বিনোদন বেদব্রতের দুই নায়ক
সুবোধ নেই, চিটাগং দেখার অপেক্ষায় শতায়ু বিনোদ
তিহাস থেকে ছবি করতে গিয়ে ইতিহাসেরই মুখোমুখি।
চট্টগ্রাম বিদ্রোহ নিয়ে ছবি করার কথা যখন ভেবেছিলেন বেদব্রত পাইন, তখন জানতেন না বিদ্রোহীদের কারও কারও সঙ্গে তাঁর দেখা হয়ে যাবে। বিদ্রোহীর ভূমিকায় এক জন সত্যিকার বিদ্রোহীকেই সশরীরে ছবিতে দেখাতে পারবেন তিনি!
সুবোধ রায় আর বিনোদবিহারী চৌধুরী। সূর্য সেনের দুই শিষ্য। ১৯৩০ সালের চট্টগ্রাম বিদ্রোহের সময় এক জনের বয়স ছিল ১৪, এক জন ১৬। ১৪ বছরের সুবোধ ওরফে ঝুংকু-ই বেদব্রতর ‘চিটাগং’ ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র। গল্পটা তার চোখ দিয়েই দেখা। বেদব্রতর ভিডিও ক্যামেরাতেই ধরা ছিল সুবোধ রায়ের অন্তিম সাক্ষাৎকার। ওই সাক্ষাৎকারের একটা ক্লিপিং ‘চিটাগং’ ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে। সেখানে সুবোধ রায়, ‘সুবোধ রায়’ হিসেবেই হাজির!
আর বিনোদবিহারী চৌধুরী? চট্টগ্রামেই থাকেন শতায়ু এই বৃদ্ধ। চট্টগ্রামের যে ইউরোপিয়ান ক্লাবে আক্রমণ চালিয়েছিলেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, সেই ক্লাব নিজে বেদব্রতকে ঘুরিয়ে দেখিয়েছেন বিনোদ। “যে সময় বিনোদবাবুর সঙ্গে আমার দেখা হল, তখন চিত্রনাট্যে নতুন করে বড় চরিত্র যোগ করার উপায় ছিল না।” ছবিতে সিআইডি অফিসার আসানুল্লা হত্যার দৃশ্যে বিনোদকে দেখা যায়। “গুলিটা আসলে চালিয়েছিলেন হরিপদ ভট্টাচার্য। এখানে আমি একটু স্বাধীনতা নিয়েছি। দেখিয়েছি, বিনোদ গুলি চালাচ্ছে।”
বিনোদবিহারী চৌধুরী। তাঁর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অনুব্রত। সুবোধ রায়।
তাঁর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন দিলজাদ। (নাম বাঁ দিক থেকে পর পর)

কী করে সুবোধ আর বিনোদের সঙ্গে যোগাযোগ হল? ‘চিটাগং’ ছবিটা করার কথা ভাবছিলেন বেদব্রত সেই ২০০৫-৬ সাল থেকেই। প্রথমে ঠিক ছিল, গল্পটা হবে নারী বিপ্লবীদের নিয়ে। “ছোটবেলা থেকেই প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের প্রতি খুব আকর্ষণ ছিল। পরবর্তী কালে দেখেছি, চট্টগ্রাম বিদ্রোহের মতো এত বড় একটা ঘটনার কথা বাংলার বাইরে খুব কম লোকেই জানে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের স্নাতক, তাকেও দেখেছি প্রীতিলতার নাম জানে না।”
চট্টগ্রাম বিদ্রোহের ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা-গবেষণা তখনই শুরু করে দিয়েছিলেন নাসা-র বিজ্ঞানী। সেই সময় পরিবারিক সূত্র থেকেই এক জন সুবোধ রায়ের কথা বলেন বেদব্রতকে। ২০০৬ সালের অগস্ট মাসে কলকাতায় সুবোধবাবুর সঙ্গে দেখা হল তাঁর। ৯২ বছরের বৃদ্ধ তখন পিজি-তে ভর্তি। রোগশয্যায় শুয়েই নিজের অভিজ্ঞতার কথা বললেন।
চট্টগ্রামের নোয়াপাড়ার কিশোর সুবোধ বরাবরই সূর্য সেনের ভক্ত ছিল। নিজে ভাল ছাত্র। ব্যারিস্টার বাবা স্বপ্ন দেখতেন, ছেলেকে অক্সফোর্ডে পড়াবেন। কিন্তু সুবোধ জড়িয়ে পড়লেন আন্দোলনে। জালালাবাদ পাহাড়ের যুদ্ধে সবার আগে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন এই সুবোধই। অকথ্য অত্যাচার করেছিল পুলিশ। ওঁকে ফুটবল বানিয়ে খেলা হয়েছিল। কিন্তু সঙ্গীদের হদিস সুবোধের মুখ থেকে বার করা যায়নি। আন্দামানের জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হল ওঁকে। ছাড়া পেলেন ১৯৪২ সালে। ছাড়া পেয়েই আবার ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যোগ দিলেন। তার পরে সুবোধ ক্রমে বামপন্থার প্রতি আকৃষ্ট হতে থাকলেন। পড়াশোনা শেষ করেননি, ফলে চাকরিও করা হয়নি। পার্টির কাজেই সমস্ত মনোযোগ নিবদ্ধ হল অকৃতদার সুবোধের। আলিমুদ্দিনে পার্টি অফিসেই একটা ঘরে থাকতেন। স্বাধীনতা সংগ্রামীর ভাতা নিতেন না, অসুস্থ হওয়ার পরে চিকিৎসার জন্য সরকারি সাহায্যও নেননি। হাসপাতালের বেডে শুয়েও বলেছিলেন, “চট্টগ্রাম বিদ্রোহ আমার জীবনের সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়।” বেদব্রতর সঙ্গে কথা বলার দু’সপ্তাহ পরেই মারা যান সুবোধ।
বিনোদবিহারীর খোঁজ এসেছিল সূর্য সেন ভবনের সূত্রে। ২০০৮-এর জানুয়ারিতে বিনোদবিহারী কলকাতায় এসেছিলেন। তখনই ওঁর সঙ্গে দেখা করেন বেদব্রত। তার পর চলে যান একেবারে চট্টগ্রামেই। ওখানে যে স্কুলে পড়াতেন প্রীতিলতা, সেই স্কুলবাড়ি ভেঙে একটা শপিং মল বানানোর তোড়জোড় চলছিল। প্রতিবাদে অনশনে বসেছিলেন ৯৯ বছরের বিনোদবিহারী। বরাবরই একরোখা স্বভাবের মানুষ। নিজে গিয়ে ‘মাস্টারদা’কে বলেছিলেন, “আপনি যদি আপনার দলে না নেন, অন্য কোনও দলে যোগ দেব।” জালালাবাদের যুদ্ধে আহত হন বিনোদ। কোনও মতে পালিয়ে প্রাণ বাঁচান। আন্দোলনের জীবন কিন্তু সেখানেই শেষ নয়। মুক্তিযুদ্ধের পর্ব তখনও বাকি। স্বাধীন বাংলাদেশের পার্লামেন্ট সদস্য হয়েছিলেন বিনোদবিহারী।
এখন চট্টগ্রামেই একটা ভাঙাচোরা বাড়িতে থাকেন। ‘চিটাগং’ মুক্তি পাওয়ার খবর শুনে উচ্ছ্বসিত। ছবিটা দেখার জন্যই খুব তাড়াতাড়ি কলকাতা আসতে চান, জানিয়েছেন ১০২ বছরের বিদ্রোহী বিনোদ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.