শারদোৎসব শুরুর মুখে নজিরবিহীন পরিস্থিতি মোহনবাগানে। কোচ থেকেও নেই ওডাফা-টোলগেদের। ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত নতুন যে সরকারী কোচের কাছে অনুশীলন করবেন সবুজ-মেরুন ফুটবলাররা, নিয়মের গেরোয় আটকে রিজার্ভ বেঞ্চে তাঁকে আবার কোচ হিসেবে বসাতে পারবে না ক্লাব। কারণ করিমের সহকারী যাঁর নাম এ দিন ঘোষণা করা হয়েছে, সেই মৃদুল বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘এ’ লাইসেন্স নেই। যে সার্টিফিকেট আই লিগের টিমকে কোচিং করানোর জন্য ফেডারেশনের বাধ্যতামূলক।
করিম বেঞ্চারিফার সঙ্গে চুক্তি করা সত্ত্বেও সরকারি ভাবে শুক্রবারের সাংবাদিক সম্মেলনে তা জানাতে পারলেন না মোহনবাগান কর্তারা। টোলগে-বিতর্কের ভূত তাড়া করল তাঁদের। সহ-সচিব সৃঞ্জয় বসু বলে দিলেন, “করিম সালগাওকর থেকে বৃহস্পতিবারই পদত্যাগ করেছেন। আমরা তাঁকে কোচ চাইছি। কথাবার্তা চলছে। কোচ হিসেবে করিমের নাম আমরা ঘোষণা করব ১৮ নভেম্বর।” তার কিছুক্ষণ পর ক্লাব প্রেসিডেন্ট টুটু বসুর সরস মন্তব্য, “টোলগেকে নিয়ে যে সমস্যা হয়েছিল করিমকে নিয়ে সে রকম কিছু হোক তা চাই না।”
সরকারি ভাবে ঘোষণা না করলেও মোহন-কর্তারা জানিয়ে দিয়েছেন, উনিশ মাসের চুক্তি হচ্ছে করিমের সঙ্গে। ক্লাব সূত্রের খবর, মাসে প্রায় বারো লাখ টাকা করে মাইনে পাবেন মরোক্কান কোচ। সঙ্গে সাউথ সিটিতে বিশাল ফ্ল্যাট এবং দামি গাড়ি তো আছেই। ২ বছর ৯ মাস ১৬ দিন পর ফের সবুজ-মেরুন জার্সি পরে নামবেন আই লিগ জয়ী একমাত্র বিদেশি কোচ। আগের বার নানা বিতর্কে জড়িয়ে তীব্র চাপের মুখে মোহনবাগানের সঙ্গে ‘গোল্ডেন হ্যান্ডশেক’ করে বিদায় নিতে হয়েছিল করিমকে। এ বার তাঁর সঙ্গে ২০১৪ পর্যন্ত চুক্তি করেছে ক্লাব। কিন্তু কর্তাদের যা ট্র্যাক রেকর্ড তাতে কি করিম পুরো মেয়াদ বাগানে টিকবেন? অর্থসচিব দেবাশিস দত্ত বললেন, “এটা সদস্য-সমর্থকদের ক্লাব। সাফল্য না পেলে কোচকে বিদায় নিতেই হয়। কিন্তু আমাদের বিশ্বাস করিম আমাদের এখানে সাফল্য পাবেন এবং পুরো সময় থাকবেন।” |
করিমকে কোচ করা নিয়ে মোহনবাগান কর্তারা সাংবাদিক সম্মেলন করে ফেললেও চতুর করিম অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি। এমনিতেই আই লিগের শুরুতেই চুক্তিভঙ্গ করে সালগাওকরের কোচের পদ থেকে সরে যাওয়ায় করিমকে নিয়ে প্রচণ্ড সমালোচনা হচ্ছে গোয়ায়। ক্ষুব্ধ সালগাওকর কর্তারাও। তা ছাড়াও চুক্তির শর্ত মেনে আরও এক মাস তাঁকে কোচিং করাতে হবে লেনি-ফ্র্যাঙ্কোদের। গোয়ার খবর, তাঁর পদত্যাগপত্র নিয়ে রবিবার কথা বলতে পারেন স্বয়ং শিবানন্দ সালগাওকর। এই পরিস্থিতিতে বিতর্ক বাড়াতে চাননি করিম। মিডিয়ার ফোন ধরেননি। এমনকী দেননি এসএমএসের জবাবও।
টুটু বসু-অঞ্জন মিত্ররা এ দিন সকালে ক্লাব তাঁবুতে উপস্থিত থাকলেও সাংবাদিকদের ঝোড়ো প্রশ্নের উত্তর দিতে তাঁরা এগিয়ে দিয়েছিলেন সহ সচিব সৃঞ্জয় বসু এবং অর্থসচিব দেবাশিস দত্তকে। কেন সন্তোষ কাশ্যপের মতো এক জন অনভিজ্ঞকে মোহনবাগানের দায়িত্ব দিয়ে টিমকে ডোবানো হল? কেন বারবার মাঝপথে কোচ বদল হয় আপনাদের ক্লাবে? কেন করিমকে শুরু থেকেই নেওয়া হল না? এ রকম অসংখ্য প্রশ্ন উড়ে এল। সৃঞ্জয় বললেন, “করিমকে আমরা মরসুমের শুরুতেই চেয়েছিলাম। কিন্তু উনি চুক্তিভঙ্গ করে আসতে রাজি হননি। এখন রাজি হয়েছেন। আর অনেক কোচই আমাদের ক্লাব থেকে প্রথম সাফল্য পেয়েছেন। সন্তোষকে আমরা সুযোগ দিয়েছিলাম। উনি পারেননি। কী আর করা যাবে?”
ক্লাবে দু’বছরের উপর ট্রফি নেই। ব্যর্থতা নিত্যদিনের সঙ্গী। কোচ বদল হচ্ছে বারবার। এ সব নিয়ে তীব্র সমালোচনা গত পনেরো দিন ধরে নাগাড়ে চলছে। প্রয়াগ ম্যাচের পর স্টেডিয়ামেই ক্লাব কর্তাদের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন সদস্য-সমর্থকরা। ফেসবুক, টুইটারে উপচে পড়ছে ক্ষোভ। আর সেই ঝাপটায় কর্তারাও গত কয়েক দিন ছিলেন দিশাহারা। বৃহস্পতিবার করিমকে চূড়ান্ত করার বৈঠকে টুটু-অঞ্জন-সৃঞ্জয়ের সামনেই ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে সরে যেতে চেয়েছিলেন অর্থ সচিব দেবাশিস। এ দিন অবশ্য সাংবাদিকদের সামনে টুটুকে বারবার বলতে শোনা যায়, “আমাদের মধ্যে কোনও মতভেদ নেই। সবাই মিলেই আমরা সিদ্ধান্ত নিই।” সৃঞ্জয় জানান, স্বদেশি-বিদেশি অনেক কোচ নিয়েই তাঁরা আলোচনা করেছেন। করিমকে বেছে নেওয়ার পিছনে কাজ করেছে তাঁর সাফল্য। “পাঁচ বছরে আই লিগ, ফেড কাপ-সহ পাঁচটা টুর্নামেন্ট জিতেছেন করিম। পাঁচটায় রানার্স। মোহনবাগানে থাকার সময় উনি ট্রফি দিয়েছেন। সে জন্যই ওকে বেছেছি।”
করিম যে দিন মোহনবাগানের দায়িত্ব নেবেন তাঁর সাত দিন পর ২৫ নভেম্বর পুণে এফসি-র বিরুদ্ধে খেলতে হবে ওডাফাদের। তার আগেই অবশ্য আই লিগের চারটি ম্যাচ খেলা হয়ে যাবে টোলগেদের। অস্ট্রেলিয়া থেকে ভিসা সমস্যা মিটিয়ে মঙ্গলবার দেশে ফিরছেন টোলগে। এখন দেখার, কাশ্যপের জুতোয় পা গলিয়ে করিম বাগানে সন্তোষ আনতে পারেন কি না! |