বিমান বাঁচাতে পানীয়ের শেয়ারই ভরসা মাল্যর
প্রায় কবরে চলে যাওয়া কিংফিশার বিমানসংস্থাকে টেনে তুলতে পানীয় প্রস্তুতকারক সংস্থায় নিজের জমিয়ে রাখা শেয়ার বিক্রি করে দিতেও আপত্তি নেই তাঁর। ঘনিষ্ঠ মহলে নিজের এমন ইচ্ছের কথা জানিয়েও দিয়েছেন সংস্থার কর্ণধার বিজয় মাল্য।
বাজারে কিংফিশারের দেনা এখন প্রায় ৭৫০০ কোটি টাকা। ব্যাঙ্কের ঋণ ছাড়া তেল সংস্থাগুলিও কোটি কোটি টাকা পায়। বিমানসংস্থা সূত্রের খবর, পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, ঋণের ভার না কমানো পর্যন্ত কেউই এখানে টাকা ঢালতে নারাজ। কেন্দ্র বিমান পরিবহণে বিদেশি লগ্নির পরিমাণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেও কোনও বিদেশি সংস্থা কিংফিশারে টাকা ঢালতে রাজি হচ্ছে না।
বিজয় মাল্যের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা গিয়েছে, এই বিপুল ঋণের ভার কমাতেই নিজের মালিকানাধীন আর একটি সংস্থা ইউনাইটেড স্পিরিট লিমিটেড (ইউএসএল)-এ তাঁর নিজস্ব ২৭ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে দেবেন বলে মনস্থ করেছেন মাল্য। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, সম্প্রতি মাল্য তাঁদের জানিয়েছেন, শেয়ার বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া যাবে, তা ঢালা হবে ডুবতে বসা কিংফিশার বিমানে।
ঋণের বোঝার সঙ্গে যোগ হয়েছে কর্মী অসন্তোষও। এই দুইয়ের চাপে আপাতত উড়ান বন্ধ রেখেছে কিংফিশার। সাত মাসের বেতন বকেয়া থাকায় পাইলট ও ইঞ্জিনিয়ারেরা বেঁকে বসেছেন। কর্মী অসন্তোষের কারণে লক-আউট ঘোষণা করেছেন কর্তৃপক্ষ। বিমান মন্ত্রকের একটি সূত্র জানাচ্ছে, যে ভাবে কিংফিশারের সমস্ত বিমান বসে গিয়েছে, তাতে নভেম্বরে তাদের বিমান পরিবহণের লাইসেন্সই বাতিল হয়ে যেতে পারে। মাল্য-ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, সেই পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয়, সে জন্যই ইউএসএল-এ নিজের শেয়ার বিক্রির সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন মাল্য।
ইউনাইটেড ব্রুয়ারিজ (ইউবি)-এর আওতাধীন ইউসিএল দেশের অন্যতম পানীয় প্রস্তুতকারক সংস্থা। মাল্যর ঘনিষ্ঠ মহলের বক্তব্য, ইউএসএল-এ ইউবি-র যে শেয়ার রয়েছে, তা বিক্রি করা হবে না। ইউএসএল-এ মাল্যর নিজের যে শেয়ার আছে, সেটাই বাজারে ছেড়ে টাকা তোলার কথা ভাবছেন তিনি। মাল্য-ঘনিষ্ঠ এক কর্তার কথায়, “সংস্থার যা অবস্থা, আমরা মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত। তবে বিজয় মাল্য আমাদের উৎসাহিত করে যাচ্ছেন। বিমান সংস্থা তাঁর কাছে এতটাই প্রিয় যে, তিনি কোনও অবস্থাতেই তা হাতছাড়া করবেন না।”
টানা উড়ান বন্ধ থাকায় বিমান পরিবহন নিয়ন্ত্রক ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ) শো-কজ করেছিল কিংফিশারকে। আজ, শনিবার সেই শো-কজের জবাব দেওয়ার কথা ছিল। ডিজিসিএ কর্তা অরুণ মিশ্র রাতে জানান, শুক্রবারই জবাব পাঠিয়ে দিয়েছে কিংফিশার। নিয়মিত উড়ান চালু করার জন্য ডিজিসিএ-এর কাছ থেকে আরও সময় চেয়েছে তারা। সংস্থার তরফে লক-আউটের মেয়াদ বাড়িয়ে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু ৫ নভেম্বরের আগে ইন্টারনেটে কিংফিশারের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান সংস্থার কর্তারা ভেবেছিলেন, অসন্তুষ্ট কর্মীদের বুঝিয়ে কাজে ফেরানো যাবে। কিন্তু চলতি সপ্তাহে কর্মীদের সঙ্গে কতৃর্র্পক্ষের বৈঠক ভেস্তে গিয়েছে। মাল্যর ঘনিষ্ঠ মহল জানাচ্ছে, তিনি এখন বিদেশে। এই মাসের শেষে ভারতে ফর্মুলা ওয়ান উপলক্ষে তাঁর ফেরার কথা। ফলে তার আগে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করার সুযোগ নেই কর্মীদের। তবে সেই বৈঠকের আগেই বকেয়া বেতন মিটিয়ে নিয়মিত উড়ান চালানো যাবে বলে সংস্থা আশাবাদী। চলতি সপ্তাহে কর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে কিংফিশার কর্তৃপক্ষ জানায়, বকেয়া সাত মাসের বেতনের মধ্যে পুজো এবং দীপাবলির আগে দু’মাসের বেতন দিয়ে দেওয়া হবে। তাঁরা কাজে যোগ দিলে এখন নিয়মিত বেতনও পাবেন। বাকি পাঁচ মাসের বেতন পরে দেওয়া হবে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের এই আবেদনে সাড়া দেননি পাইলট ও ইঞ্জিনিয়াররা। আগামী সোমবার, অষ্টমী পুজোর দিন মুম্বইয়ে ফের বৈঠকে বসবেন দু’পক্ষ। বিমানসংস্থা সূত্রের খবর, সাত মাসের বকেয়া বেতন এখনই দিতে হবে এই দাবি থেকে সরে আসতে পারেন বিক্ষুব্ধ কর্মীরা। একটি সূত্রের দাবি, এখন এক লপ্তে তিন মাসের বেতন হাতে পেলেই বিক্ষুব্ধ কর্মীরা কাজে যোগ দিতে পারেন বলে ইঙ্গিত মিলেছে। কেন এই নরম হওয়ার ইঙ্গিত? ডিজিসিএ-এর নিয়ম অনুসারে, কোনও পাইলট যদি এক টানা এক মাস বিমান না চালান, তাঁকে নতুন করে পরীক্ষামূলক উড়ান চালিয়ে পাশ করে আসতে হবে। তিন মাস বিমান না ওড়ালে নতুন করে লাইসেন্স নিতে হবে। ২০ দিন ধরে কিংফিশারের উড়ান বন্ধ। ফলে নিজেদের পেশাও যে সঙ্কটে, তা মেনে নিচ্ছেন পাইলটরা। একই অবস্থা ইঞ্জিনিয়ার এবং বিমানসেবিকাদেরও। কারণ তাঁদের ক্ষেত্রেও ডিজিসিএ-র এই নিয়ম প্রযোজ্য। ফলে অচলাবস্থা অব্যাহত থাকলে আখেরে যে তাঁদের পেশার ক্ষতি, তা বুঝে গিয়েছেন পাইলট-ইঞ্জিনিয়ারদের অনেকেই। তাই নরম হওয়ার ইঙ্গিত বলে জানা গিয়েছে।
শীতকালীন যে উড়ানসূচি সমস্ত বিমানসংস্থা ডিজিসিএ-এর কাছে জমা দিয়েছে, সেই তালিকায় কিংফিশার নেই। সংস্থার এক কর্তার কথায়, “সমস্যা মিটলে সূচি জমা দেব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.