ছাত্রপরিষদ ও তৃণমূল ছাত্রপরিষদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হল লালবাগ সুভাষচন্দ্র সেন্টেনারি কলেজ চত্বরে। বৃহস্পতিবার দুপুরের ওই ঘটনায় দু’দলের দাবি, তাঁদের মোট ৭ জন আহত হয়েছেন। তার মধ্যে ৫ জনকে লালবাগ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে বলে দু’পক্ষের দাবি। পুলিশ অবশ্য জানায়, ওই ছাত্র-সংঘর্ষের ঘটনায় ৫ জন জখম হন। তার মধ্যে ৪ জন হাসপাতালে ভর্তি।
এদিকে বৃহস্পতিবারের ছাত্র-সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের ‘নিরপেক্ষ’ ভূমিকা নিয়ে খোদ তৃণমূলই অভিযোগ করেছে। মৎস্য প্রতিমন্ত্রী তৃণমূল কংগ্রেসের সুব্রত সাহা বলেন, “ছাত্রপরিষদের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে পুলিশ আমাদের সদস্য-সমর্থকদের উপরেই লাঠি চালিয়েছে বলে শুনেছি। পুলিশ যে কোনও ঘটনায় নিরপেক্ষ ভূমিকা গ্রহণ করবে এটাই চাই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নৈরাজ্য কিছুতেই বরদাস্ত করা হবে না। গোটা বিষয়টি কড়া হাতে মোকাবিলা করতে প্রশাসনকে বলেছি।”
মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মৃণাল মজুমদার বলেন, “পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দু’পক্ষের সংঘর্ষ ঠেকায়। ছাত্র সংঘর্ষ এড়াতে পুলিশ নিরপেক্ষ ভাবেই এবং কলেজ অধ্যক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই যাবতীয় পদক্ষেপ করেছে।” |
ছাত্র পরিষদের দাবি, লালবাগ কলেজের এক ছাত্র জখম হয়ে কলকাতার নীলরতন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি থাকায় তাঁর চিকিৎসার খরচের জন্য ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করছিলেন তাঁরা। এই কলেজে ছাত্রপরিষদের দখলে রয়েছে ছাত্রসংসদ। এর আগেও গত দু’দিন তাঁরা এই কাজের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু এদিন ওই অর্থ সংগ্রহ করার সময়ে তৃণমূল ছাত্রপরিষদের সদস্যরা তাতে বাধা দেন। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বচসা থেকে বিবাদ বাধে। ছাত্রপরিষদের জেলা সম্পাদক রুবেল শেখ বলেন, “এদিন বহিরাগত দুষ্কৃতীদের সঙ্গে নিয়ে আমাদের সদস্যদের উপরে হামলা চালায় তৃণমূল ছাত্রপরিষদ। রড-লাঠি দিয়ে মারধর করে। সেই সঙ্গে ছাত্রপরিষদের সদস্য-সমর্থকদের লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি করে তারা।”
মুর্শিদাবাদ থানা থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে ছাত্রপরিষদ সদস্যরা বহিরাগতদের গ্রেফতারের দাবিতে কলেজ অধ্যক্ষ-সহ অন্য শিক্ষকদের ঘেরাও করে রাখে। পরে সন্ধ্যা নাগাদ ঘেরাও তুলে নিয়ে ছাত্রপরিষদের সদস্য-সমর্থকরা কলেজ থেকে বাইরে বের হওয়ার চেষ্টা করলে তৃণমূল ছাত্রপরিষদের সদস্য-সমর্থকরা ফের হামলা চালায় বলে অভিযোগ।
সন্ধ্যা নাগাদ দু’পক্ষের মধ্যে ফের একপ্রস্থ সংঘর্ষ হয়। খবর পেয়ে কমব্যাট ফোর্স ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। এর পরেই পুলিশ দু’পক্ষের সংঘর্ষ থামিয়ে ছাত্রপরিষদের সদস্য-সমর্থকদের কলেজ থেকে বের করে দিতে উদ্যোগী হয়। পরে কলেজে থেকে বেরিয়ে ছাত্রপরিষদ মুর্শিদাবাদ থানা ঘেরাও করে।
সুব্রতবাবুর মতোই তৃণমূলের জেলা নেতা তথা তৃণমূল ছাত্রপরিষদের জেলা পর্যবেক্ষক বরুণ দত্ত বলেন, “এদিন পুলিশের ভূমিকা মোটেই ভাল ছিল না। বহরমপুর থেকে ছাত্রপরিষদের বহিরাগত ছাত্ররা এদিন লালবাগ কলেজে গিয়ে আমাদের ছেলেদের মারধর করে। পুলিশকে দেখে আমাদের ছেলেরা যখন সাহস সঞ্চয় করে অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশই আমাদের ছেলেদের উপরে লাঠি চালিয়েছে।” পুলিশ সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এদিন অবশ্য ঘটনার শুরুতেই কলেজ অধ্যক্ষ মুর্শিদাবাদ থানায় ফোন করে বিষয়টি জানান। এদিকে মুর্শিদাবাদ থানার এএসআই অসীম প্রামাণিকের নেতৃত্ব চার জন পুলিশকর্মী যান। অভিযোগ, সেই সময়ে পুলিশের পক্ষ থেকে কলেজ অধ্যক্ষ-সহ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উদ্দেশ্যে কুরুচিকর মন্তব্য করা হয়েছে। মৃণালবাবু বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
কলেজ অধ্যক্ষ প্রভাস সামন্ত বলেন, “দু’পক্ষের সংঘর্ষে ঘটনায় আমার কাছে অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ জমা পড়েছে। আমি তা থানায় পাঠিয়ে দিয়েছি। সেই সঙ্গে গোটা বিষয়টি জানিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফেও একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।” |