উৎসবের আলো
থিমের বাজারে অনেক
নতুন মুখ উঠে এল এ বারও
কেউ বছর দুয়েক আগে আর্ট কলেজ থেকে পাশ করে বেরিয়েছেন, কেউ বা দীর্ঘ দিন ভিন্ রাজ্যে কাটিয়ে পুজোর ময়দানে নতুন নেমেছেন। আর তাঁদের হাত ধরেই এ বার পুজোর লড়াইয়ে সামিল হয়েছে কলকাতার কয়েকটি নামী পুজো। গড়ের মাঠে যেমন প্রতি মরসুমে নতুন-নতুন তারকার জন্ম হয়, তেমনই প্রতি পুজোতেও উঠে আসেন নতুন তারকা শিল্পীরা। এ ভাবেই উঠতি তারকা হয়ে শুরু করেছিলেন কয়েক জন তরুণ। আজ শহর তাঁদের চেনে স্নেহাশিস মান্না, অনির্বাণ দাস বা শিবশঙ্কর দাস নামে।
গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজ থেকে পাশ করে দীর্ঘ দিন আমদাবাদ ও দিল্লিতে কাটিয়ে ২০০৯ সালে রাজ্যে ফিরেছিলেন.শিল্পী সুজিত দাস। পুজোর ময়দানে নেমেছেন গত বছর। অভিষেক ‘ম্যাচেই’ বেহালা জনকল্যাণের হয়ে জাত চিনিয়েছিলেন এই শিল্পী। এ বছর তাঁর কাঁধে কালীঘাট মিলন সঙ্ঘের দায়িত্ব। ৬৯ বছরের ওই পুজোয় তিনি তুলে ধরছেন জলের সঙ্গে মনের সম্পর্ক। সুজিত বলছেন, “জলের যেমন কোনও নির্দিষ্ট আকার থাকে না, তেমনই মনেরও নির্দিষ্ট আকার নেই। এই সম্পর্কটাই তুলে ধরার চেষ্টা করছি।” মণ্ডপ সাজাতে ব্যবহার করা হচ্ছে নানা ধরনের কাচের শিশি-বোতল। এ ছাড়াও, কোষাকুষি, নৌকা-সহ বিভিন্ন ফুলের মডেল থাকছে। সুজিতের কাজ নিয়ে খুশি কালীঘাট মিলন সঙ্ঘের কর্তারাও। ক্লাব সম্পাদক কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “পুজো ময়দানে সুজিত আগামী দিনের তারকা।”
পুজোর ময়দানে নামতে অ্যানিমেশন সংস্থার চাকরি ছেড়ে এসেছেন আর এক সম্ভাবনাময় শিল্পী রিন্টু দাস। বছর তেরো আগে আর্ট কলেজ থেকে বেরোনোর পরে প্রজাতন্ত্র দিবসে নানা রাজ্যের ট্যাবলো সাজাতেন তিনি। পরে এক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় চাকরি নেন। এ বছর রিন্টুর উপরে দায়িত্ব পড়েছে দক্ষিণের অন্যতম নামী পুজো সেলিমপুর এবং উত্তরের নবীন সঙ্ঘের পুজোর। সেলিমপুরে মণ্ডপ সংলগ্ন একটি ৪০ ফুটের গাছকে কেন্দ্র করে থিম সাজিয়েছেন রিন্টু। থাকছে বিরাট আকারের ঝুলন্ত ‘মৌচাক’। তার তলায় এক বিরাট পদ্মফুলে আসীন দেবী। শিল্পী বলছেন, “দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের দেড়শো বছরে তাঁর গানের কলি ‘গুঞ্জরিয়া আসে অলি, পুঞ্জে পুঞ্জে ধেয়ে’-কে বেছে নিয়েছি।” নবীন সঙ্ঘে আবার তিনি তুলে ধরেছেন স্বর্গের পারিজাত ফুল। গত বছর ভবানীপুরে রূপচাঁদ মুখার্জি লেনে ‘শক্তিরূপেন’ থিম গড়ে পাদপ্রদীপের আলোয় এসেছিলেন এই শিল্পী। এ বারের কাজ তাঁর খ্যাতি আরও বাড়াবে বলেই আশা করছেন পুজো কমিটির কর্তারা।
আর্ট কলেজের পড়াশোনা শেষ করেই পুজোর ময়দানে নেমে পড়েছিলেন স্বরূপ নন্দী। উত্তর কলকাতার প্রথম বারোয়ারি পুজো শ্যামপুকুর আদি সর্বজনীনে এ বার থিমের মণ্ডপ গড়ছেন তিনি। পেখম মেলা ময়ূরের আদলে মণ্ডপ চোখ টানার মতোই। তবে চিরাচরিত প্রতিমা বদলায়নি। এখানেই মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন স্বরূপ। তাঁর কথায়, “প্রতিমার বদল করা যাবে না। তাই চিরন্তনী প্রতিমা রেখে থিমের ভাবনা করেছি।” আর্ট কলেজে পড়ার সময় থেকেই শিক্ষক স্বপন দেনরাঁর সহকারী হয়ে বিভিন্ন পুজোয় হাত পাকিয়েছিলেন স্বরূপ। তার পরে ২০১০ সালে ডানলপ পূর্বাচল ও হাতিবাগান সর্বজনীনের পুজোয় ছিলেন তিনি। হাতিবাগানের পুজোয় অবশ্য তাঁর ভূমিকা ছিল সহকারীর। ২০১১ সালে কোনও জায়গায় কাজ করেননি তিনি। সে দিক থেকে দেখলে, এ বারই স্বাধীন ভাবে কাজ করছেন তিনি।
মধ্য কলকাতার দর্পনারায়ণ ঠাকুর স্ট্রিটও এ বার নতুন শিল্পী সাত্যকি সুরের উপরে ভরসা করেছে। সাত্যকি সেখানে তুলে এনেছেন মধুবনীর গোধনা চিত্রকলাকে। মণ্ডপ জুড়ে নানা চিহ্নে শিবকে ফুটিয়ে তুলছেন তিনি। এই কাজের জন্য মধুবনী থেকে কারিগর নিয়ে এসেছেন। কৃষ্ণবাগান নবজীবন সঙ্ঘে আবার তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন কন্যাভ্রূণ হত্যার মতো বিষয়কে।
কাজেই এ বছর শহরের থিমপুজোয় অভিষেক হচ্ছে আরও একগুচ্ছ নতুন শিল্পীর। উৎসব কাপের লড়াইয়ের শুরুর ঘণ্টা বাজার আগে এক সময়ে অনির্বাণ-স্নেহাশিসদের চোখেমুখে যে উৎকণ্ঠা ধরা পড়ত, তা এ বার দেখা যাচ্ছে সুজিত-স্বরূপ-সাত্যকিদের চোখে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.