ছুটি-ছুটি। প্যান্ডেলে ঢাকের বাজনা থেকে হাজার মাইল দূরে পারথে এখন মর্গ্যান।
আপনারা হয়তো বিশ্বাস করবেন না কিন্তু সত্যি বলছি, এই সুদূর অস্ট্রেলিয়াতে বসেও কলকাতার পুজোর আমেজটা টের পাচ্ছি! ওখানে এই মুহূর্তে উৎসবের কী রকম জমজমাট পরিবেশ সেটা আন্দাজ করতে পারি। সত্যি বলছি, কলকাতার পুজোকে এ বার খুব মিস করছি!
যে ক’টা বছর আমি কলকাতায় আছি, প্রতিবারই বেশ কয়েকটা পুজোর উদ্বোধনে ডাক পেয়ে যেতে হয়েছে। কবুল করছি, এই ডাকগুলো আমি দারুণ উপভোগ করেছি। সত্যি বলতে কী, পুজোর দিনগুলোর জন্য আমিও সারা বছর প্রচণ্ড আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে থাকি। চারটে দিনের ওই হট্টগোল, মণ্ডপ, প্রতিমা, রং, ভিড় সবটা মিলেমিশে অসাধারণ একটা কার্নিভ্যালের মেজাজ! ঠিক যেন আমাদের ক্রিসমাস!
পুজোর খালি একটা ব্যাপারই আমার ভীষণ বিরক্তিকর লাগে ট্র্যাফিক। কলকাতাকে আমি যতটা ভালবাসি কলকাতার ট্র্যাফিক আমার কাছে ঠিক ততটাই বিরক্তিকর। আর পুজোর সময় তো পরিস্থিতি একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকে। তাই ওই ট্র্যাফিকটুকু বাদে পুজো আমার দারুণ ভাললাগার একটা সময়।
তবে এ বছর পুজোয় আমার ছেলেরা একটা ব্রেক পেয়েছে। ইস্টবেঙ্গল ক্লাব আমাকেও এই ছুটির ক’টা দিন অস্ট্রেলিয়ায় এসে পরিবারের সঙ্গে থাকার অনুমতি দিয়েছে। ফলে আমার সময়টা খুব ভাল কাটছে। অনেক দিন পরে আবার পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মারছি, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছি আর নাতি-নাতনিদের নিয়ে চুটিয়ে হুল্লোড় করছি।
আসলে এই ব্রেকটা যে দিন ঘোষণা করা হল, তার আগে আমার কাছে ক’টা প্রশ্ন এসেছিল। ক্লাব কর্তৃপক্ষ জানতে চেয়েছিলেন, টিম এই মুহূর্তে দারুণ ফর্মে রয়েছে, জেতার ছন্দটাও তৈরি হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় আচমকা একটা ব্রেক দেওয়া হলে সব নষ্ট হয়ে যাবে না তো?
জবাবে ওঁদের ক’টা হিসেব দেখিয়েছিলাম যেগুলো আপনাদের কাছেও তুলে ধরছি।
শেষ বার ইস্টবেঙ্গল দল দশ দিনের ছুটি পেয়েছিল মার্চে। মানে প্রায় সাত মাস আগে। তার পরে আমার ছেলেরা ২৩টা ম্যাচ খেলেছে। আর বলতে গিয়ে রীতিমতো গর্ব করেই বলছি, ওরা কিন্তু একটাতেও হারেনি! এই ২৩ ম্যাচ অপরাজিত থাকার মধ্যে আমরা জিতেছি উনিশটা, ড্র চারটেয়। আর মনে রাখবেন, এই হিসেব কিন্তু আই লিগের ম্যাচ ধরেই। |
এটাই ছিল আমার জবাব। আমি বিশ্বাস করি প্রচণ্ড চাপের মধ্যে যদি কয়েকটা দিনও অ্যাক্সেলেটর থেকে পা-টা তুলে নেওয়া যায়, তা হলে আখেরে লাভই। একটা দলকে চনমনে আর তরতাজা করে তোলার জন্য এই ছুটিটার থেকে ভাল আর কিছু ছিল না। তা ছাড়া আমাদের ছেলেরা প্রত্যেকে পেশাদার। ওরা খুব ভাল করেই জানে ওদের জন্য কোনটা ভাল আর কোনটা খারাপ। আপনারা যদি ভাবেন ছুটি পেয়ে ছেলেদের মধ্যে জং ধরার আশঙ্কা রয়েছে, তা হলে নিশ্চিন্ত থাকুন। গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, এক বার ওরা যেটা করতে সব থেকে ভালবাসে, সেই ফুটবল খেলায় ফিরলেই ছেলেদের উদ্দীপনার সামনে ও সব জং-টং রাতারাতি উবে যাবে।
এ বছর আর একটা দল আই লিগে শুরুটা খুব ভাল করেছে। প্রয়াগ ইউনাইটেড। তবে হ্যাঁ, আই লিগ তো আর তিন মাসের টুর্নামেন্ট নয়! এটা হল ম্যারাথন। যেখানে মরসুমের প্রায় শেষ ম্যাচটার ওপরেই কারা চ্যাম্পিয়ন হবে তার ফয়সালা নির্ভর করে থাকে। প্রয়াগ এই মুহূর্তে খুব ভাল খেলছে। তবে ওদের নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করার আগে আরও অপেক্ষা করতে হবে। আর ইস্টবেঙ্গলে আমরা বিশ্বাস করি, তুমি যদি সেরা হতে চাও তা হলে সবার বিরুদ্ধেই জিততে হবে।
অস্ট্রেলিয়ায় বসে মোহনবাগানে নতুন কোচ আসছে বলেও খবর পাচ্ছি। যদিও আমার দায়িত্ব ইস্টবেঙ্গলকে ঘিরেই এবং অন্য কোনও ক্লাব কে কী করল সেটা নিয়ে আমি মাথা ঘামাতে চাই না, তবু বলব বিশ্বের সর্বত্রই এক জন কোচের কাজটা একই থাকে। ছাঁটাই হওয়া বা ধাক্কা খেয়ে বেরোতে বাধ্য হওয়াটা আমাদের পেশার একটা ঝুঁকি, যাকে বলে অকুপেশনাল হ্যাজার্ড। প্রত্যেক কোচকেই এর মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কৌশলটা হল এটা মনে রাখা যে, জীবনের রং খুব দ্রুত বদলায়।
আমার কাছে সম্প্রতি আরও একটা ইন্টারেস্টিং প্রশ্ন এসেছে। জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, টোলগে কি পরের বছর ইস্টবেঙ্গলে ফিরছে? উত্তরে বলছি, আমার কাছে এ রকম কোনও খবর নেই। আমি যেটা জানি, সেটা হল ওর সঙ্গে মোহনবাগানের তিন বছরের চুক্তি রয়েছে। ও এক জন পেশাদার ফুটবলার যে জীবনে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং ওর জন্য আমার শুভকামনা রইল।
তবে আমি জোর দিয়ে বলতে পারি, ফুটবল নিয়ে এ সব আলোচনা আগামী ক’টা দিন মুলতুবি রাখাই যায়। দুর্গাপুজো শুরু হয়ে গিয়েছে। আর আমার ইস্টবেঙ্গলের প্লেয়ারদের জন্য আমার ছোট্ট পরামর্শ জানি এটা দারুণ হৈ-হুল্লোড় করার সময়, আর তোমরা ক’টা বিয়ার বেশি খেতেই পারো। তবে যদি মশলাদার রগরগে রান্না আর ভাতটা র্যাশন করতে পারো, তা হলে আমি সত্যিই খুশি হব!
পুজোর শুভেচ্ছা রইল সবার জন্য! |