দেশের প্রথম সারির ক্লাবগুলোকে নিয়ে সর্বভারতীয় ফুটবল টুর্নামেন্ট চলল সরকারি স্টেডিয়ামে। অথচ রাজের ক্রীড়ামন্ত্রীই কিছু জানলেন না!
রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী ও তাঁর দফতরকে কার্যত অন্ধকারে রেখেই শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে ফেডারেশন কাপ ফুটবল ম্যাচ সংগঠনের এই অভিযোগ উঠেছে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব এবং শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পর্ষদের বিরুদ্ধে। ‘বিব্রত’ গৌতমবাবুর বক্তব্য, “যা-ই হোক, আমরা কথা বলে মিটিয়ে নেব। আসল হল শিলিগুড়িতে খেলাধুলোর উন্নয়ন। সেটাই বেশি জরুরি।” ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
গত ১ সেপ্টেম্বর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জলপাইগুড়ি থেকে রিমোট কন্ট্রোলে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে ফ্লাড লাইটের উদ্বোধন করেন। ২০ অক্টোবর সেখানে শুরু হয় ফেড কাপ। টানা দশ দিন ধরে, গ্রুপ লিগের ম্যাচ থেকে ফাইনাল পর্যন্ত।
কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের রক্ষণাবেক্ষণ-সহ সব দায়িত্ব ক্রীড়া দফতর গঠিত স্টেডিয়াম কমিটির হাতে। পদাধিকারবলে যার সভাপতি দার্জিলিঙের জেলাশাসক, সহ-সভাপতি শিলিগুড়ির মহকুমাশাসক। ক্রীড়া দফতরের অভিযোগ, কমিটিকে কিছু না-জানিয়ে ওই স্টেডিয়ামে ফেড কাপের আয়োজন করেছিল শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পর্ষদ। এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী হওয়ার সুবাদে পুরো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন গৌতম দেব। ওই পর্ষদের মাথায় রয়েছেন শিলিগুড়ির মহকুমাশাসক। তাঁকেও যাবতীয় উদ্যোগের বাইরে রাখা হয় বলে অভিযোগ। ক্রীড়া দফতর সূত্রের খবর: এর প্রতিবাদে মহকুমাশাসক বৈভব শ্রীবাস্তব পর্ষদের পদে ইস্তফা দিতে চেয়ে চিঠি লিখেছেন ক্রীড়াসচিব ভগবতীপ্রসাদ গোপালিকাকে। তিনি অবশ্য প্রতিক্রিয়া জানাতে চাননি। |
নিয়ম হল, সরকারের অধীন স্টেডিয়ামে খেলা হলে টিকিটে সরকারি সিলমোহর থাকবে। কিন্তু কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে ফেড কাপের ম্যাচে টিকিটের গায়ে সরকারি সিল ছিল না। তাই টিকিট বিক্রি থেকে রাজ্যের কত আয় হয়েছে, ক্রীড়া দফতর তা জানতে পারেনি। ফেডারেশন কাপের খেলা দেখার জন্য খোদ ক্রীড়ামন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে। ফলে মন্ত্রী ওই সময়ে কলকাতায় থাকলেও ফেড কাপের সূচি সম্পর্কে অন্ধকারে ছিলেন। ক্রীড়ামন্ত্রীর নিজের কী প্রতিক্রিয়া?
বিষয়টি এড়িয়ে মদনবাবু বলেন, “আমি অনেক সময়ে পরিবহণের বিভিন্ন ব্যাপারে ব্যস্ত থাকি। তা ছাড়া ওখানে গৌতম ছিল।” তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ এক তৃণমূল নেতার সখেদ মন্তব্য, “সর্বভারতীয় ফুটবল টুর্নামেন্টে রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রীকে একটা আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হবে না! রীতিবিরুদ্ধ কাজ হয়েছে।” গৌতমবাবুর দাবি, “ক্রীড়ামন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ব্যস্ততার কারণে উনি যেতে পারেননি।” টুর্নামেন্ট নিয়ে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সক্রিয় হয়েছেন ক্রীড়ামন্ত্রী। তাঁর দফতর সূত্রের খবর, মন্ত্রীর নির্দেশে গত সপ্তাহে শিলিগুড়ি গিয়েছিলেন ক্রীড়া-যুগ্মসচিব প্রদীপকুমার জানা। শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পর্ষদের কাছে তিনি এ বাবদ আয়-ব্যয়ের হিসেব চেয়েছেন। গৌতমবাবু বলেন, “ছোটখাটো ত্রুটিবিচ্যুতি হতেই পারে। ক্রীড়ামন্ত্রী ও যুগ্মসচিবের সঙ্গে কথা হয়েছে। হিসেবও জমা দেব।” স্টেডিয়াম কমিটির বৈঠকে স্থির হয়েছে, এখন থেকে ওই স্টেডিয়ামে খেলার আয়োজন করতে গেলে উদ্যোক্তাদের ম্যাচপিছু এক লাখ টাকা ফি দিতে হবে। নৈশালোকে খেলা হলে ফি কুড়ি হাজার বাড়বে। আর মাঠে হোর্ডিং লাগালে মোট আয়ের ৩০% পাবে স্টেডিয়াম কমিটি।
জেলা প্রশাসন এবং অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন (এআইএফএফ) ফেড কাপে অনিয়মের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে। দার্জিলিঙের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনের কথায়, “মহকুমা ক্রীড়া পর্ষদ পুরো টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছে। সব কিছু ভাল ভাবে, নিয়ম মেনে হয়েছে।” এআইএফএফের সহ-সভাপতি সুব্রত দত্ত বলেন, “মন্ত্রী গৌতমবাবু ফেডারেশন কাপ সংগঠনের নেতৃত্বে ছিলেন। তিনি যথেষ্ট দায়িত্বশীল। মাঠের আইনশৃঙ্খলায় বিঘ্ন চোখে পড়েনি।” |