দায়ী কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতও
অনীহা সংস্কারে, প্রায় হাতছাড়া এডিবি-র ঋণ
ক দিকে কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাত। অন্য দিকে সংস্কার বিমুখতা। এই দুইয়ের জেরে উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্কের (এডিবি) ঋণ হারাতে বসেছে পশ্চিমবঙ্গ।
তৃণমূল ইউপিএ ছেড়ে আসার পর থেকেই এ রাজ্য সম্পর্কে কড়া মনোভাব নিয়েছে কংগ্রেস। প্রথমেই শিল্প সম্মেলন কলকাতা ছেড়ে পাড়ি দিয়েছে আগরায়। তার পর পঞ্চায়েত ভোট এগিয়ে আনার জন্য ভোটার তালিকা সংশোধন স্থগিত রাখার দাবি মানেনি কেন্দ্র। খোদ মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা উড়িয়ে এইমস ধাঁচের হাসপাতাল রায়গঞ্জেই হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী। আর এ বার কলকাতা পরিবেশ উন্নয়ন প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্য এডিবি-র ঋণ জোগাড়ের ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছে না কেন্দ্র।
প্রকাশ্যে অবশ্য রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতিকেই কারণ হিসেবে খাড়া করছে কেন্দ্র। বলা হচ্ছে, কর কাঠামোর পুনর্বিন্যাস করে আর্থিক ঘাটতি কমানোর স্পষ্ট কোনও দিশা রাজ্য সরকারের নেই। ফলে নেই নতুন ঋণ পরিশোধের ক্ষমতাও। আর সেই কারণেই এডিবি-র ঋণ পাওয়া এখন আর পশ্চিমবঙ্গের পক্ষে সম্ভব নয়।
বাম জমানায় কলকাতা পরিবেশ উন্নয়ন প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের জন্য দু’হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিল এডিবি। সেই টাকায় কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকায় নিকাশি ব্যবস্থার সংস্কার শুরু হয় ২০০২ সালে। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার আগেই, ২০০৯ সালে এডিবি-র কাছে নতুন প্রস্তাব দেয় কলকাতা পুরসভা তথা রাজ্য সরকার। সেই প্রস্তাবে নিকাশি ব্যবস্থা সংস্কারের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ করার পাশাপাশি কলকাতার তিন শতাব্দী প্রাচীন দীর্ণ জল সরবরাহ ব্যবস্থার খোলনলচে পাল্টে ফেলার কথা বলা হয়।
রাজ্যের প্রস্তাবে প্রাথমিক ভাবে আগ্রহ দেখায় এডিবি। টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিপোর্ট তৈরির জন্য অর্থও বরাদ্দ করে। কিন্তু সব তোড়জোড়ই ভেস্তে যেতে বসেছে।
গোড়ায় নিকাশি ব্যবস্থার দ্বিতীয় পর্যায়ের সংস্কার নিয়ে মূলত কারিগরি প্রশ্নে আপত্তি তুলেছিল এডিবি। তারা বলে, শহরের বৃষ্টির জল ও বর্জ্য জল নির্গমনের পথ আলাদা না করলে ঋণ দেওয়া যাবে না। কলকাতা পুরসভার মতে যে কাজ করা কার্যত অসম্ভব।
তার পর অবশ্য রাজ্যের আর্থিক স্বাস্থ্যের প্রসঙ্গ ওঠায় গোটা প্রস্তাবটা ঘিরেই সংশয় তৈরি হয়ে গিয়েছে। ফলে নিকাশি প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায় তো বটেই, জল সরবরাহ ব্যবস্থার সংস্কারও বিশ বাঁও জলে। এই প্রকল্পের জন্য ৩০ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছিল রাজ্য। কিন্তু কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক অবস্থা এখন এমনই যে, নতুন করে ঋণ নেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। কর কাঠামোর পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে আর্থিক ঘাটতি উল্লেখযোগ্য ভাবে কমানোর ব্যাপারেও বিশেষ আগ্রহ দেখাচ্ছে না রাজ্য। ফলে ঋণ পরিশোধের ক্ষমতাও বিশেষ বাড়ছে না। এই অবস্থায় নতুন ঋণের ব্যবস্থা করা মুশকিল।
তা ছাড়া, এডিবি-র ঋণের পূর্ব শর্তই হল, তাদের টাকায় জল সরবরাহ ব্যবস্থার সংস্কার হলে জল কর বসাতে হবে। সেই জল করের এমন পরিমাণ হতে হবে যাতে জল পরিশোধনের খরচ উঠেও কিছু উদ্বৃত্ত থাকে। কারণ, বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে যে পরিকাঠামো তৈরি করা হবে, তা টিকিয়ে রাখতেও অর্থ প্রয়োজন। কিন্তু জল করের বিষয়ে রাজ্যের অবস্থান স্পষ্ট নয়। এখনও পর্যন্ত কলকাতা শহরে জল কর বাবদ পুরসভা বছরে মাত্র ৩০ কোটি টাকা আদয় করে। এর মধ্যে ২৬ কোটি টাকা আদায় হয় বাণিজ্যিক সংযোগ (কমার্শিয়াল কানেকশন) থেকে। বাকি ৬ কোটি টাকা আদায় হয় মূলত বহুতলের বাসিন্দাদের থেকে।
তবে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক এই যুক্তি দিলেও রাজনীতির কারবারিদের মতে, তাদের নিরুৎসাহের নেপথ্যে রাজনৈতিক কারণও রয়েছে। কিছু দিন আগে পর্যন্ত এডিবি-র ঋণ পাইয়ে দেওয়ার ব্যাপারে সক্রিয় ছিল কেন্দ্র। কিন্তু তৃণমূল সমর্থন প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর সেই উৎসাহে ভাঁটা পড়েছে। এডিবি-র মতো আর্থিক সংস্থাগুলি কেন্দ্রের মাধ্যমেই রাজ্যকে ঋণ দেয়, তাই তাদের সবুজ সঙ্কেত ছাড়া এক পা-ও এগনো সম্ভব নয়। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যে পা ফেলতে কেন্দ্রের ঘোর অনীহা।
জল সরবরাহ ব্যবস্থার সংস্কার না হলে কী ক্ষতি হতে পারে কলকাতার? এই মহানগরীর জল সরবরাহ ব্যবস্থা ব্রিটিশ আমলে তৈরি। সেই পাইপলাইন এখন কার্যত ভেঙে পড়তে বসেছে। তাই এই প্রকল্পে পুরনো জরাজীর্ণ পাইপ সরিয়ে নতুন পাইপ পাতার কথা বলা হয়েছে। এর পাশাপাশি গার্ডেনরিচ ও পলতা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট দু’টির ক্ষমতা ক্ষমতা দিনে ১২০ কোটি ১০ লক্ষ লিটার থেকে বাড়িয়ে অন্তত ১৩০ কোটি ৫০ লক্ষ লিটার করার প্রস্তাব রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে সরবরাহ ব্যবস্থা যথাসম্ভব নিশ্ছিদ্র করে ২৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন জল সরবরাহের লক্ষ্য।
কিন্তু এডিবি-র ঋণ পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় বাড়তি চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে কলকাতার জল সরবরাহ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ঘিরে ঘোরতর সংশয় তৈরি হল।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.