সে শব্দটিও। উৎসবের মেজাজটা উস্কে দিতে গেটের দিকে টানবেই আড্ডা-প্রিয়দের শহরে নতুন এই ঠিকানাটা। সিঁড়ি দিয়ে উঠে কাঠের দরজাটা ঠেলে ঢুকলেই এক্কেবারে নতুন অভিজ্ঞতা।
দল বেঁধে অথবা একাই মিউজিক, কফি, রকমারি খাওয়াদাওয়ায় কিছুটা সময় কাটানোর জন্য ঢুকে পড়া যায় রীতিমতো আন্তর্জাতিক আবহের এই জায়গায়। খাবারের মেনু থেকে দেওয়ালের রং, সবেতেই নানা মেজাজের মিশেল। আর সব ছাপিয়ে তারুণ্যের চাঞ্চল্য চারপাশে। সেই আবহটা তুলে ধরতেই এ রেস্তোরাঁর নাম হয়েছে ‘ওয়াসাবি’। জাপানি খাবারে সব চেয়ে ঝাল, চটপটা সস্টার নামেই এই নাম।
লোকে বলে, দিন-দিন নাকি শহর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে আড্ডার ঠিকানাগুলো। আবার নাম করা সব কেবিন আর ক্যান্টিনগুলো নাকি খুবই ‘ব্যাকডেটেড’। এই পুজোয় সে দুঃখ মেটানোর সন্ধানই মিলতে পারে এখানে। সব বয়সের বাঙালির অতি পছন্দের চিনা খাবারের সঙ্গে থাকছে কম পরিচিত জাপানি এবং তাই রান্নাও। আর পছন্দ যদি হয় খাঁটি ভারতীয়, সে ব্যবস্থাও থাকছে। রকমারি মোগলাই খানার সঙ্গেও আড্ডা জমতে পারে বেশ। তার সঙ্গে থাকছে রেস্তোরাঁর কর্ণধার তবলাবাদক তন্ময় বসুর নিজের পছন্দের কিছু ফিউশন মেনুও। অর্থাৎ, পুজোর চারটে দিন এখানে বসে অনায়াসেই কাটানো যায় নিত্য নতুন স্বাদে। কোনও দিন নানা ধরনের সুশি আর তেম্পোরা, তো কোনও এক দিন প্যান ফ্রায়েড চিলি টোফু, ফিশ কেক পেপার সল্ট বা ফিশ ফিউশনে জমতে পারে ভোজ।
পুজোর আড্ডায় গান না থাকলে মোটেই জমজমাট হয় না আবহটা। সাউন্ড সিস্টেমে তাই গান তো থাকছেই। সঙ্গে ভারতীয় মশলায় নতুন ছোঁয়া দিয়ে কিছু ফিউশন রান্নার নামেও রয়েছে সুর-তাল-ছন্দ। সেই রেসিপির তালিকায় থাকছে মটন কাওয়ালি, চিকেন আ লা হিপ হপ, পনির ঠুমরি, শ্রেডেড ল্যাম্ব রক এন’ রোলের মতো নানা সুখাদ্য।
অভিনবত্ব রয়েছে মকটেল আর ডেজার্টেও। শেষ পাতটা চমকদার করতে বেছে নেওয়া যায় ভ্যানিলা আইসক্রিম সহযোগে টফি ওয়ালনাটের মতো রোজ না খাওয়া কোনও মিষ্টি।

ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.