নিজেদের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েই জনতার উৎসবের ভিড় সামলাল কলকাতা পুলিশ। ফলে, পঞ্চমীর কলকাতায় পুজো-পাগলেরা বরাবরের ভোগান্তি থেকে এ বার কিছুটা রেহাই পেয়েছেন।
এ শহরে গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা বলছে, ষষ্ঠীতে দেবীর বোধন হলেও ঠাকুর দেখার ভিড়টা অন্তত দু’দিন আগেই শুরু হয়ে যায়। অথচ, ভিড় সামলাতে বিশেষ পুলিশি ব্যবস্থা কখনও ষষ্ঠীর সন্ধ্যার আগে চালু হত না। লালবাজারের এই সিদ্ধান্তে গত বছরও ভুগেছে শহর। এ বছর সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি হল না।
পঞ্চমীর সন্ধ্যাতেই মাঠে নেমেছিল পুলিশ। তবে কাজটা মোটেও সহজ ছিল না। দুপুরেই ডায়মন্ড হারবার রোডে গাড়ির ভিড় বুঝিয়ে দিয়েছে, উৎসবের মাঠে পুরোদমেই নেমে পড়েছে বাঙালি। দক্ষিণের গড়িয়াহাট বা উত্তরের বিধান সরণি-অরবিন্দ সরণিই বা কম কীসে! বেহালা-চেতলার দখল নিয়েছে কল্যাণী-ব্যারাকপুরের জনতা। বিক্ষিপ্ত কিছু মণ্ডপের ‘ফাইনাল টাচ’ বাকি ছিল দুপুরে। কিন্তু পুজো-পাগলদের স্রোত মোটেই তর সইতে রাজি নয়।
পুজো উদ্বোধনে বেরিয়ে ভিড় উপভোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এমনিতেই গাড়িতে সাধারণ নাগরিকের মতো তিনি যাতায়াত করেন। এ দিন রাস্তায় ভিড় দেখে তিনি বারবারই তাঁর গাড়ির গতি কমাতে বলে জনতাকেই এগিয়ে যেতে দেন। ভিড় সামলাতে কিছু পুজো ষষ্ঠী থেকে বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষী নামানোর কথা ভেবেছিল। ভিড়ের চোটে পঞ্চমীতেই তাঁরা পরিকল্পনা পাল্টে নিয়েছেন। |
উৎসবের রোশনাইয়ে উজ্জ্বল পঞ্চমীর সন্ধ্যা। পথে মানুষের ঢল,
যানজটও। শুক্রবার, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে। ছবি: সুমন বল্লভ |
উত্তরের কাশী বোস লেনের এক পুজোকর্তা সোমেন দত্ত বলেন, “পঞ্চমীতেই ভিড় সামলাতে মণ্ডপের সামনে দড়ি ফেলতে হয়েছে।” সন্তোষপুর লেকপল্লির সোমনাথ দাসও বলেন, “ঠাকুর দেখার উৎসাহ দিন-দিনই বাড়ছে।”
শহরে দু’একটি বিক্ষিপ্ত গোলযোগ অবশ্য ঘটেছে। কুমোরটুলি থেকে লরিতে মণ্ডপে যাওয়ার পথে উত্তরের মদনমোহনতলায় মাথার উপরের তারে আটকে গিয়েছিল একটি পুজোর প্রতিমা। উদ্যোক্তারা তার ছিঁড়ে দেবীকে উদ্ধারের চেষ্টা করলে তাঁদের বাধা দেন এক পুলিশকর্মী। অনুপকুমার বাগচী নামে ওই কনস্টেবলকে নিগ্রহের অভিযোগে সাত জনের নামে শ্যামপুকুর থানায় মামলা রুজু করা হয়েছে।
অন্য দিকে, গাড়ির ভিড় বাড়ায় যানজট হলেও বড়সড় কোনও বিশৃঙ্খলা হয়নি। ট্রাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, মহাত্মা গাঁধী রোড, গড়িয়াহাট ও পার্ক সার্কাস কানেক্টরে বড় ধরনের যানজট ছিল। বিবেকানন্দ রোড, অরবিন্দ সরণি, রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড, চেতলা সেন্ট্রাল রোডেও গাড়ি দীর্ঘ ক্ষণ আটকে থেকেছে। যান চলাচলের গতি থমকেছে দক্ষিণ শহরতলির নেতাজি সুভাষ রোড, পুঁটিয়ারি, ডায়মন্ড হারবার রোড, জেমস লং সরণি, রাজা সুবোধ মল্লিক রোডেও।
চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে পথের মাঝখানে লোহার রেলিং তুলে কংক্রিটের বুলেভার্ড তৈরি করার ফলে রাস্তার মাপ ছোট হয়ে গিয়েছিল আগেই। পুজোর জন্য বাঁশের ব্যারিকেডের সৌজন্যে গাড়ি চলাচলের জায়গা আরও কমেছে। একই সমস্যা হাজরা থেকে এক্সাইড মোড় পর্যন্ত আশুতোষ মুখার্জি রোডে।
বোধনের প্রাক-পর্বে পুজোকর্তাদের উৎকণ্ঠার নেপথ্যে আসল কারণ কিন্তু অন্য। ‘এই বিচারকদের গাড়ি আসছে! তৈরি থাক সব!’ গলায় ব্যাচ ঝোলানো স্বেচ্ছাসেবকদের কাছে মোবাইলে কমিটির মাথাদের নির্দেশ।
শহরতলির পুজো-উৎসাহীদের ঢল নামায় দুপুর থেকে ঠাসা ভিড় মেট্রো বা লোকাল ট্রেনে। বোধনের আগে শিয়ালদহ স্টেশনের কছে ঢাকির বাদ্যিই উৎসবের সুরটা বেঁধে দিয়েছে। |