বিনোদন ফিল্মি চটক নয়, দিল্লিতে
খানদানি দাওয়াত

লিউডি বিয়েতে দিল্লি ঘরানার রিসেপশন!
মানে, বলিউডের দুই তারকার বিয়ের আসর। কিন্তু ফিল্মি লোকজনের ভিড় কই? বরং রাজধানীর বড় বড় অনুষ্ঠানে যাঁদের দেখা যায়, সেই মুখগুলোই বেশি! যাকে বলে দিল্লি ক্রাউড!
রাজনীতির জগতের কথাই ধরুন! সব শিবিরের লোকজনই এসেছেন। কংগ্রেস-বিজেপি-বাম। সনিয়া গাঁধী অবশ্য আসেননি। রাহুল গাঁধী এলেন। মনমোহন সিংহ আসেননি, এলেন মনমোহন-পত্নী গুরশরণ কউর। সঙ্গে মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়া। শীলা দীক্ষিত, প্রফুল্ল পটেল, শশী তারুর। বিজেপির বসুন্ধরা রাজে, অরুণ জেটলি, রবিশঙ্কর প্রসাদ। সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি।
ক্রীড়াজগৎ থেকে কপিল দেব, আব্বাস আলি বেগ, বিশেন সিংহ বেদি। শিল্পপতি সুব্রত রায়। সরোদিয়া আমজাদ আলি খান সস্ত্রীক। চিত্রশিল্পী পরেশ মাইতি, জয়শ্রী বর্মন।
কিন্তু বলিউড কোথায়? দু’দিন আগে মুম্বইয়ের তাজ হোটেলের পার্টিতে ভেঙে পড়েছিল বি-টাউন। আমির খান অবশ্য সেই পার্টিতেও ছিলেন না। এ দিন সকালে রাজধানীতে এসেছিলেন একটি অনুষ্ঠানে। কিন্তু বিকেলেই ফিরে গেলেন। দাওয়াতে থাকেননি। এসেছিলেন পরিচালক মধুর ভান্ডারকর, ইমতিয়াজ আলি, অভিনেত্রী নন্দিতা দাশ। বাকি যাঁরা, তাঁরা তো বর-কনের ঘরের লোক।
নবাবের নতুন ইনিংস। দিল্লির উড়ান ধরতে বেগমকে নিয়ে
মুম্বই বিমানবন্দরে। বৃহস্পতিবার। ছবি: পিটিআই
সোনালি শাড়িতে শর্মিলা, কালো শেরওয়ানিতে সইফ আর লাল লেহঙ্গা-গোলাপি ব্রোকেডের টপ পরিহিতা করিনা। সোহার পরনে সোনালি ঘারারা। সন্ধে সাতটা কুড়ি নাগাদ শর্মিলা এক বার বাইরে এলেন। ৩১ নম্বর আওরঙ্গজেব রোডের সামনে ভিড় করা জনতাকে বললেন, “জাঁকজমকটা বড় কথা নয়। নবদম্পতিকে আশীর্বাদ করেছি। আমি খুব খুশি।”
খুশির হাওয়াটা সকাল থেকেই রাজধানীর আওরঙ্গজেব রোডে বইছিল। মগরা ফুল আর রজনীগন্ধার মিষ্টি গন্ধ মাখা হাওয়া। বিকেলেই গিয়ে দেখে এসেছিলাম, চার দিকে থিকথিক করছে নিরাপত্তারক্ষী। শয়ে শয়ে সাংবাদিক। ওবি ভ্যান।
কিন্তু রক্ষীর ঘেরাটোপ পেরিয়ে যেন বাতাসেরও প্রবেশ নিষেধ।
রক্ষীদের চোখে ধুলো দিয়ে ঢোকার উপায় নেই। জোর করে ঢুকতে চাইলে ওঁরা খুব নরম গলাতেই চলে যেতে বলবেন। সে কথার নড়চড় হবে না। কিন্তু কখন যে কোথা থেকে সাহস আসে! এ বার যেমন এল ছোট্ট ছেলেটার রূপ ধরে!
ভিড়ের মধ্যেই হঠাৎই উদয় হল সে। আড় চোখে চুপিসাড়ে বলল, “ও দিক দিয়ে যান, ঢুকে যেতে পারবেন। কেউ আটকাবে না। দেখবেন আমরা কেমন সাজিয়েছি ভিতরটা।” “তুমি যাবে সঙ্গে?” “না, ম্যাডাম। কুছ নেহি হোগা। আচ্ছা চলুন, আমি আপনাকে ভিতর অবধি নিয়ে যাচ্ছি!” গুটিগুটি পায়ে তার দেখানো পথে এগোতেই একেবারে রক্ষীর মুখোমুখি। কোথায় যাচ্ছেন? একটু কথা কাটাকাটি। কাকুতিমিনতি। বরফ গলে। “ছবি নেবেন না কিন্তু!”
রাজি। আর তার পরেই পা বাড়িয়ে ঢুকে পড়া এক অন্য পৃথিবীতে! সেখানে রাজকীয় সিলমোহর তো আছেই। তার সঙ্গেই এমন একটা আভিজাত্য, যেটা একই সঙ্গে খুব সমসাময়িকও। এক সাহেব তো আস্ত একটা বইই লিখছেন সইফ-করিনার বিয়ে নিয়ে।
চারধারে গাছগাছালিতে ছাওয়া এক বিশাল প্রাঙ্গণ। অন্তত পাঁচ থেকে ছয় রকমের আলো! মূলত সোনালি আর সাদা রঙের। গাছের ডাল থেকে ঝুলছে। গাছের সবুজের সঙ্গে আলোর রোশনাইয়ে মাখামাখি গোটা চত্বর। ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা নিউ ভ্যারাইটি ডেকরেটরের এক কর্তার সঙ্গে আলাপ হল। বিনয়ী স্বরে বললেন, “এ তো কিছুই না...!” ওঁর সংস্থা কোন কোন বিয়েতে কী ভাবে সাজিয়েছে, তার একটা ফিরিস্তি তখনই শুনিয়ে দিলেন আমাকে।
এই বাড়িতে এক সময় থাকতেন প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি ভৈরোঁ সিংহ শেখাওয়াত। এখন ফাঁকা। দিল্লিতে এ রকম কিছু সরকারি ভবন ইচ্ছে করেই ফাঁকা রেখে দেওয়া হয়, বললেন এক সূত্র। আজকের দাওয়াত শেষে কাল পটৌডি প্যালেসে চলে যাবেন সইফরা। একটা ছোট্ট পারিবারিক অনুষ্ঠানও হবে।
তার পর? মধুচন্দ্রিমা কবে? শোনা যাচ্ছে, সইফ-করিনা আগে শেষ করবেন জমে থাকা শু্যটিং। তার পরই নাকি, শীত পড়লে সোজা সুইৎজারল্যান্ড! ফোন করা গেল সুইস আল্পস-এর পাদদেশের বিখ্যাত স্টাড প্যালেস হোটেলে। সইফ-করিনার নামে বুকিং আছে কি? রিসেপশনিস্ট জানালেন, “ওঁরা আগে আমাদের এখানে এসেছেন। হোটেল খুলবে ১৬ ডিসেম্বরের পর। কিন্তু অতিথিদের নামের তালিকা জানাতে পারব না।”
সইফ-করিনা স্টাডের অতিথি হচ্ছেন কি না, ক’দিন পরেই বোঝা যাবে। আপাতত সইফ-করিনার অতিথিরা কোথায় বসছেন? কয়েক পা এগোতেই একটা আঁকাবাঁকা লন। তারই বাঁ দিকে অতিথিদের বসার জায়গা। অনেকটা বড় ড্রইং রুমের মতো। সার দেওয়া চমৎকার সব সোফা। প্রাচুর্যের ছাপ সর্বত্রই ছড়িয়ে আছে, কিন্তু কোথাও এতটুকু রুচির গরমিল নজরে পড়ে না। এখানেই কি তবে নবদম্পতি অতিথিদের অভ্যর্থনা জানাবেন? এক মহিলা ভয়েস টেস্টে ব্যস্ত। কোনও উত্তর দিলেন না। ভেসে আসছে রাজস্থানি লোকগান... ‘কেসরিয়া বালম’। লোকসঙ্গীতের কোনও আসর বসবে কি? না। অল্প দূরেই তো স্যাক্সোফোনের মতো একটা যন্ত্র বার করছেন এক বাদক। খুব একটা রিপোর্টার-সুলভ অনুসন্ধিৎসু হওয়ার মতো সময় নেই। যে কোনও মুহূর্তে শুনব, এ বার চলে যান! তার চেয়ে একটু আলাপ জমানোর চেষ্টা করা ভাল। গায়িকা বললেন, “আমি সোনাল কালরা। জ্যাজ শিল্পী। তবে আজ কেসরিয়া বালমও গাইব।” ফিউশন!
দূরে কার্পেটে মোড়া আর একটি চত্বর। সেখানে টকটকে লাল রঙের খানদানি জৌলুস। একটার নীচে আর একটা মোমবাতির সারি ঝুলছে। গাছ থেকে উঁকি মারছে গুচ্ছ গুচ্ছ গোলাপের তোড়া। খাবার জায়গাটা বোধহয় আরও সুন্দর। প্রত্যেকটা টেবিলের মাঝখানে মোগলি ছাঁদের আলো। শ্যাম্পেন গ্লাসগুলো আলোয় ঠিকরে উঠছে। ওয়েটাররা প্লেট সাফ-সুতরো করছেন, ন্যাপকিন গুছিয়ে রাখছেন। রাতের মেনুতে চার-পাঁচ রকমের বিরিয়ানি, তন্দুর কাবাব থেকে শুরু করে মুগ ডালের হালুয়া, কালা জামুন, শাহি টুকরা, কেসরিয়া জিলাবি...।
বেরনোর সময় সেই একই রক্ষী মাথা নেড়ে বললেন, “ছবি তোলেননি তো?” হাসলাম। মনে পড়ে গেল, শর্মিলার বলা সেই ‘নায়ক’ ছবির সংলাপ। ‘মনে রেখে দেব।’



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.