চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১...
মৎস্যপ্রিয় বাঙালির বিচিত্র ও বহুমুখী বিশ্লেষণ
লটারনেটিভ আর্ট বা বিকল্প রূপকল্পকে প্রাধান্য দিয়ে নিয়মিত প্রদর্শনী আয়োজিত হয় কলকাতার অল্প যে দু’ একটি গ্যালারিতে ‘এক্সপেরিমেন্টার’ তাদের মধ্যে সবচেয়ে অগ্রণী। আজকের জটিল বাস্তবতাকে নিবিষ্ট ভাবে রূপ দিতে এত দিনের প্রচলিত ধারার চিত্র ও ভাস্কর্য যথেষ্ট নয়। ১৯৯০-এর দশক থেকে বিকল্প রূপকল্পের গুরুত্ব তাই ধীরে ধীরে বাড়ছে। ভিডিও ও চলচ্চিত্র মাধ্যমকে অনেক শিল্পীই ব্যবহার করছেন দ্বিমাত্রিক বা ত্রিমাত্রিক দৃশ্যকলার বিকল্প হিসেবে। এক্সপেরিমেন্টার-এ সম্প্রতি চার সপ্তাহ জুড়ে আয়োজিত হল ‘ফিলামেন্ট’ শিরোনামে ভিডিও ও চলচ্চিত্র প্রদর্শন অনুষ্ঠান। এগুলি সম্পূর্ণ ভাবে কাহিনিচিত্র নয়, আবার তথ্যচিত্রও নয়। এই দুই ধারার বৈশিষ্ট্যকে মিলিয়ে এবং তাকে নতুন আঙ্গিকে অভিষিক্ত করে এগুলি তৈরি হয়েছে। উদ্দেশ্য সমকালীন বাস্তবের নানা জটিল সমস্যাকে বিশ্লেষণ করা, যেটা প্রচলিত চিত্র-ভাস্কর্যে সম্ভব নয়। প্রায় সব ফিল্মেই মূল প্রেক্ষাপট ছিল শহর কলকাতা ও পারিপার্শ্বিকের পরিমণ্ডল। আজকের বিশ্বায়নজনিত ভোগবাদ জীবনকে কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছে তারই পর্যালোচনা।
প্রতি সপ্তাহে মঙ্গলবার থেকে শনিবার পর্যন্ত দেখানো হয়েছে একজন ফিল্মকারের ফিল্ম। শনিবার সন্ধ্যায় সেই ফিল্মটি নিয়ে দর্শকের সঙ্গে আলোচনা করেছেন পরিচালক।
প্রথম সপ্তাহে দেখানো হয়েছে আশিস অভিকুন্ঠক-এর দু’টি ফিল্ম ‘কালীঘাট অতিকথা’ ও ‘বৃহন্নলা কি খেলকি’ (ডান্সিং ওথেলো)। ‘কালীঘাট অতিকথা’ কালীঘাট মন্দিরে ধর্ম ও ব্যবসার দ্বন্দ্বাত্মক সম্পর্ক নিয়ে। দেবীর সামনে পাঁঠা বলি হতেই থাকে নিরন্ত-প্রবাহে। ছাল ছাড়ানো হয়। টুকরো টুকরো করে কাটা হতে থাকে মাংস। ধর্মের ভিতর হিংসা পরিব্যাপ্ত হয়ে যায়। মানুষ তা উপভোগ করে। পাশাপাশি চলে আর একটি উপকাহিনি।
একজন যুবক কালীর সাজে সাজতে থাকে। বুকে বক্ষবন্ধনী বাঁধে। সারা দেহে রং মাখে। মুখে কামড়ে ধরে রক্তাক্ত জিহ্বা। ধর্মকে সম্বল করে তাঁর জীবিকা।
ডান্সিং ওথেলো’তে কথাকলি নৃত্যের মধ্য দিয়ে শেক্সপিয়র-এর ‘ওথেলো’ নাটক অভিনয়ের তালিম চলে। শহরের উপরের আবরণের অন্তরালে জীবিকার এই করুণ দিকগুলোকে কৌতুকদীপ্ত করে উপস্থাপিত করেছেন শিল্পী।
শিল্পী: নীলাঞ্জন ভট্টাচার্য
দ্বিতীয় সপ্তাহে দেখানো হয়েছে রাণু ঘোষের ফিল্ম ও ভিডিও ভিত্তিক ইনস্টলেশন। শিরোনাম-‘গ্রাউন্ড জিরো: ডায়ালগস অ্যান্ড মনোলগস’। কলকাতার কলকারখানাগুলো বন্ধ হয়ে গিয়ে তৈরি হচ্ছে বড় বড় আবাসন-প্রকল্প ও শপিংমল। জয় ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ঊষা ফ্যাক্টরি যেখানে ছিল, সেখানে এখন গড়ে উঠেছে সাউথ সিটি মল। কারখানা বন্ধ হওয়ায় যে সব শ্রমিক বেকার হয়েছেন, তাদেরই এক জনের পারিবারিক দৈনন্দিনতা নিয়ে গড়ে উঠেছে প্রথম ফিল্ম। গৃহবধূ সারা দিন ধরে তাঁর দারিদ্রলিপ্ত সংসারের কাজ করেই যাচ্ছে। এই ফিল্মের কোনও শুরুও নেই, শেষও নেই। নিরন্ত প্রবাহে চলতে থাকে নারীর সংসার চালানোর দৈনন্দিনতা। পাশাপাশি আরও দু’টি ভিডিওতে দেখানো হয় পুরোনো স্থাপত্য ভাঙা ও নতুন আকাশচুম্বী অট্টালিকা গড়ে তোলার দৃশ্যাবলি।
তৃতীয় সপ্তাহের উপস্থাপনা নীলাঞ্জন ভট্টাচার্যের একটি তথ্যচিত্রধর্মী ভিডিও- ‘মাছের বঙ্গ’। বাঙালির মৎস্যপ্রিয়তার বিচিত্র ও বহুমুখী বিশ্লেষণ এই তথ্যচিত্র।
মাছ ধরার নানা প্রক্রিয়া, মাছ রান্না ও খাওয়ার নানা ধরন অনুপুঙ্খ ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের সঙ্গে নানা রকম রঙ্গ-রসিকতাও যুক্ত হয়েছে। সঙ্গে এসেছে উৎসব ও লোকাচারে মাছের ভূমিকার নানা দিকও।
সঙ্গে দেখানো হয়েছে আরও দু’টি ভিডিও ‘ইট ইজ ওপেন’ এবং ‘দ্য ডার্ক ফেস অব ড্রাউনিং’। দ্বিতীয়টি তৈরি হয়েছে ৯/১১-র টেলিভিশন সম্প্রচারের প্রতিক্রিয়া নিয়ে।
চতুর্থ সপ্তাহের শিল্পী ছিলেন রুচির যোশী। দেখানো হয়েছিল তাঁর ৩৮ মিনিট দৈর্ঘ্যের ফিল্ম ‘টেলস ফ্রম প্ল্যানেট কলকাতা’। ব্রিটিশ উপনিবেশের এই রাজধানী শহর কী ভাবে গড়ে উঠল ও কোন পরিণতির দিকে এগোল, সেটা তুলে ধরা হয়েছে পটচিত্রের প্রদর্শন ও পটশিল্পীর গানের মধ্য দিয়ে। সঙ্গে আজকের কলকাতার নানা সমস্যা। এ ছাড়াও ছিল দু’টি ভিডিও- ‘গুরগাও জিরাফ’ ও ‘নিউ ড্রিম লোকাল’। শেষোক্তটি খুবই মনোগ্রাহী। শহর, শহরতলি ও গ্রামের মধ্যে সংযোগের সূত্র রেলগাড়ি। রেলের গমনপথের ভিতর দিয়ে শিল্পী নগর ও গ্রামের সম্পর্ককে বিন্যস্ত করেছেন। এ ভাবেই কলকাতাকেন্দ্রিক জীবনপ্রবাহের নানা আলেখ্যে সমৃদ্ধ ছিল এই চার সপ্তাহের উপস্থাপনা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.