কোথাও পিলে চমকে দেওয়া বাঘের হালুম! কোথাও আলোর স্রোতে ভেসে যাওয়া। পুজোয় শিলিগুড়িতে রয়েছে এমনই নানা চমক।
বিগ বাজেট ও প্রাচীন পুজোর সংখ্যা রয়েছে আগের মতোই। এনজেপি সেন্ট্রাল কলোনি, উজ্জ্বল সঙ্ঘ, হায়দরপাড়া স্পোর্টিং, মিলনপল্লি, রথখোলা, রবীন্দ্র সঙ্ঘ, জাতীয় তরুণ সঙ্ঘ, সঙ্ঘশ্রী, গুরুংবস্তি, চম্পাসারির মতো পুর এলাকার মধ্যে থাকা জায়গার পুজোয় যে যথারীতি ভিড় উপচে পড়বে তা নিয়ে উদ্যোক্তাদের কোনও সন্দেহ নেই। অন্য চমক দিতে চাইছেন অনেকেই। শিলিগুড়ি শহরের উপকণ্ঠে সেই ‘উত্তরায়ণ’ উপনগরীতে তৈরি হয়েছে দক্ষিণ ভারতের ভেলোরের লক্ষ্মী-নারায়ণ স্বর্ণ মন্দিরের আদলে মণ্ডপ। উত্তরায়ণ সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা চিকিৎসক তুষারকান্তি ঘোষ জানান, সাবেকি প্রথা মেনে হবে কুমারী পুজোও। রয়েছে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। দশহরার দিনে ‘রাবণ বধ’-এর এক বিশাল আয়োজন রয়েছে। ৫৪ বছরে পড়ল খেলাঘর মোড়ের প্রগতি সঙ্গে পুজো। প্রবীণ চিত্রকর দীপঙ্কর দত্ত অনেক দিন পরে রং-তুলি সরিয়ে রেখে মণ্ডপ তৈরি করছেন। যার থিম ‘আলোকের এই ঝর্ণাধারায়’। যেখানে ঢোকার মুখে তৈরি হয়েছে একাধিক স্তম্ভ। মাঝখানে আলোর খেলা।
এবার বাঘের গল্প! ডাবগ্রামের সুর্যনগর ফ্রেন্ডস ইউনিয়নের এবার সুবর্ণজয়ন্তী। ক্লাবের পুজো অবশ্য ৫৮ বছরে পড়ল। আইফেল টাওয়ারের ধাঁচে গেট। সূর্যনগরের বিশাল মাঠে এমনিতেই মেলার মতো ভিড় উপচে পড়ে। এবার সেখানে সাজানো-গোছানো মেলারই আয়োজন করেছেন উদ্যোক্তারা। সেই মাঠে মেলার দেখার সময়ে আচমকা বাঘের হালুম শুনতে পাবেন। উদ্যোক্তাদের পক্ষে অঞ্জন পাল, বাবলু পাল, দ্বিজু মালাকাররা জানান, খাঁচার মধ্যে থাকা বৈদুতিন বাঘ, আলো ও ধ্বনির মেলবন্ধন নিশ্চয়ই জনজোয়ার তৈরি করবে। এলাকার কাউন্সিলর তথা শিলিগুড়ির মেয়র পারিষদ কৃষ্ণ পাল বললেন, “পুজোর পরেই মাঠটি সংস্কার করা হবে। সে জন্য ক্লাবের তরফে ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছে। আরও কিছু টাকা সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। মাঠটি নতুন করে তৈরি করা হবে।” সূর্যনগরের তুলনায় অনেক ছোট মাঠ অরুণোদয় সঙ্ঘের। তবে দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করতে আয়োজন কিন্তু, বেশ বড় মাপের। প্রাচীন পটচিত্রের ঐতিহ্যকে থিম করে মণ্ডপ সাজিয়েছে হাকিমপাড়ার ক্লাবটি। শতাধিক পটচিত্র মণ্ডপ জুড়ে। পটচিত্রে দেবদেবীরা তো বটেই, শ্রীরামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দের নানা জীবনের নানা দৃশ্যাবলীও দেখা যাবে। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের অরুণোদয় সঙ্ঘের পুজোর সঙ্ঘে ওতপ্রোত ভাবে যুক্ত থাকা কাউন্সিলর সুজয় ঘটক পরিবেশপ্রেমী হিসেবেও পরিচিত। কারণ, তিনি শিলিগুড়ি পুরসভার সাফাই বিভাগের মেয়র পারিষদের দায়িত্বে থাকাকালীনই শহরে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার বন্ধের ব্যাপারে কড়াকড়ি শুরু করেন। প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ মুক্ত শিলিগুড়ি’ গড়ার সূচনা যাঁর উদ্যোগে সেই সুজয়বাবু পুজোর পটচিত্রের থিমেও দেখছেন পরিবেশ-ভাবনা। তাঁর কথায়, “থার্মোকল, পলিথিন কিংবা প্লাস্টিকজাত জিনিস ব্যবহার না-করে দেশজ সম্পদ দিয়েও মণ্ডপ করা যায়। তাই পুজোর উদ্যোক্তারা পটচিত্রকে বেছে নিয়েছেন। আসা করব সকলকে এটা মুগ্ধ করবে।” |