শিকড়ের অমোঘ টানে সীমান্ত পেরিয়ে দেশে ছোটেন ওঁরা
ওঁর বয়স প্রায় ষাট ছুঁইছুঁই। তিনি ভারতীয় নাগরিক। ষাটের দশকের শেষার্ধে ওঁরা প্রায় সপরিবারেই সাবেক পূর্ব পাকিস্তান থেকে এ পারে চলে এসেছিলেন। পড়াশোনা, চাকরি বাকরি সবই এ পারে, এই ভারতে। কিন্তু পুজো এলেই ওঁদের ‘শিকড়’ টান দেয় ওঁদের অস্থিমজ্জায়। ওঁরা পাড়ি দেন ‘দেশের বাড়িতে’ (পড়ুন, এখন বিদেশের বাড়িতে)। পুজোর টানে।
এ বারও স্ত্রী-পুত্র-কন্যাকে নিয়ে তৈরি সুদীপ দাস। শুক্রবারই অধুনা বাংলাদেশের মৌলভিবাজারের পাঁচগাঁও-এর উদ্দেশে করিমগঞ্জের আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরোবেন সুদীপবাবু। তাঁর ছেলে মুম্বইয়ে চাকরি করেন। মেয়ে থাকেন লন্ডনে। কিন্তু বাড়ির পুজো বলে কথা! সাত প্রজন্ম ধরে দেবীবন্দনা হচ্ছে সেখানে। তাই তাঁরা চলে এসেছেন শিলচরে, মা-বাবার কাছে। এক সঙ্গেই যাবেন দেশের বাড়িতে। সেখানেই পুজো কাটাবেন। যেমনটা কাটান প্রতি বছর, হ্যাঁ ভারতে আসা ইস্তক প্রতিটি বছর।
সুদীপবাবুর কথায়, ‘‘শুধু আমি কিংবা আমার ছেলেমেয়েই নয়। জ্যাঠতুতো দাদা কমলাক্ষ দাস কবেই সত্তর পেরিয়েছেন। থাকেন গুজরাতের সুরাতে। তিনিও পুজোটা কাটান মৌলভিবাজারেই।’’ এ বার সব মিলিয়ে পাঁচগাঁওয়ের দাস পরিবারের ৪২ জন যাচ্ছেন ভারত থেকে। দিল্লির দিদি রওনা হবেন স্বামী-ছেলেমেয়েদের নিয়ে। পুজো ঘিরে অন্তত ১০০টি পরিবার দেশের বাড়িতে মিলিত হবেন।
বাংলাদেশের মৌলভিবাজারে সুদীপ দাসের বাড়ির পুজো। —নিজস্ব চিত্র
সুদীপবাবুর খুড়তুতো-জ্যাঠতুতো সব ভাই-ই এখন ভারতে। কেউ দেশভাগের সময় এসেছেন, কেউ ১৯৫৫ বা ৬০-এ। ভারতের যে অঞ্চলেই যিনি থাকুন না কেন, এ দেশের পুজো দেখার অভিজ্ঞতা নেই কারও। ৫৮ বছর বয়সী সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের শিলচর শাখার কর্মী সুদীপবাবুর মনে পড়ে, একবারই তিনি পুজোর দিনে ‘দেশের বাড়ি’ যেতে পারেননি। তখন চাকরি সূত্রে ছিলেন শিলঙে। ছুটি মেলেনি বলে এত কষ্ট পেয়েছেন যে ভারতে থাকলেও কোনও পুজো মণ্ডপের দিকে ফিরেও তাকাননি। সেই থেকে খুব জরুরি হলেও দুর্গোৎসবের আগে কোনও ছুটি নেন না তিনি। তাঁর ছেলেও তাই করেন। লক্ষ্য বা শর্ত একটাই, পুজোয় ছুটি চাই।
সুদীপবাবু জানান, সর্বত্র দেবীর রং অতসী ফুলের মতো হলেও তাঁদের দেবীর গাত্রবর্ণ লাল। তাই পুজোর মন্ত্রে পুরোহিতরা ‘অতসী পুষ্প বর্ণাভ্যাং’ না বলে বলেন, ‘তপ্ত কাঞ্চন বর্ণাভ্যাং’। কবে থেকে পুজোর শুরু? এর কোনও প্রামাণ্য তথ্য তাঁদের হাতে নেই। তবু অনুমান, অন্তত আড়াই শো বছরের পুরনো তো হবেই এই পুজো। দশ হাজার বেলপাতা ও এক মন ঘি লাগে যজ্ঞে। এ ছাড়া, প্রতিমা তৈরির জন্য নদী থেকে মাটি সংগ্রহ করা হয় অক্ষয় তৃতীয়ার দিন।
আরও এক পরম্পরা এখনও তাঁরা মেনে চলেন। মহাষষ্ঠীর সন্ধ্যায় বাড়ির সবাই জুতো ছাড়েন। প্রতিমা বিসর্জনের আগে কেউ আর জুতো পরেন না। পুরুষরা সবাই এই ক’দিন ধুতি পরেন। মহিলারা সাধারণ শাড়ি। তবে দেবী দুর্গা ও লক্ষ্মী-সরস্বতীকে তাঁরা বেনারসি শাড়ি পরান। সুদীপবাবু শিলচর থেকে বেনারসি কেনেন তাঁদের জন্য। দেবীর দু’টি, আর লক্ষ্মী-সরস্বতীর দু’টি।
কিন্তু সবাইকে নিয়ে বাংলাদেশে যান পুজো দিতে, পরিস্থিতি তো খুব অনুকূল নয়। ভয় হয় না? সুদীপবাবুর কথায়, “এ পর্যন্ত কোনও বছরই কোনও বিঘ্ন ঘটেনি। আর এখন বাংলাদেশ প্রশাসন তো অত্যন্ত সতর্ক। কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকে। তাছাড়া কয়েক পাড়া জুড়ে দর্শনার্থীরা আসেন। সব মানুষই সামিল হন এই পুজোয়। ভয়ের কী আছে?”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.