পুজোর প্রতি মরসুমে যেমন উঠে আসেন নতুন নতুন শিল্পী, তেমনই ফি বছর আমদানি ঘটে কিছু নতুন থিমের। শুধু থিমই নয়, মণ্ডপের উপকরণ থেকে আলো সবেতেই থাকে অভিনবত্বের ছোঁয়া। এ বছরও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।
দু’বছর আগে হাতিবাগান নবীনপল্লিতে ‘চদর-বদর’-এর থিম গড়ে চমকে দিয়েছিলেন কমলদীপ ধর। বিশ্বভারতী কলাভবনের এই শিক্ষক প্রতিবারই নতুন কিছু করার চেষ্টা করেন। এ বার সেখানেই তিনি তুলে এনেছেন ‘খাদি’। মণ্ডপে থাকছে চরকা-মাকু-ববিন। সঙ্গে গোটা মণ্ডপে নানা ধরনের ছবি দিয়ে খাদি বস্ত্রের উৎপাদনকে তুলে ধরা হয়েছে। দেখা যাবে মসলিন তৈরির কায়দাও। পুজোকমিটির কর্তা অমিতাভ রায় জানান, কুটির শিল্প দফতরের সহযোগিতায় বিষয়টি তুলে ধরা হচ্ছে। থাকছে সৌরবিদ্যুৎ চালিত আলোও।
অভিনব ভাবনার প্রতিফলন রয়েছে লেক টেম্পল রোডের শিবমন্দিরেও। শিল্পী সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় সেখানে মানুষের ক্লোনিংয়ের বিরোধিতায় থিম গড়ে তুলেছেন। মণ্ডপের চারদিকে জিনের গঠনের মতো নানা রঙের কারুকাজ। সুব্রত বলেন, “পুরাণে যেমন রক্তবীজ ছিল, তেমন মানব ক্লোনেও সেই ‘রক্তবীজ’ তৈরির আশঙ্কা আছে। তা প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করবে।”
তেলেঙ্গাবাগান ও খিদিরপুর ২৫ পল্লির মণ্ডপ এ বার সাজছে লোহায়। লোহা কেটে, ঝালাই করে বিভিন্ন রকম আকার দেওয়া হচ্ছে। তা দিয়ে তৈরি হচ্ছে রকমারি ‘ইনস্টলেশন’। আবার লোহার পাতে আঁচড় কেটে, এচিং করে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে শিল্প।
বিভিন্ন ব্রাশের কাজ দেখা যাবে লালাবাগান নবাঙ্কুরে। শিল্পী অনির্বাণ দাস প্রতিবারই থিমের বৈচিত্র্য রাখেন। গত বার লেকটাউনের এক পুজোয় মধুবনী শিল্প ‘সিকি’ এনেছিলেন।
পুজো মানেই আলোর রোশনাই, আর সেই বিদ্যুৎ জোগাতে লক্ষ লক্ষ টন কয়লা পোড়ে। তাই এ বার মণ্ডপে সৌরবিদ্যুত ব্যবহার করছে বাইপাস সংলগ্ন কালিকাপুরের মহাতীর্থম দুর্গোৎসব। সভাপতি শান্তিপদ গণচৌধুরী জানালেন, পুজোর মাঠেই সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জেনারেটর বসানো হয়েছে। প্রতি ঘণ্টায় ২৫ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। শান্তিপদবাবু নিজে এক জন সৌরবিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞ। তাঁর কথায়, “তাপবিদ্যুৎ দিয়ে পুজোর আলো জ্বালালে ভবিষ্যতের পৃথিবীকে দূষিত করা হয়। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে পুজো করতেই এই ভাবনা।”
দেখলে মনে হবে, বৃষ্টি পড়ছে। কিন্তু আদতে ক্রিস্টাল। এ ভাবেই চক্রবেড়িয়া সর্বজনীনের পুজো মণ্ডপ সাজিয়েছেন শিবশঙ্কর দাস। গত বছরেও এই মণ্ডপ সাজিয়ে নজর কেড়েছিলেন এই শিল্পী।
ভবানীপুরের রূপচাঁদ মুখার্জি লেনের পুজোয় এ বার মণ্ডপের উপকরণ কাচের ‘ব্লো-পাইপ’। তা দিয়ে গড়া হয়েছে নানা ধরনের মূর্তি। পুজোকর্তারা বলছেন, এই কাজের কারিগর এখন আর রাজ্যে মেলে না। এই শিল্প সংরক্ষণের কথা মাথায় রেখেই এ বারের থিম। কারিগর আনতে হয়েছে ভিন্ রাজ্য থেকে।
সবাই যখন থিম পুজোয় নজর কাড়ছে, বেহালা ক্লাব তখন চমক দিয়েছে পুজোয় ম্যাসকট এনে। বেহালার ওই পুজোর ম্যাসকটের নাম ‘টিগ্গু’। টিগ্গু আদতে সোঁদরবনের বাঘ। শারদ উৎসবে তার ঢাক বাজানোর ছবিকেই প্রতীক করেছেন পুজোকর্তারা।
এর আগে ভাঁড়ের মণ্ডপ, ডোকরার কাজ বা দিলওয়ারা মন্দির দেখেছেন মানুষ। এ বারও হাজারো থিমের মাঝে নতুন বিষয়গুলি দর্শকদের টানবে বলে আশা করছেন পুজোকর্তারা। |