নিজস্ব সংবাদদাতা • জলপাইগুড়ি |
দেওয়ালে লাগানো ঘড়িতে একটা বাজল, দীর্ঘনিশ্বাস ফেললেন প্রধান শিক্ষক-না, আজকেও নেই। কী নেই? টিনের চালের পাকা প্রাথমিক স্কুল বাড়ি, অফিসঘর, রান্নাঘর, শৌচাগার, নলকূপ, ব্ল্যাকবোর্ড, চক-ডাস্টার, টেবিল ফ্যান, বইপত্র সবই তো আছে। নেই শুধু ছাত্র ছাত্রী। প্রতিদিন শিক্ষক শিক্ষিকারা আসেন, হাজিরা খাতায় সই করেন, ঘণ্টাতিনেক অপেক্ষাও করেন। তারপর স্কুল বন্ধ করে ফিরে যান। স্কুলের খাতা বলছে, চলতি মাসের ১ তারিখে দুজন এসেছিল, তারপর থেকে কাউকেই আর দেখা যায়নি। জলপাইগুড়ি পুর এলাকার সতীশ লাহিড়ী জুনিয়ার বেসিক বিদ্যালয়। কাগজে কলমে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১৯। সাম্প্রতিক সময়ে ৩ জনের বেশি ছাত্র একসঙ্গে স্কুলে আসেনি। চলতি বছরের ১০ মাসের হিসাব ৯ মাসই স্কুল ছিল ছাত্র শূন্য। বছর দেড়েক স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে ছাত্র না আসার কথা লিখিতভাবে স্কুল সংসদকে জানানো হয়েছিল। শিক্ষক শিক্ষিকারাও অন্য স্কুলে বদলির আবেদন করেছিলেন বলে দাবি করেছেন। দেড় বছর ধরে এমনই চলছে. কিছুটা দূরেই দেবনগর নিম্ন বুনিয়াদী প্রাথমিক বিদ্যালয়। এখানে ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা ২৩। রয়েছেন চার জন শিক্ষক। স্কুলের হাজিরা খাতায় দেখা গেল প্রতিদিন গড়পরতা পাঁচ থেকে ছয় জন ছাত্রছাত্রী আসে। স্কুলের শিক্ষক কিংশুক বসুর কথায়, আমরা ছাত্রদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্কুলে নিয়ে আসি। স্কুলে ছাত্র সংখ্যা আরও কমে গিয়েছিল। আমরা সকলের বাড়ি যাওয়াতে সংখ্যাটা কিছুটা বেড়ে ২৩ হয়েছে। শুধু এই দুটি স্কুল নয় জলপাইগুড়ি জেলায় অন্তত ৬০০টি এমন স্কুল রয়েছে যেখানে ছাত্রছাত্রী সংখ্যা ১০ থেকে ২৫ জন। অথচ শিক্ষক সংখ্যা পাঁচ বা বেশি। কেন স্কুলে ছাত্র আসছে না। সতীশ লাহিড়ী স্কুলের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক কৃষ্ণেন্দু সান্যাল বললেন, “গত চার পাঁচ বছরে এলাকার আশেপাশে অনেক শিশুশিক্ষা কেন্দ্র, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র ও সরকারি বেসরকারি স্কুল তৈরি হয়েছে। সে কারণেই ছাত্র সংখ্যা দিন দিন কমে চলেছে।” প্রশ্ন উঠেছে, প্রাথমিক স্তরে যেখানে ৪০ জন ছাত্র পিছু একজন করে শিক্ষক থাকার কথা, সেখানে ১৯ জন ২০ জন ছাত্রের স্কুলে চার-পাঁচ জন করে শিক্ষক শিক্ষিকা রেখে ছাত্র সংখ্যা বেশি সেই স্কুলগুলিকে কেন বঞ্চনা করা হচ্ছে। জলপাইগুড়ি জেলা স্কুল শিক্ষা সংসদের তথ্য অনুযায়ী জেলায় প্রাথমিক স্কুলের সংখ্যা ২০২৯। এর মধ্যে ১৯টি স্কুলে মাত্র একজন শিক্ষক রয়েছে। শিক্ষকের অভাব রয়েছে, ১২৩২টি স্কুলে। জলপাইগুড়ি শহরেই সদর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় পাঁচশো জন ছাত্র থাকলেও শিক্ষক সংখ্যা মাত্র ৩, ধুপগুড়ির প্রামাণিক পাড়া স্কুলে ১২০ জন ছাত্র অথচ শিক্ষক মাত্র একজন। জেলা শিক্ষা সংসদের সভাপতি ধর্তিমোহন রায় বলেন, “একটা সময় ইচ্ছেমত পোস্টিং হয়েছে। কিন্তু এই ব্যবস্থা আর চলবে না। দ্রুত ওই শিক্ষক শিক্ষিকাদের অন্যত্র বদলি করা হবে।” |