বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা কারখানার লাইসেন্স বাতিল করে তাদের জমি নিজের হাতে নেওয়ার উদ্যোগ শুরু করেছে রাজ্য সরকার। উদ্ধার করা ওই সব জমি সরকারের ‘ল্যান্ড ব্যাঙ্ক’-এ নথিভুক্ত করা হবে। অন্য কোনও শিল্প গড়ে তোলার কাজে ওই জমি ব্যবহার করা যাবে বলে মনে করছে রাজ্য সরকার।
১৯৪৮ সালের ফ্যাক্টরি আইন বলছে, একটি কারখানা বছরে এক দিনও যদি চালু থাকে, তা হলে সেটির লাইসেন্স নবীকরণ করতে সরকার বাধ্য। কিন্তু বহু কারখানাই বছরের পর বছর বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। শ্রম দফতরের অধীন ফ্যাক্টরি ইনস্পেক্টর বিভাগের আধিকারিকদের বক্তব্য, এক বছর বন্ধ থাকলে সরকার কারখানার লাইসেন্স বাতিল করে না। অন্তত তিন বছর সময় দেওয়া হয়। এর পর পরিদর্শন, সতর্কীকরণ ইত্যাদির পরে বন্ধ কারখানার লাইসেন্স বাতিল করা হয়। এই দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পরও পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের হলদিয়া, খড়্গপুর, ঝাড়গ্রাম, বালিচক, ডেবরা ইত্যাদি এলাকায় ২৫টি কারখানা দীর্ঘকাল বন্ধ পড়ে রয়েছে বলে ফ্যাক্টরি ইন্সপেক্টরের বিভাগ হিসাব পেয়েছে। সব কটিকেই লাইসেন্স বাতিলের চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে সরকারি সূত্রে খবর।
নদিয়া থেকেও বন্ধ কারখানার একটি তালিকা পেয়েছে ফ্যাক্টরি ইনস্পেক্টরের বিভাগ। কল্যাণীতে বিভাগের আঞ্চলিক শাখা থেকে মোট ৭৬টি বন্ধ কারখানার তালিকা সদর দফতরে পাঠানো হলেও মাত্র ১১টি ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার সহ অধিকর্তা। এ ছাড়া, শিলিগুড়ি, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান, হুগলি, হাওড়া, দুই ২৪ পরগনা ইত্যাদি জেলায় দীর্ঘকাল বন্ধ থাকা কারখানার তালিকা সরকারের হাতে পৌঁছেছে।
শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু জানান, বন্ধ কারখানার লাইসেন্স বাতিল করার দুটি উদ্দেশ্য। যে-জমিতে কারখানাটি রয়েছে, সেটি আবার সরকারের হাতে ফিরিয়ে নেওয়া, যাতে অন্য শিল্পের জন্য ব্যবহার করা যায়। কোনও সংস্থা কোথাও কারখানা গড়তে চাইলে অনেক সময় কাগজে-কলমে দেখা যায়, ঠিক সেখানে অথবা তার পাশেই একটি কারখানা রয়েছে। তাই দ্বিতীয় সংস্থাটিকে অনুমতি দিতে সমস্যা হয়। অথচ বাস্তবে হয়তো দেখা যায়, আগে থেকে সেখানে একটি কারখানা থাকলেও তা আসলে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। এখন এই ব্যাপারে তাঁরা শিল্প-বাণিজ্য দফতরের সঙ্গেও নিরন্তর যোগাযোগ রেখে চলছেন বলে পূর্ণেন্দুবাবু জানান। মন্ত্রীর আরও বক্তব্য, “নথিভুক্ত কারখানা ছাড়া আরও প্রচুর কারখানা কাজ করছে। আইন মোতাবেক সবই নথিভুক্ত করানোর কথা। সরকারের প্রচুর রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে। সেগুলিকে খুঁজে নথিভুক্ত করানোর চেষ্টা হচ্ছে।”
বন্ধ কারখানার লাইসেন্স বাতিল করার প্রক্রিয়া অবশ্য নতুন নয়। নতুন হল সেই জমি ফের ব্যবহারের প্রক্রিয়া। এ পর্যন্ত শিল্পের জন্য ব্যবহৃত জমির পরিমাণ, তাদের অবস্থান, কোথায় কতটা জমি ব্যবহৃত, কতটা অব্যবহৃত ইত্যাদি পরিসংখ্যান সংগ্রহের উদ্যোগ শিল্প-বাণিজ্য দফতরের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে।
অনেক ক্ষেত্রেই সরকারি পরিদর্শকেরা দেখেছেন, একটি নির্দিষ্ট শিল্পের বন্ধ কারখানার জমিতে কোনও প্রভাবশালী প্রোমোটার স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে হাত করে আবাসন তৈরি করে বিক্রি করে দিয়েছেন। তা ছাড়া, একটি সাধারণ শিল্পের বন্ধ হয়ে থাকা কারখানার জমিতে বিপজ্জনক রাসায়নিক বা দূষণ ছড়ায় এমন কারখানা তৈরির রিপোর্টও পাওয়া গিয়েছে। এগুলির অধিকাংশই বিনা অনুমতিতে চলছে। শ্রমসচিব পি রমেশকুমার বলেন, “এই সব বেআইনি আবাসন ও কারখানার তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। ওই জমি কত দ্রুত সরকারের হাতে ফেরানো যায়, তা দেখা হচ্ছে।” |