শারদীয়া প্রাঙ্গণে সব দলই, স্টলের লড়াই জমজমাট
বার পুজোয় খুশি সিপিএম!
দলের নেতা-ক্যাডাররা প্রকাশ্যে পুজো-আচ্চায় নেই। কিন্তু প্রতি বছর শারদীয়ায় মণ্ডপের কাছাকাছি লাল শালুতে স্টল সাজিয়ে ওঁরা বসেন।
মার্ক্সীয় সাহিত্য, দলীয় পত্র-পত্রিকার সম্ভার থাকে স্টলে। এটা ওঁদের বহু দিনের রেওয়াজ।
গত বারই সেই রেওয়াজে ব্যাঘাত ঘটেছিল। বহু জায়গায় ‘পরিবর্তনের হাওয়া’য় ওঁরা স্টল করতে পারেননি। এ বার শারদীয়ায় সিপিএম পুজো-প্রাঙ্গনের জমি অন্তত খানিকটা পুনরুদ্ধার করেছে! গত বারের তুলনায় এ বার প্রায় চার গুণ বেশি স্টল হচ্ছে।
দলীয় দর্শনের উপরে বিভিন্ন বই সিপিএমের যে সংস্থা থেকে প্রকাশিত হয়, তার অধিকর্তা অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, এ বার কলকাতা ও জেলা মিলিয়ে প্রায় ছ’শো স্টল হচ্ছে। গত বার কলকাতা-সহ সারা রাজ্যে দেড়শো’র মতো স্টল হয়েছিল। শাসক দলের সন্ত্রাসেই তাঁরা স্টল করতে পারেননি বলে সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ। সেই পরিস্থিতি বদলের কারণ ব্যাখ্যা করে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেবের বক্তব্য, “গত বার অনেকেরই হতচকিত অবস্থা ছিল। এক বছরে আমরা অনেকটাই ধাতস্থ হয়েছি। যারা গুটিয়ে গিয়েছিল, তারা আবার সংগঠিত হচ্ছে। তৃণমূলের সরকারের আক্রমণ যে সংঘবদ্ধ ভাবে প্রতিরোধ করতে হবে, তা বুঝতে পারছে।”
পঞ্চায়েত ভোট সামনে। পুজোয় স্টল থেকেই প্রচারের কাজ শুরু করছে সিপিএম। একদা সিপিএমের লাল দুর্গ বলে পরিচিত বর্ধমানে এ বার স্টলের সংখ্যা বাড়াতে সংগঠিত ও পরিকল্পিত চেষ্টা হয়েছে। গত পুজোয় বর্ধমানে ৩০টির বেশি স্টল খোলা যায়নি বলে জানিয়েছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমল হালদার। এ বার স্টল হবে প্রায় ৮০টি। অমলবাবুর কথায়, “গত ১৬ মাসে রাজ্যের পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। মানুষ আমাদের দলের বইপত্র পড়তে চাইছেন। পার্টি কর্মীরাও বহু জায়গায় উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে এগিয়ে আসছেন। আমরা পরিকল্পিত ও সংগঠিত ভাবে এ বার বর্ধমানে স্টল করছি।” গত বার তৃণমূল-অধ্যুষিত দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সিপিএম প্রচুর স্টল করেছিল। এ বার দলের জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তীর নেতৃত্বে কাকদ্বীপ-নামখানার বিভিন্ন গ্রামে দলীয় বইপত্র বিক্রির ব্যবস্থা হয়েছে। সন্ত্রাস-মুক্ত এলাকাগুলিতে প্রত্যাশিত ভাবেই দলের বইপত্র বিক্রি বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা করেছে সিপিএম।
সিপিএমের স্টলগুলি থেকে মমতা-সরকারের মুণ্ডপাত হবে ধরে নিয়ে বসে নেই শাসক দল তৃণমূলও! দলীয় নেতৃত্বের দাবি, গত বারের তুলনায় তাঁদের স্টলের সংখ্যা এ বার অনেক বাড়ছে। প্রকৃত সংখ্যা অবশ্য কেউ জানাচ্ছেন না। তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি বলছেন, “পুজোর সময়ে বহু মানুষের সমাগম হয় মণ্ডপে। সরকারের বিরুদ্ধে সিপিএম এবং তাদের সহযোগীদের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আমরা বহু মানুষের কাছে প্রচারের সুযোগটা নিতে চাই।” নেতৃত্বের একাংশের অভিযোগ, রাজ্যের বহু মন্ত্রী জাঁকজমক করে পুজো করেছেন। কিন্তু অধিকাংশ মন্ত্রীদের পুজোয় দলের বা দলের মুখপত্রের স্টল হয়নি। রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী ও তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের নেতা পূর্ণেন্দু বসু অবশ্য সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এ বার কলকাতা ও সংলগ্ন জেলার কয়েকটি বড় পুজো মণ্ডপে তাঁর শ্রম দফতরের স্টল থাকবে। এমনকী, মণ্ডপে শ্রমিকদের কল্যাণমুখী প্রকল্পগুলির প্রচারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
সিপিএমের মতো এ বার পুজোয় স্টল দেওয়া নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে কংগ্রেসও। গত বার কংগ্রেসের মাত্র দু’টি স্টল হয়েছিল। এ বার কলকাতা, হাওড়া, মালদহ মিলিয়ে ১২টি স্টল হচ্ছে। এমনকী, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খাস তালুক হাজরা মোড়েও স্টল করছে কংগ্রেস। কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়ার বক্তব্য, “কংগ্রেসের বিরুদ্ধে যে ব্যাপক অপপ্রচার হচ্ছে, তা নিয়ে আমাদের বক্তব্য জানতে মানুষের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে। মানুষ সিপিএম, এসইউসি-র স্টল দেখেছেন। ক্ষমতায় এসে তৃণমূল কী করছে, তা-ও মানুষ দেখছেন। সেখানে কংগ্রেস কী করছে, তা জানতে তাঁরা আগ্রহী। তাই প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত এ বার বেশি করে স্টল করার।” এফডিআই-সহ অর্থনৈতিক সংস্কার নিয়ে কংগ্রেসের বক্তব্য বাংলা, হিন্দি ও উর্দুতে লিখে পুজোয় প্রচার করা হবে বলে মানসবাবু জানিয়েছেন।
স্টল নিয়ে সিপিএমের সঙ্গে টক্কর দেওয়ার চেষ্টা করে এসইউসি। এ বারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। দলের রাজ্য কমিটির সদস্য অমিতাভ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, গত বারের তুলনায় তাঁদের স্টলের সংখ্যা বেড়ে এ বার ১১৮৪টি হচ্ছে। সিপিএমের ধাঁচে এসইউসি-ও প্রত্যন্ত প্রান্তে দলের পত্র-পত্রিকা পৌঁছে দিতে এ বারই প্রথম ভ্রাম্যমান স্টল করছে।
পুজো প্রাঙ্গণেও বিপণি-লড়াই জমজমাট!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.