থিমযুদ্ধের অস্ত্র এখন সুরও
‘হাই, আমি সুরকার অমুক বলছি। আমার পুজো তমুক সঙ্ঘের থিম-সং কলার টিউন হিসেবে বেছে নিন আপনার মোবাইলে। সেই সঙ্গে লটারিতে জিতে নিন আকর্ষণীয় পুরস্কার।’
পুজোর মরসুমে আপনার মোবাইলে হঠাৎ বেজে উঠতে পারে এমন ভয়েস-ওভার। পেল্লায় বিজ্ঞাপনী হোর্ডিং, শহরের এ মাথা থেকে ও মাথা মোবাইল ভ্যানের পরে শহরের হেভিওয়েট পুজোর প্রচারের এ এক নতুন কৌশল। ঠাকুর দেখতে যাওয়ার ঢের আগেই মোবাইলে মোবাইলে ছড়িয়ে পড়ল থিমের গান। নামী সুরকার, মুম্বইয়ের ভারত-বিখ্যাত প্লে-ব্যাক শিল্পীরাও যে গান রচনার শরিক।
এই মোবাইল ফোন-প্রচারে পথ দেখিয়েছে নিউ আলিপুরের সুরুচি সঙ্ঘ। এ বার তাদের সঙ্গে টক্কর দিচ্ছে নাকতলার উদয়ন সঙ্ঘ। শুধু প্রচার নয়, এ হল পুজো কমিটির রোজগারেরও একটা পথ। “গানটা যত বার মোবাইলে কলার টিউন হিসেবে কেউ বেছে নেবেন, তত বারই পুজো কমিটির পকেটেও কিছু আসবে,” বলছেন সুরুচির কর্তা অরূপ বিশ্বাস।
জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সুরে সুরুচির গান গেয়েছেন শ্রেয়া ঘোষাল ও সোনু নিগম। পুজোর থিমের সঙ্গে মিলিয়ে সমুদ্রের দূষণ নিয়ে গান। সাগরপারের রাজ্য গোয়ার গির্জার ঘণ্টা গানটিতে আলাদা মাত্রা জুড়ছে। মোবাইলের গ্রাহকদের জন্য গানটা পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। নাকতলার পুজোর থিম— শুঁয়োপোকার প্রজাপতিতে রূপান্তর। ভূমি-র সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায় তাই গান বেঁধেছেন, ‘প্রজাপতি তুমি ডানা মেলে, আছ আমার আশেপাশে ভালবাসার শপথ নিয়ে।’
পুজো কমিটিগুলো লোভ দেখাচ্ছে, এ গান মোবাইলে ডাউনলোড-এর সময়ে লটারিতে জিতলে ভিড় এড়িয়ে মণ্ডপে ঢোকার ভিআইপি কার্ডও মিলবে। মোবাইল সংস্থার কাছে কলার টিউনের জোগানদার সংস্থার কর্তা অমৃতেন্দু চৌধুরী বলছেন, “শুধু পুজো দেখার আগে নয়, পুজো দেখার পরেও লোকের এই কলার টিউনের ঝোঁকটা থাকে। গান ভাল হলে দেখেছি, পুজোর ছ’মাস বাদেও লোকে ওই গানটাই খুঁজছে।”
বারোয়ারি পুজোর সঙ্গীত-সাধনার সবটা অবশ্য বিপণনের জন্য নয়। নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘের পাড়ারই ছেলে শিল্পী রাশিদ খান। পুজোকে ভালবেসেই তিনি ছেলে আরমান ও মেয়ে সাওনাকে নিয়ে ৭ মিনিটের বন্দিশ তৈরি করেছেন। রাশিদের পরিবশনায় সেই দুর্গা ও গণেশবন্দনা সারাক্ষণ বাজবে ওই মণ্ডপে।
সনাতন দিন্দাও কয়েক বছর ধরেই মণ্ডপে মানানসই আবহসঙ্গীতে জোর দিচ্ছেন। তাঁর উৎসাহেই এ বার পুজোর থিম মিউজিক নিয়ে মেতেছেন তন্ময় বসু। বড়িশার সৃষ্টিতে প্রকাণ্ড শিবলিঙ্গের মধ্যে উঠে আসা দেবীমূর্তির মধ্যে ভয়-মেশা রহস্যের ছায়া। পাখোয়াজের বোলের সঙ্গে জাপানি যুদ্ধবাদ্য তাইকো ড্রাম, ইন্দোনেশিয়ার গং বা অস্ট্রেলিয় আদিবাসীদের লম্বা ফাঁপা বাঁশি ডিজিরিডুর অনুরণনে তন্ময় জমিয়ে দিয়েছেন। আর যোধপুর পার্কের ৯৫ পল্লিতে অসুরের সঙ্গে সংঘাত শেষে আনন্দের আবহ। সানাই, মন্দ্রসপ্তকের বাঁশি, নেপালি মাদলের সমাহার। গল্ফগ্রিন শারদোৎসবের আদিবাসী গ্রামের দুর্গা ও চক্রবেড়িয়ার পুজোর থিমেও তন্ময় সঙ্গীত সৃষ্টি করেছেন।
থিমের অঙ্গ হিসেবে এ ভাবেই কলকাতার পুজোয় ক্রমশ জায়গা করে নিচ্ছে গান বা আবহ-সঙ্গীত। বিবেকানন্দের সার্ধশতবর্ষে ‘মিউজিক কোলাজ’-এর সিডি প্রকাশ করছে ভবানীপুর অগ্রদূত উদয় সঙ্ঘ। তাতে গেয়েছেন শ্রীকান্ত আচার্য। ১০০ বছরের সিকদার বাগানের থিম-সং বাঁধতে শিল্পী লোপামুদ্রা মিত্র, গীতিকার তরুণ সিংহরায়রা বেশ কয়েক বার মণ্ডপে গিয়েছেন। ভবতোষ সুতারের পুজোয় হাল্কা শোলার কাজের মধ্যে জীবনে ভারসাম্যের তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে। গানেও সেই ভাবনারই ছোঁয়া। গত বার বড়িশার সৃষ্টির পুজোতেও থিম-সং গেয়েছিলেন লোপা। তিনি বলেন, “এ তো দেখছি, আমাদের জন্য নতুন একটা সৃষ্টিশীলতার দরজা খুলে গেল।” হাতিবাগান নবীনপল্লিতেও বেদের স্তোত্র গেয়েছেন লোপা। খিদিরপুরের ২৫ পল্লিতে প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছেলে অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম আদি তব শক্তি-গানটিকে যন্ত্রানুষঙ্গে রূপ দিয়েছেন। সন্তোষপুর লেকপল্লিতে পূর্ণেন্দু দে-র থিমের সঙ্গীতে শান্তির আবাহন অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
কলার টিউনে নিজেদের পুজোকে এ বার তুলে না-ধরলেও দক্ষিণ কলকাতার ত্রিধারা সম্মিলনীর পুজোকর্তারা কিন্তু এর মধ্যেই মোবাইলের রিংটোন বদলে ফেলেছেন। থিমের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সুরে বাঁধা একটা ‘ট্যাগলাইন’ও পেয়ে গিয়েছেন তাঁরা। শিল্পী গৌরাঙ্গ কুইল্যা নিজে ত্রিধারার জন্য এই ‘লিরিক’ জুগিয়েছেন। ধ্বংসের আতঙ্ক ভুলে পৃথিবী রক্ষা করার ডাকের সঙ্গে নিজেদের পুজোর নামটাও বুদ্ধি করে গুঁজে দেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তা সন্দীপ চক্রবর্তীর কথায়, “ব্লু টুথ দিয়ে চেনাজানাদের মধ্যে এই ছোট্ট গান ছড়িয়ে পড়লেও পুজোর ভালই প্রচার হবে।” আবার চেতলা অগ্রণী সঙ্ঘের মতো অনেকেই ঘটা করে নিজেদের থিম মিউজিক প্রকাশের অনুষ্ঠানও করছে।
ঢাকে কাঠি পড়ার আগে থিমযুদ্ধের মেজাজটা বেঁধে দিচ্ছে গানের সুরই।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.